ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তেঁতুলঝোরা-ভাকুর্তা প্রকল্প গ্রহণ ঢাকা ;###;প্রকল্পটি ’১৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ;###;৫২১ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২১ কোটি টাকা

মিরপুরে ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

মিরপুরে ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা ওয়াসা দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের জন্য সাভারে ‘তেঁতুলঝোরা-ভাকুর্তা’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পে উৎপাদিত পানি নগরীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দাদের জন্য সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ৫২১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৭০ ভাগ টাকাই কোরীয় সরকার দেবে। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পে ৪৬ উৎপাদন প্লান্টস (প্রডাকশন ওয়েলস), দুটি পানির আয়রন অপসারণ প্লান্ট, একটি অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার জলাধার, ৫৬ ডিজেল জেনারেটর, ৭৬ গভীর নলকূপ ও ৪৮ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন থাকবে। ঢাকা ওয়াসা ও দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রটেম কোম্পানির (এইচআরসি) মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। একটি পরিবেশ-বান্ধব ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা ওয়াসা কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ২০১৯ সালের মধ্যে ঢাকা ওয়াসা মোট উৎপাদনের শতকরা ৭০ ভাগ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে উৎপাদনের কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে নগরীতে পানির চাহিদা দৈনিক ২৩০ কোটি লিটার। কিন্তু ওয়াসা উৎপাদন করছে দৈনিক ২৪২ কোটি লিটার পানি। এই উৎপাদনের শতকরা ২২ ভাগ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। রাজধানীর উত্তর অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষের পানি সরবরাহ দিতে তুরাগ নদীর পাশে নিচু এলাকায় চারটি জলাধার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। আশুলিয়া রিজার্ভার ও পানি সরবরাহ সমীক্ষা নামের এই প্রকল্প ১ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমির ওপর পাবলিক প্রাইভেট পাটনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। ২ হাজার এক শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন বছর সময় লাগবে। আশুলিয়া রিজার্ভার এবং পানি সরবরাহ সমীক্ষা প্রকল্পের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ দেয়ার বিষয়টি এখন ঢাকা ওয়াসার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যথাসময়ে নিরাপদ পানির যোগান দেয়াই বড় ব্যাপার হচ্ছে। দিন দিন রাজধানী বড় হচ্ছে। সেই সঙ্গে মানুষও বাড়ছে। আগামী দিনে ঢাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ওয়াসাকে প্রতিনিয়ত কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ওয়াসা সূত্র মতে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে রাজধানীর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ১০ লাখে। আর ২০৩০ সালে রাজধানীতে পানি সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৯৯০ কোটি লিটারে। এই বিপুল পরিমাণ সরবরাহের ব্যবস্থা কিভাবে হবে তা আমাদের আগে থেকেই ভাবতে হবে। বর্তমানে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে তার ৮৭ ভাগ পানি তোলা হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। এটা পরিবেশের জন্য চরম হুমকি হয়ে উঠেছে। হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে কিভাবে রাজধানীর চাহিদা মেটানো যায় সেই দিকে নজর দিতে হবে। ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে। ওয়াসা বৃষ্টির পানি ধরে রেখে শীত মৌসুমে ব্যবহার করার বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা অনেকাংশে কমে যাবে। তখন পরিবেশেও নষ্ট হবে না। মেঘনা ও পদ্মা থেকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করার সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এই প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব হবে। পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না। বরং ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হবে। ঢাকা মহানগরীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেয়া যাবে। ওয়াসা জানিয়েছে, ট্রপোলজিক্যাল সার্ভে করে দেখা গেছে, তুরাগ নদীর দুই পাশে নিচু এলাকায় চারটি জলাধার তৈরি করা সম্ভব। শুকনো মৌসুমে তুরাগ নদীতে উচ্চতা এক মিটার পর্যন্ত থাকে। বর্ষা মৌসুমে পানি উচ্চতা বেড়ে ৬ মিটার পর্যন্ত হয়। বর্ষা মৌসুমে ১১ গেটের মাধ্যমে চারটি রিজার্ভারে ধরে রাখা গেলে সারাবছর পানি সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে খুব বেশি টাকা খরচও হবে না। কারণ এলাকার জমির মালিকরা হবেন ওই প্রকল্পের অংশীদার। প্রকল্পের লাভ থেকে তারা লাভবান হবেন। পিপিপির আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যে শুধু পানি সমস্যা সমাধান হবে তা নয়। এই এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হবে। প্রকল্পের চার পাশে তৈরি হবে রাস্তা। এই রাস্তাগুলো ব্যবহার শুরু হলে যানবাহন চলাচলে ঢাকার ওপর চাপ অনেক কম হবে। পরিবেশের ক্ষতি না হয় এমন সব ব্যবস্থা রাখা হবে প্রকল্পে। প্রকল্পে বিনোদনের জন্য থাকবে ‘কেবল কার, ইলেক্ট্রিক যান ও ম্যানুয়াল’ যানবাহন। পরিবেশের ওপর ইকোলজিক্যাল সার্ভে করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগের চেয়ে এ এলাকায় জীববৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে। নদীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে নদী খনন করতে হবে। নদীতে যাতে সারাবছর পানি থাকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দখল আর দূষণের হাত থেকেও তুরাগ বেঁচে যাবে।
×