ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়েমেনফেরত ৫৩৭ কর্মীর দায় কার-দুই মন্ত্রণালয়ে দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

ইয়েমেনফেরত ৫৩৭ কর্মীর দায় কার-দুই মন্ত্রণালয়ে দ্বন্দ্ব

ফিরোজ মান্না ॥ ইয়েমেন থেকে কর্মী ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিছু জানে না। মন্ত্রী সাফ জানালেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইয়েমেন থেকে কর্মী ফিরিয়ে এনেছে। এসব কর্মীর দায়-দায়িত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষেই ৫৩৭ জনকে ইয়েমেন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ওই বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও ছিলেন। ইয়েমেন থেকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অনেক আগেই ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ বাংলাদেশীদের আনা হয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এমন প্রশ্ন এখন তুলছে কেন। এ কথা আগে কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানাল না। ইয়েমেন থেকে কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ভাল চোখে নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চরম মতদ্বৈততা তৈরি হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ইয়েমেন থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী দেশে ফেরত আনার কোন প্রয়োজন ছিল না। সেখানে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে কর্মীদের তড়িঘড়ি করে দেশে আনতে হবে। আমরা যখন লিবিয়া থেকে কর্মীদের দেশে ফেরত আনি তখন পরিস্থিতি চরমে ছিল। তাও লিবিয়ার ভেতর থেকে কোন কর্মী আনা হয়নি। যারা লিবিয়া ছেড়ে মিসর সীমান্তে স্থাপিত ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল কেবল তাদেরই দেশে আনা হয়েছিল। ইয়েমেনের সানায় হুতি বিদ্রোহীদের কোন আক্রমণ ছিল না। সেখানে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভালভাবেই থেকে যেতে পারত। তাছাড়া বিদ্রোহীরা বাংলাদেশীদের জন্য কোন হুমকির কারণ ছিল না। কয়েক বাংলাদেশীকে হুতি বিদ্রোহীরা আটক করার পর ছেড়ে দিয়েছে। ইয়েমেনে সর্বশেষ পরিস্থিতি দেখা হয়নি। যদি কর্মীদের ফিরিয়ে আনতেই হয় তাহলে প্রথমে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সাহায্য চাওয়া উচিত ছিল। রেডক্রস যদি শেষ রক্ষা না করতে পারত তাহলে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনলে কোন সমস্যা ছিল না। এখন দেশে এসে এসব কর্মী বেকার হয়ে থাকবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনেক কষ্ট করে বিদেশে কর্মী নিয়োগ করে। লিবিয়া থেকে ৩৫ হাজার কর্মীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তাদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হযেছে। এরপর কয়েক বছর ধরে তাদের বিভিন্ন দেশে নিয়োগ দেয়া হয়। আবার এখন ৫৩৭ কর্মীকে কোন্ দেশে কর্মসংস্থান করব? এমন প্রশ্ন রেখে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ইয়েমেন থেকে কর্মী দেশে ফেরত আনার বিষয়ে তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন রকম বৈঠক করেনি। তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। যদি তিনি জানতেন তাহলে কর্মীদের এভাবে ফেরত আনতে দিতেন না। ফেরত আসা কর্মীরা এখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা এখন কী করবেন। দেশে তাদের বেকারত্ব নিয়ে চলতে হবে। এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জনকণ্ঠকে জানান, ইয়েমেন থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর একটি সামারি তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী ওই সামারিতে স্বাক্ষর করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই ইয়েমেন থেকে কর্মীদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তের কোন বিষয় ছিল না। ইয়েমেন থেকে অনেক আগেই ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশও ইয়েমেন থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে। ভারতের জাহাজের শেষ ট্রিপে তাদের আনা হয় জিবুতিতে। সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে কর্মীদের দেশে আনা হয়েছে। কর্মীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাহলে কেন তারা জানবেন না। একজন নাগরিকও যদি বিপদগ্রস্ত হন তাকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা সরকারের দায়িত্ব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই দায়িত্ব পালন করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইয়েমেনে কি ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা বলতে পারবে যারা ভুক্তভোগী তারাই। যারা দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের কাছে যুদ্ধের ভয়াবহতার বর্ণনা শুনে বোঝা গেছে তারা কত বিপদে ছিলেন। প্রতিনিয়ত জিবুতিতে স্থাপিত ক্যাম্পে হট নম্বরে বাংলাদেশীদের হাজার হাজার কল এসেছে। ভারত সরকারের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে দেশে আনা হয়। ইয়েমেনে গত প্রায় ছয় মাস ধরে অস্থিরতা চলছে। শিয়া মতাবলম্বী হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদিকে উৎখাত করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। এরই মধ্যে হুতিদের দমনে সৌদি আরব বিমান হামলা চালানো শুরু করলে তা নতুন মাত্রা পায়। গৃহযুদ্ধ ও বিমান হামলায় পর্যুদস্ত ইয়েমেন থেকে নাগরিকদের উদ্ধারে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যাপক তৎপরতা চালায় ভারত। ইয়েমেনে আটকেপড়া ভারতীয়দের পাশাপাশি বাংলাদেশী ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ইয়েমেনের যুুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে ভারত নিজ দেশের নাগরিকদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে। ইয়েমেন ও জিবুতিতে বাংলাদেশের কোন মিশন নেই। ইয়েমেন থেকে উদ্ধার অভিযান সমন্বয়ের জন্য প্রতিবেশী আফ্রিকার ছোট দেশ জিবুতিতে একটি কন্ট্রোল সেল চালু করে ঢাকা। ইয়েমেনে বৈধ সরকারকে ফিরিয়ে আনতে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট।
×