ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আফ্রিদির গলায়ও লজ্জার মালা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

আফ্রিদির গলায়ও লজ্জার মালা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টি২০ ফরমেটে বাংলাদেশ দল আগে ১১ ম্যাচ জিতেছে। পাকিস্তান এ ফরমেটে বেশ অভিজ্ঞ একটি দল। কিন্তু এখন বদলে গেছে বাংলাদেশ। পাক শিবিরকে ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পর উজ্জীবিত টাইগাররা এবার টি২০ ম্যাচেও দাঁড়াতে দিল না সফরকারী পাকিস্তানকে। শুক্রবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এক টি২০ ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশী বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪১ রান তুলতে পেরেছিল পাকিস্তান। জবাবে সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমানের জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে ১৬.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান তুলে জয় পায় টাইগাররা। তখনও হাতে ছিল ২২ বল। এমন ম্যাড়ম্যাড়ে খেলাও হয় টি২০’তে! চোখ কপালে ওঠার মতোই অবস্থা! টি২০ মানেই সবার চোখে ভাসে ব্যাটসম্যানের মারমুখী ব্যাটিং। দ্রুত রান তোলার প্রবণতা। অথচ বাংলাদেশ বোলারদের দাপটে, বিশেষ করে অভিষেক টি২০ খেলা বামহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে পাকিস্তান ম্যাড়ম্যাড়ে খেলাই খেলল। একজন ব্যাটসম্যানকেও দাপটে খেলতে দেখা গেল না। উল্টো অভিষেকেই আলো ছড়ালেন মুস্তাফিজুর। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ২ উইকেটও তুলে নিলেন। এর মধ্যে আবার পাক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির মূল্যবান উইকেটও আছে। অভিষেকেই পাকিস্তানকে এভাবেই ভোগালেন এ তরুণ পেসার। তাতে করে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানের বেশি করতেই পারল না পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন দাপটই দেখিয়েছে বাংলাদেশ, সেই দাপটে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের ‘জ্ঞান-বুদ্ধি’ও যেন লোপ পেতে শুরু করে। ‘আফ্রিদি ফ্যাক্টরে’র কথা বলা হচ্ছিল। আফ্রিদি ‘ফ্যাক্টর’ হবেন দূরে থাক, ১২ রানের বেশি করতেই পারলেন না। মুস্তাফিজুরের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে মুশফিকুরের কাছে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন। এক বল আগেই মুস্তাফিজুরকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন ‘বুমবুম’ আফ্রিদি। মাঝখানে একটি ওয়াইড বাদ দিয়ে পরের সুইং বলটি বাতাসে ভেসে আফ্রিদির ব্যাটের ছোঁয়া লেগে মুশফিকের হাতে গেল। আউট হয়ে গেলেন মারকুটে চেহারায় অবতীর্ণ হয়ে অনেক বাংলাদেশের নিশ্চিত জয়কে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া ‘বুমবুম’ আফ্রিদি। তার আউটের সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান ইনিংসও যেন মরে গেল! কারণ একে তো দলের অধিনায়ক তিনি, তারপর আবার ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর বেহাল পাকিস্তান দলের ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসা। তবে মুখতার আলী অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই ৩৭ রান করে পাকিস্তানকে কিছুটা এগিয়ে দিয়েছেন। ১৬ রানের সময় মুখতার যে আউট হওয়া থেকে বেঁচেছেন, তখন আউট হলে পাকিস্তানের বিপদ আরও ঘনিয়ে আসত। শেষ পর্যন্ত দলীয় ৭৭ রানে গিয়ে মুখতার আউট হলেন। ৫০ রানে শেহজাদের (১৭) পর আফ্রিদি দলের ৬৪ রানের সময় আউট হতেই পাকিস্তানের ইনিংস যে বেশিদূর যাবে না তা বোঝা যায়। এতটাই চাপে পড়ে পাকিস্তান যে বল আর রানে সামঞ্জস্যই থাকে। অথচ টি২০’তে হওয়ার কথা ছিল, রানের চেয়ে বল অনেক কম হবে। ছক্কাও ৩টি হয়েছে। কী কষ্ট করেই ব্যাটিং করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। কোনভাবেই বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না কোন ব্যাটসম্যান। মাঝে হারিস সোহেল (৩০*) ও হাফিজ (২৬) দলের স্কোর এগিয়ে না নিয়ে গেলে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে যে সর্বনিম্ন ১৩৫ রান করেছিল পাকিস্তান, তারও পেছনে থাকবে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান ১৪০ রান অতিক্রম করতে পারল, নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে তুলল ১৪১ রান। উইকেট না পেলেও বিশ্বসেরা টি২০ অলরাউন্ডার সাকিব ৪ ওভারে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং করে ১৭ রান দিলেন। মাশরাফি যাকে অভিষেকের ক্যাপ পরিয়ে দিলেন সেই মুস্তাফিজুর রহমান প্রথম বল করলেন। মুস্তাফিজুর তো বাজিমাতই করলেন। প্রথমে ২ ওভার করে ৫ রান দিলেন। পরের ২ ওভারে আরও ১৫ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেটও। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জীবনের প্রথম উইকেটটি নিলেন আফ্রিদির। দ্বিতীয় উইকেটটি নিলেন হাফিজের। শুরুতেই ঝলক দেখালেন এ বোলার। বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে ৭ ম্যাচের সাতটিই জিতেছিল পাকিস্তান। ওয়ানডেতে টানা তিন ম্যাচে জেতার পর আত্মবিশ্বাস এতটাই বেড়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের, সেই আত্মবিশ্বাস টি২০’তেও কাজে লেগেছে। শুরুতে টস হেরে বোলিং করেও ঝলকানি দেখিয়েছে বাংলাদেশ। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ঠিকই উড়ন্ত সূচনা এসেছিল। কিন্তু অভিষেক টি২০ ম্যাচে কোন বল মোকাবেলা করার আগেই রান আউট হয়ে গেলেন সৌম্য সরকার। দ্রুতই সাজঘরে ফিরলেন ‘রান মেশিন’ মুশফিকুর রহীম (১৯) এবং তামিম ইকবাল (১৪)। প্রমাদ গুনতে শুরু করেছিল টাইগার শিবির। কিন্তু সাকিব-সাব্বির রীতিমতো ঝড় তুললেন। অবিচ্ছিন্ন থাকলেন শেষ পর্যন্ত। দু’জনের জোড়া অর্ধশতকে ২২ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান তুলে ৭ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল প্রায় জিততে জিততে। ম্যাচটায় সাকিব ৫৪ বলে ৮৪ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশ দলকে বড় একটা সংগ্রহ পাইয়ে দিয়েছিলেন। এবার তিনি ৪১ বলে ৯ চারে ৫৭ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লেন। সাব্বির অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ রানে।
×