ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পিস্তল, গানপাউডার, ধারালো অস্ত্র, জঙ্গী বই লিফলেট উদ্ধার;###;পিস্তল, গানপাউডার, ধারালো অস্ত্র উদ্ধার ॥ আরও একজনের মৃত্যু

আশুলিয়ার ঘটনায় আরও দুই জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

আশুলিয়ার ঘটনায় আরও দুই জঙ্গী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি ও জঙ্গীদের অর্থের যোগান দিতেই পরিকল্পিতভাবে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় দিনদুপুরে ফিল্মি স্টাইলে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা করে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটানো হতে পারে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই জঙ্গীকে গ্রেফতারের পর পুলিশের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এমনই দাবি করা হয়েছে। এদিকে আহত আইয়ুব আলী নামে একজন শুক্রবার রাতে সাভারের এনাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ নিয়ে এ ঘটনায় ৯ জন মারা গেল। এর আগে এ ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংক ম্যানেজার, ব্যাংকের গানম্যান ও এক গ্রাহক এবং দুই ডাকাতসহ আটজনের মৃত্যু হয়। পুলিশ বলছে, গ্রেফতারকৃত দু’জন আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করত। বর্তমানে জঙ্গী সংগঠনের হয়ে কাজ করছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ম্যাগাজিনসহ পিস্তল, গানপাউডার, গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র, দুটি মোটরসাইকেল ও জেএমবি এবং ছাত্রশিবিরের উগ্রপন্থী লেখাসংবলিত শতাধিক বই ও বিপুল পরিমাণ লিফলেট। জেএমবি ও ছাত্রশিবির সম্মিলিতভাবে বা এককভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। আশুলিয়ার ডাকাতির ধরন আর ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে পুলিশ হত্যা করে তিন জেএমবি সদস্যকে ছিনতাইয়ের ধরন একই। ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাইয়ের সঙ্গে গ্রেফতারকৃতরা জড়িত কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সাভার থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত ২১ এপ্রিল দুপুর দু’টার দিকে তিনটি মোটরসাইকেলযোগে ৮-১০ ডাকাত আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক শাখায় যায়। তারা গ্রাহকের বেশে ব্যাংকে প্রবেশ করেই অস্ত্রের মুখে ম্যানেজারকে জিম্মি করে। এরপর গুলি, বোমা হামলা ও কুপিয়ে আহত করার পাশাপাশি গ্রেনেড হামলা চালাতে থাকে। বাধা দিতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই খুন হন ম্যানেজার অলি উল্যাহ (৪৫), গানম্যান বদরুল আলম (৩৮) ও ব্যাংকের গ্রাহক ব্যবসায়ী মোঃ পলাশ (৫৫)। আর জনতার ধাওয়ার মুখে পালানোর সময় ডাকাতদের গুলিতে ঝালমুড়ি বিক্রেতা মনির (৬০) ও স্থানীয় ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমানসহ (৪০) ছয়জনের মৃত্যু হয়। গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলেই এক ডাকাতের মৃত্যু হয়। আর রাতে সাভার এনাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আরেক ডাকাতের মৃত্যু হয়। জনতা সাইফুল ইসলাম নামে এক ডাকাতকে পুলিশে সোপর্দ করে। সাইফুলের তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই বোরহান উদ্দিন নামে এক ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আগে গ্রেফতারকৃত দুই ডাকাতের কাছ থেকে ব্যাংক থেকে লুণ্ঠিত ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৭ হাজার ২৫৫ টাকা উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যমতে ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে অভিযান চালায় ঢাকা জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে টঙ্গীর সাতনগর এলাকা থেকে বাবুল সর্দার (৩২) ও মিন্টু প্রধান (২৮) নামে দু’জনকে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয়। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। শুক্রবার দুপুর বারোটায় আনুষ্ঠানিক ওই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান জানান, গ্রেফতার থাকা সাইফুল ও বোরহানের তথ্যমতে বাবুল ও মিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দু’জনই এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। বর্তমানে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তারা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিসহ সংগঠনের অর্থ সংগ্রহের জন্য ডাকাতির ঘটনাটি ঘটায়। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে। যে বাড়ি থেকে বাবুল ও মিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই বাড়ি থেকেই মোটরসাইকেলের কাগজপত্রও উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া তাদের কাছ থেকে গানপাউডার, গ্রেনেড ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম, চারটি চাপাতি, আটটি ছোরা, একটি পিস্তলের ম্যাগাজিন ও শতাধিক উগ্র লেখাসংবলিত বই ও লিফলেট উদ্ধার হয়েছে। তাদের কাছে জেএমবি ও ছাত্রশিবিরের বইপত্রও পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃত দু’জনের মধ্যে একজন রিক্সাচালক আর অপরজন পোশাক শ্রমিক। জঙ্গী কার্যক্রম চালানোর সুবিধার জন্য তারা এমন পেশা বেছে নিয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত বোরহান রাস্তায় পপকর্ন (ভুট্টার মুড়ি) বিক্রি করত। এটি জঙ্গীদের তথ্য সংগ্রহসহ নানা কর্মকা- পরিচালনার কৌশল। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম ও সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ জেলা আদালতে নেয়ার সময় ত্রিশালে সড়ক অবরোধ করে কমান্ডো স্টাইলে প্রিজনভ্যানে গুলি চালিয়ে পুলিশকে হত্যা করে জেএমবির মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি রাকিব হাসান, সালেহীন ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বোমা মিজানকে ছিনিয়ে নেয় জেএমবি। ওই দিনই পুলিশের অভিযানে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ছিনিয়ে নেয়া মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জেএমবি সদস্য রাকিব হাসান। অদ্যাবধি দুই জঙ্গীর হদিস মেলেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ত্রিশালে জেএমবি সদস্য ছিনতাইয়ের ঘটনার ধরনের সঙ্গে আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ধরনের বহু মিল রয়েছে। জঙ্গীরা আর্থিক যোগানের পাশাপাশি নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। গ্রেফতারকৃতরা ত্রিশালে জঙ্গী ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
×