ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এসএএফইএস সম্মেলন বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী ৯০ লাখ ॥ বছরে বাড়ছে এক লাখ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

এসএএফইএস সম্মেলন বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগী ৯০ লাখ ॥  বছরে বাড়ছে  এক লাখ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ, বছরে বাড়ছে আরও ১ লাখ রোগী। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছরই দ্বিগুণহারে বাড়ছে নতুন নতুন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম স্থানে। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক এসএএফইএস সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব এ্যান্ডোক্রাইন সোসাইটি (এসএফইএস) এই সম্মেলনের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য এ্যামিরেটাস অধ্যাপক হাজেরা মাহাতাবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনিশ রাষ্ট্রদূত হ্যানে ফিউগাল এস্কেয়ার প্রধান অতিথি এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জীবনযাপন পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করছে। ডায়াবেটিস যে হারে বাড়ছে তাতে আমাদের এখনই এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা ডায়াবেটিসকে সুনিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারে। ঘন ঘন ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে। এক পর্যায়ে পৌঁছলে অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে ডায়াবেটিস। টাইপ-২ ডায়াবেটিস শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি প্রতিরোধযোগ্য। প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের লক্ষ্যে বাডাস বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সম্প্রতি বাডাস করপোরেটভিত্তিক ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচীর অধীনে বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বল্প মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয়া হবে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে তা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে যেসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑফাস্টফুড ও কোমল পানীয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে যাতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়া উচিত। স্কুল কলেজে খোলা মাঠ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এককভাবে না পারলেও কয়েকটি স্কুল বা কলেজ যাতে সম্মিলিতভাবে একটি খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে সে ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে। টিভি-রেডিও-সংবাদপত্রে সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন বা সেøাগান প্রচারের ব্যবস্থা করা দরকার। এলাকাভিত্তিক ওয়ার্কিং ক্লাব, সুইমিং ক্লাব ইত্যাদি গড়ে তোলা উচিত। গৃহায়ণ কর্মসূচীর অনুমতি দেয়ার সময় হাঁটাচলার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা ও খেলাধুলার জন্য কিছুটা জায়গা রাখার বিধান রাখা যেতে পারে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যশিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে (যেমন মসজিদে খুতবার সময়) ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও সুস্বাস্থ্য রক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বক্তৃতা করার ব্যাপারে ধর্মীয় নেতাদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর মোবাইল অপারেটররা যাতে প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক সংক্ষিপ্ত বার্তা (এসএমএস) পাঠাতে অন্তত ৩০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন এক মহামারী। আজ থেকে দুই দশক আগেও ডায়াবেটিস ছিল খুবই স্বল্প পরিচিত, সেখানে আজকের দিনে শুধু উন্নত বিশ্বই নয়, বরং উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত বিশ্বেরও বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য সমস্যা এই ডায়াবেটিস। শুধু শহরাঞ্চল নয়, গ্রামীণ জীবনেও ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ কোটির মতো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ছাড়িয়ে যাবে ৫০ কোটি। বাংলাদেশে আশির দশকে ডায়াবেটিসের প্রবণতা ছিল মাত্র দুই শতাংশের মতো, সেখানে আজ তা ঢাকা শহরেই প্রায় ১০ শতাংশ ছ্ুঁয়েছে এবং প্রিডায়াবেটিস (ডায়াবেটিসের আগের ধাপ) এর হার আরও প্রায় ১০ শতাংশ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলেও এর সামগ্রিক প্রবণতা ৮ শতাংশের মতো। এভাবে ক্রমশঃ ডায়াবেটিস বাড়তে থাকলে শুধু ডায়াবেটিসের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য হবে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। শুধু দেশেই এখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ। সেই সঙ্গে প্রতিবছর এক লাখ নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে। তাছাড়া ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষতা হ্রাস পেয়ে হার্ট এ্যাটাক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ে পচন, এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত লাগতে পারে। এত বড় বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে তাই দরকার জনসচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ততা।
×