ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙলা থিয়েটারের ‘অমানুষ’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

বাঙলা থিয়েটারের ‘অমানুষ’ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এগিয়ে চলেছে মঞ্চনাটক। নাট্যপ্রাণ শিল্পীদের শ্রম-ঘামে এই শিল্পমাধ্যমটি এখন দেশের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও সমাদৃত। আর অবিরাম পথচলার সুবাদে ঢাকার মঞ্চে যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। বাঙলা থিয়েটার মঞ্চে নিয়ে এলো দলের ষষ্ঠ প্রযোজনা অমানুষ। রচনার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। শনিবার বৃষ্টিস্নাত বৈশাখী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে অমানুষ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। আর এই নাটকের সুবাদে একসঙ্গে মঞ্চে দেখা গেল বিশিষ্ট দুই অভিনয়শিল্পী মিতা চৌধুরী ও মামুনুর রশীদকে। দুই চরিত্রের নাটকে পারিপার্শ্বিকতায় স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উপজীব্য করে এগিয়েছে কাহিনী। গল্পের ভেতর দিয়ে উঠে এসেছে ক্রান্তিকাল। উপস্থাপিত হয়েছে সমকালীন সমাজব্যবস্থা কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থার চিত্র। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ বলেন, নাটকটি রচিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে। একটা সময়ের প্রতিফলনে লেখা নাম। আমাদের ইতিহাসের এবং জনজীবনের দায়কে নিজের করে নেয়া এক অদ্ভুত মানুষের স্বীকারোক্তি। কিন্তু তা সংঘাতময়। সংঘাত নিজের সঙ্গে, স্ত্রীর সঙ্গে, সবার সঙ্গে। দুটি চরিত্রে রচিত প্রযোজনাটির অভিজ্ঞতা যেমন সুকঠিন তেমনি আনন্দদায়ক। সেই সময়ের ভাবনার সঙ্গে আজকের ভাবনা মিলে যাওয়া কাকতালীয় নয়, জনজীবনের অন্তঃপ্রবাহে কিছু বিষয় দ্রুত পাল্টায় না। জোর করে পাল্টে দেয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও থাকে। সেই বিদ্রোহের কিছুটা বিচ্ছুরণ ঘটেছে নাটকে। অমিত মল্লিকের সঙ্গীতে প্রযোজনাটির মঞ্চসজ্জা ও পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ডমিনিক গোমেজ। গান-কবিতায় নিবেদিতাকে স্মরণ ॥ গানের সুর, কবিতার ছন্দে ও বক্তার কথায় স্মরণ করা হলো মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. নিবেদিতা দাশ পুরকায়স্থকে। শনিবার বিকেল বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত। সৃহৃদ, স্বজন ও বন্ধুদের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণনানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি মাহফুজা খানম ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করেন কবি রুবী রহমান। আর নিবেদিতার স্মৃতিচারণ করেন শিল্পী এনামুল কবীর, শীরিন বানু, এ্যাডেভোকেট তোবারক হোসেন, শামসুল হুদা, জাহাঙ্গীর সেলিম প্রমুখ। আয়োজনের শুরুতে এই মহীয়সী নারীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। নিবেদিতার সংক্ষিপ্ত সংগ্রামী জীবনী পাঠ করেন কাজী মদিনা। এরপর তাঁকে নিবেদিত দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। তার পরিবেশনার শুরুতে ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘নিশিদিন চাইরে তার পানে, বিকশিলে প্রাণ তার গুনগানে’ ও ‘সমুখে শান্তি পারাবার ভাসাও তরণী হে কর্ণধার।’ গান শেষে শুরু হয় স্মৃতিচারণ। বক্তারা বলেন, নিবেদিতার জীবনাদর্শ ছিল মানবতা ও মানুষের প্রতি ভালবাসা। তিনি ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ও অজেয় সত্তার অধিকারী এক সংগ্রামী নারী। তাঁর মধ্যে ছিল রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। জীবনের কঠিন মুহূর্তেও তাঁকে ভেঙ্গে পড়তে দেখা যায়নি। অন্যায়ের কাছে তিনি কখনও আপোস করেননি। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল তিনি ইস্পাতদৃঢ় মানুষ। নিবেদিতার মেয়ে উপমা দাশগুপ্ত মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, মায়ের কাজ থেকে আমি শিখেছি কি করে ন্যায়ের পথে থেকে, আদর্শিকভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ ও মানুষকে ভালবাসা যায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ড. নিবেদিতা অনন্য অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও সিলেটের প্রগতিশীল নেতাকর্মীদের গোপন আশ্রয়ের ব্যবস্থা, তাদের কাছে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করতেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সকল জনসভা, মিটিং, মিছিল ও সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণের জন্য সিলেটের মেয়েদের সংগঠিত করতেন। কোন এক সময়ে ভারতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের বেইস ক্যাম্পের কার্যক্রমে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মকা-ের সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রেরণ ও প্রকাশের নেপথ্যেও তিনি ভূমিকা রাখেন। তিনি কর্মজীবনে দৈনিক আজাদী, বাংলার বাণী, সংবাদ, যুগভেরী, আল-আমীনসহ দেশের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেন। পাক্ষিক চিহ্ন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন বহুদিন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতা ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থায়ও কাজ করেছেন। তাঁর গল্প, উপন্যাস, অনুবাদ ও গবেষণাসহ মোট বইয়ের সংখ্যা ১৮টি। দীর্ঘ তিন বছর দুরারোগ্য কিডনিরোগে আক্রান্ত থাকার পর এ বছর মার্চ মাসের ১৭ তারিখ মৃত্যু বরণ করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সুতপা সাহা। তিনি ‘জীবন মরণে সীমানা ছাড়ায়ে’ ও ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়’ শিরোনামে পরপর দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর ‘কথা মানবী’ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তি করেন ঝর্ণা সরকার। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী নমিতা রহমান। মঞ্চস্থ সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী নাটক অগ্নিগণ ॥ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদের নাটক অগ্নিগণ। গ্রন্থিক নাট্যগোষ্ঠী ষষ্ঠ প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হলো শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়। জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামানের গল্প ভাবনায় নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মতিউর রহমান রানা। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ নিয়ামত হোসেন তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধশেষে তাঁর পুত্র স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হয়। স্বামীর লাশ দেখে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে তাঁর পুত্রবধূ। সর্বস্বান্ত নিয়ামত একমাত্র নাতনি মাটিকে বুকে চেপে জীবনযাপন করে। শত কষ্টের মাঝেও তাঁর ভেতর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কলুষিত হয়নি। ধীরে বড় হয় মাটি। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দাদাকে দেখাশোনা করে সে। ভাল খাবার এনে দাদাকে খাওয়ায়। এদিকে মাটি ভালবেসে ফেলে গ্রামের চুড়িওয়ালা আক্কাসকে। কিন্তু চেয়ারম্যানের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে যৌবনদীপ্ত মাটির ওপর। নির্জনে কাছে পেতে চেয়ারম্যান নানা ফন্দি আঁটে। কিন্তু কোনকিছুতেই বাগে আনতে পারে না মাটিকে। একদিন চেয়ারম্যানকে অপমানও করে সে। আর হিংস্র্র চেয়ারম্যান চায় অপমানের বদলা নিতে। একদিন চেয়ারম্যান গ্রামের বখাটে ছেলে তেঁতুলকে ঘরে ঢুকিয়ে দেহব্যবসার অপবাদ দেয় মাটিকে। মাটির বিরুদ্ধে লোকজন নিয়ে বিচার সাজায়। কিন্তু সত্য তো আর লুকিয়ে রাখা যায় না। একদিন চেয়ারম্যানের প্রকৃত রূপ বের হয়ে আসে। গ্রামবাসী জানতে পারে চেয়ারম্যান মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধী। ফুঁসে ওঠে মানুষ। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রকাশ সরকার, দেওয়ান হুমায়ূন কবির, এমএ সোহেল, মনি, ফরিদা, নাজমা, নাসরিন প্রমুখ।
×