ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রচারে অর্ধশত মোটরবাইক নিয়ে নেতাকর্মীদের মহড়া

মাঠ পর্যায়ে সেনা মোতায়েন দাবি বেগম জিয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

মাঠ পর্যায়ে সেনা মোতায়েন দাবি বেগম জিয়ার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্যান্টনমেন্টে বসে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। সেনা মোতায়েন না করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনী মোতায়েনে ভয় পায় কেন? অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেনা মোতায়েন হলে ভোটাররা নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল ফটকে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে বিশাল গাড়িবহর এবং সামনে-পেছনে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীদের অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলের মহড়াসহ নির্বাচনী প্রচারে নামার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা এবং নির্বাচন কমিশন থেকে সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হলেও এ বিষয়ে কোন তোয়াক্কা করছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাই ষষ্ঠ দিনের মতো শুক্রবার তিনি একই কায়দায় নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। এভাবে ভোট চাইতে খালেদা জিয়া যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তীব্র যানজট হওয়ায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে। উল্লেখ্য, ১৮ এপ্রিল থেকে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নেমে ভোটারদের হাতে লিফলেট বিতরণ করে ভোট চাওয়া শুরু করেন তিনি। টানা পাঁচ দিন এভাবে প্রচার চালানোর পর বৃহস্পতিবার বিরতি দিয়ে শুক্রবার থেকে আবার নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে চাইছে। সরকারদলীয় প্রার্থীদের সুবিধা দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন তাদের ইচ্ছেমতো সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়েও আবার সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী বিশ্বের বুকে দেশের মর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। এরপরও তারা নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সাহস পাচ্ছে না। কারণ তারা পিলখানায় ষড়যন্ত্র করে সেনা অফিসারদের হত্যা করেছে, সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের চক্রান্ত করেছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বিদেশে নিরাপত্তা দিতে পারলে দেশের জনগণের নিরাপত্তা কেন দিতে পারবে না। খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরপর তিন দিন হামলা করা হয়েছে। পথে পথে বাঁধা দেয়া হয়েছে; কিন্তু আমি ভয় পাই না। উপরে আল্লাহ আছেন। আমি পিছু হটব না, নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাব। তিনি বলেন, দেশে এখন আর কারও নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনই গুম-খুন হচ্ছে। নদী-নালায় প্রতিদিনই লাশ ভেসে উঠছে। খালেদা জিয়া বলেন, মা-বোনদের বলছিÑ আপনারা সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন, ভয় পাবেন না। সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন, সন্ত্রাসী কর্মকা- চালালে সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। গুম, খুন ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে ঢাকা সিটি উত্তরে তাবিথ আউয়ালকে বাস মার্কায় ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসকে আটকে রাখা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে মির্জা আব্বাস বের হতে পারছেন না। এই সরকার জুলুম-নির্যাতন করে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চায়। ঢাকার মানুষ পরিবর্তন চায়, সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি চায়। তিন সিটি কর্পোরেশনের ভোটারদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা নির্ভয়ে সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দেবেন। আপনারা আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থীদের ভোট দেবেন না। তাহলে আপনারা নিরাপত্তাহীনতায় ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। ঢাকাবাসীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা যদি নিরাপত্তা, চাঁদাবাজমুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সন্ত্রাসমুক্ত, পানি-বিদ্যুত-গ্যাস, উন্নত রাস্তা চান তাহলে সঠিক মার্কায় ভোট দেবেন। সঠিক মার্কা হলো ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের মগ, ঢাকা উত্তরে তাবিথ আউয়ালের বাস ও চট্টগ্রামে মনজুর আলমের কমলা লেবু। খালেদা জিয়া এ সরকারকে জালিম সরকার বলে অভিযুক্ত করে বলেন, টিএসসিতে তাদের গু-াবাহিনী মা-বোনদের ওপর যে ঘটনা ঘটাল এর এখনও কোন বিচার হয়নি। আমি যেন নির্বাচনী প্রচারে নামতে না পারি এবং আমাদের প্রার্থী যেন জয়ী হতে না পারে সেজন্য আমার গাড়িবহরেও হামলা চালিয়েছে সরকারের গু-াবাহিনী। তিনি বলেন, এই সরকার সন্ত্রাসী, জনসমর্থনহীন। বিকেল সাড়ে চারটায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে বের হয়ে খালেদার গাড়িবহর তার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে দিয়ে নতুনবাজার ও নদ্দা হয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মূল ফটকে গিয়ে থামে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এখানে বক্তব্য রাখার পর কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত গিয়ে আবার উল্টোদিকে ফিরে নদ্দা বাস স্টপেজে এসে কিছুক্ষণ মানুষের হাতে লিফলেট বিতরণ করে নির্বাচনী প্রচার চালান। নদ্দায় গণসংযোগ শেষে খালেদা জিয়া আবারও তার গাড়িতে চেপে বসেন। এরপর তার গাড়িবহর নতুনবাজার, বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুলশান এক নম্বর যায়। গুলশান এক নম্বর থেকে গুলশান দুই নম্বর চত্বর হয়ে বনানী কাঁচাবাজারের সামনে দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বনানীর ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছায়। সেখানে নেমে খালেদা মৈত্রী কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে জনে-জনে ভোট চান। এরপর আরও কয়েকটি স্পটে ভোট চেয়ে রাতে গুলশানের বাসায় ফিরে যান তিনি। ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলসমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারকালে এক ব্যবসায়ী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে বলেন, ম্যাডাম আমরা ভাল নেই। এর জবাবে তিনি বলেন, ধৈর্য ধরুন পরিবর্তন আসবেই; তখন সব ঠিক হয়ে যাবে। নির্বাচনী প্রচারকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেনÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম ডিউ প্রমুখ।
×