বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অস্ত্রসহ বিশাল গাড়িবহর নিয়ে সিটি নির্বাচনে প্রচারের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে ১৪ দলীয় জোটের একটি প্রতিনিধি দল আজ রবিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাবে। শনিবার বিকেলে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নেত্রী ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর ৯২ দিনের হরতাল-অবরোধের আন্দোলনও ব্যর্থ হয়েছে। এখন সিটি নির্বাচনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাডারসহ নিজেই মাঠে নেমেছেন। তাঁর দলীয় ক্যাডাররা মোটরবাইক নিয়ে কয়েক দফা মহড়া দিয়েছে। ১৪ দলের পক্ষ থেকে তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীকে নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আপনারা বুঝিয়ে দিন এ দেশে পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের কোন স্থান নেই। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
২৮ এপ্রিল সরকার ভোট ডাকাতি করতে পারে বলে বিএনপির তরফ থেকে যে আশঙ্কা করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ভোট ডাকাতিতে বিএনপিই পারদর্শী। এ কাজে তাদের অতীত রেকর্ড রয়েছে। নির্বাচনে পরাজয় জেনেই তারা এসব কথা বলছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ক্ষমতায় থাকাকালীন মাগুরা ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে জোর করে ভোট জালিয়াতি করেছিল। তাই নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্কিত কথা বলার সময় আয়নায় খালেদা জিয়ার নিজের চেহারাটা দেখা উচিত।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক জাসদ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নাদের চৌধুরীকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত জাসদ নেত্রী শিরীন আকতার দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে জানান।
‘আইনশৃঙ্খলা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকের বাইরে এসে মাঠে থাকা উচিত’ মর্মে বিএনপি নেতা লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের বক্তব্যের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে উস্কে দেয়া হচ্ছে। তার এ বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে, বিএনপি সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে চায়। এটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সারাবছর আমাদের পুলিশ, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু নির্বাচন এলে কেন সেনাবাহিনীকে দরকার হবে? আসলে বিএনপি সব সময় সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে চায়। তারা সেনাবাহিনীকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিতর্কিত কর্মকা- করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী মাঠে রেখে তারা কী উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চায়? তিনি বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণ যে রায় দেবে ১৪ দল তা মেনে নেবে।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা শিরীন আকতার এমপি, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী আবু, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।