ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ অনুসন্ধানে হবিগঞ্জে তদন্ত দল

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ অনুসন্ধানে হবিগঞ্জে তদন্ত দল

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ২৫ এপ্রিল ॥ দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চড়ে বসা লিয়াকত আলী নামে হবিগঞ্জের এক আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপকর্ম অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শুক্র ও শনিবার দিনভর লাখাইয়ের কৃষ্ণপুর এবং পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগরের ফান্ডাউকসহ আরও কয়েকটি স্থানে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায় ঢাকা থেকে আসা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পাকিবাহিনীর সহায়তায় স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুড়াকড়ি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ লিয়াকত আলী ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কৃষ্ণপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১২৭ নিরীহ লোককে হত্যা, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ ও লুটপাটসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ পায় তদন্ত সংস্থা। জনৈক হরিদাস রায় বাদী হয়ে দায়ের করা এই অভিযোগের প্রথম দফা তদন্ত কয়েক মাস আগে সম্পন্ন হলেও শুক্রবার দ্বিতীয়বারের মতো আবারও তদন্তে নামে তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক সাবেক আইজিপি আব্দুল হান্নান খান পিপিএমের নেতৃত্বে ওই দিন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, প্রজন্ম ’৭১, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট, স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক সাবেক আইজিপি আব্দুল হান্নান খান পিপিএম, সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নূর হোসেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত সংস্থার সাক্ষী ও ভিকটিম সুরক্ষা কমিটির মেম্বার ও দৈনিক জনকণ্ঠের সংবাদদাতা রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন। এ সময় বক্তব্য রাখেনÑ উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ, ইউএনও মোঃ শওকত আলী, সাংবাদিক আব্দুল হান্নান, সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা গাজী শাহজাহান চিশতি, শিক্ষক সমীরণ দাশ প্রমুখ। এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেনÑ এএসপি সাজিদুর রহমান, ওসি মোজাম্মেল হক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক আহমদ, বামৈ ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল ইসলাম মাহফুজ, বুল্লা ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন বেনু, লাখাই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম প্রমুখ। সভায় আইজিপি আব্দুল হান্নান বলেন, ’৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করার দায়ে শুধু বিএনপি-জামায়াত বা অন্য কোন দল বিবেচ্য বিষয় নয়। এ বিচার সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হচ্ছে। নির্দোষ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের বিচারকগণও সদা সচেষ্ট। ’৭১ সালে ওই রকম কোন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থেকে বর্তমানে আওয়ামী লীগ করে নিজেকে যেমন গুটিয়ে রাখতে পারবেন না, তেমনি প্রমাণ পেলে এমন নেতাকেও ছাড়া হবে না। তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে তদন্ত সংস্থা কাজ করবে। এক্ষেত্রে কৃষ্ণপুর গণহত্যার নায়কও (লিয়াকত আলী) পার পাবে না। তাকে বাঁচাতে যেসব আওয়ামী লীগ নেতা সাক্ষী ও ভিকটিমদের ভয়ভীতি এবং প্রলোভন দেখাচ্ছেন তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্ত রাজাকারের বিচার চান কিনা, তিনি জানতে চাইলে উপস্থিত লোকজন হাত তুলে সমর্থন জানান। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান। এদিকে, সভা শেষে তদন্ত সংস্থার সদস্যরা সাবেক আইজিপি হান্নানের নেতৃত্বে গণহত্যাস্থল কৃষ্ণপুর গ্রামে যান। তদন্ত দলটি বধ্যভূমি পরিদর্শন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ, ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলা ও তাদের বাড়িঘর পরিদর্শন করে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থান পরিদর্শন করে সন্ধ্যায় লিয়াকত বাহিনী কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসিরনগর উপজেলার ফান্ডাউক গ্রাম, বাজার ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ সংঘটিত হত্যা, লুটপাটসহ নানা অপকর্মের স্থান পরিদর্শন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণসহ সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে রাতে হবিগঞ্জ ফিরে আসেন তাঁরা। এদিকে, একই মামলা নিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয় তদন্ত সংস্থার এই টিম। এতে উপস্থিত ছিলেন- জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, গণমান্য ব্যক্তিবর্গসহ শত শত লোক।
×