ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টি-২০তেও জিতল বাংলাদেশ ॥ ফের বাঘের গর্জন

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

টি-২০তেও জিতল বাংলাদেশ ॥ ফের বাঘের গর্জন

মিথুন আশরাফ ॥ ম্যাচ শেষ হতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাল-সবুজে মোড়ানো জাতীয় পতাকা ওড়াতে থাকলেন। এ চিত্রটি যখন জায়ান্ট স্ক্রিনে ভাসতে থাকল, তখন স্টেডিয়ামজুড়ে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব উঠল। তাতেই বোঝা গেল পাকিস্তানকে আবারও হারাল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার পর এবার টি২০’তেও ৭ উইকেটে জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। ওয়ানডের দাপট টি২০’তেও বজায় থাকল। সেই দাপটে ওয়ানডের পর টি২০’তেও জয়োৎসবই হলো বাংলাদেশের। তিন ওয়ানডের তিনটিতেই জেতার পর এবার সিরিজের একমাত্র টি২০ ম্যাচও জিতে নিল বাংলাদেশ। সেই জয়টি আসল আবার সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত অপরাজিত ৫৭ রানের সঙ্গে সাব্বির রহমান রুম্মনের অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন শিরোপাগুলো তুলে দিলেন মাশরাফির হাতে, তখন উল্লাস, আনন্দ যেন আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেল। ১৬ বছর পর পাকিস্তানকে ওয়ানডেতে আবারও হারানোর সঙ্গে ‘বাংলাওয়াশ’ই করে দিল টাইগাররা। আর ৭ টি২০ ম্যাচের পর অবশেষে টি২০’তেও পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে টি২০’তে হারানোর আক্ষেপও সেই সঙ্গে ঘুচে গেল। পাকিস্তানকে তো টানা ৪ ম্যাচেই হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। টস জিতে পাকিস্তান আগে ব্যাট করে। টি২০’তে অভিষেক হওয়া মুস্তাফিজুর রহমানের (২/২০) বোলিং তোপে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। অভিষিক্ত মুখতার আহমেদ সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন। হারিস সোহেলের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৩০ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৭ রানের মধ্যেই সৌম্য সরকার (০), তামিম ইকবালকে (১৪) হারানোর পর ৩৮ রানে মুশফিকুর রহীমের (১৯) উইকেট পতনে একটু বিপাকেই পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই সাকিব-সাব্বির মিলে অসাধারণ ব্যাটিং শুরু করেন। পাকিস্তান ইনিংসে যে ম্যাড়মেড়ে ব্যাটিং দেখা গেছে, বাংলাদেশ ইনিংসে তা উড়েই গেল। শেষপর্যন্ত সাকিব-সাব্বিরের চতুর্থ উইকেটে করা ১০৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২২ বল বাকি থাকতে ১৪৩ রান করে জিতে গেল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ওয়ানডে দলটি ছিল তারুণ্যনির্ভর। তাই বাংলাদেশ দাপট দেখিয়ে খেলেছে। পাকিস্তানের যে সাবেক, বর্তমান ক্রিকেটাররা পাকিস্তান দলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন, বেশিরভাগই এ বিষয়টি ইঙ্গিত করেছেন। তাহলে টি২০’তে কী হলো? ‘আফ্রিদি ফ্যাক্টরে’র কথা ম্যাচের আগে সবার মুখে মুখেই ছিল। আফ্রিদিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হয়ে উঠতে পারে ম্যাচে। এমন আলোচনা চলছিলই। কিন্তু কী দেখা গেল। আফ্রিদি, শেহজাদ, হারিস, হাফিজদের মতো অভিজ্ঞরা থাকার পরও পাকিস্তান কিছুই করতে পারল না। আফ্রিদি যে ম্যাচের আগেরদিন হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘আমি বলছি না যে একপেশে লড়াইয়ে আমরা জিতব। ভাল খেলা হবে।’ উল্টো হয়ে গেল। বরং মাশরাফি যে বলেছিলেন, ‘ওয়ানডে সিরিজ থেকে যে আত্মবিশ্বাস পাওয়া গেছে, তা টি২০’তেও কাজে লাগবে।’ তাই হলো। ম্যাচে তো আফ্রিদি বোকাই বনে গেলেন! যেন ‘জ্ঞান-বুদ্ধি’ সব হারাতে বসেছেন। মুস্তাফিজুর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম উইকেট নিলেন। সেটিই আফ্রিদির। যখন মুস্তাফিজুরের সুইং করা দুর্দান্ত বলটি আফ্রিদির ব্যাটের ছোঁয়া লেগে মুশফিকের হাতে গেল, আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিলেন, আফ্রিদি এরপরও পিচ ছাড়তে চাননি। হাত দেখিয়ে ‘রিভিউ’ নেয়ার দিকেই দৃষ্টি দিলেন। অথচ টি২০’তে রিভিউ বলে কিছুই নেই। তা আফ্রিদি যেন জানেনই না। স্টেডিয়ামে তখন হাসির খোরাকই হলেন আফ্রিদি। দলের অধিনায়কেরই যখন এ অবস্থা, তখন ক্রিকেটাররা আর কতদূর দলকে নিতে পারবেন। নিতেও পারলেন না। শুরুতে মুখতার ১৬ রানে ‘নতুন জীবন’ পেয়েও ৩৭ রানের বেশি করতে পারলেন না। হারিস এসে অপরাজিতই থাকলেন। হাফিজ বোলিং এ্যাকশন শুধরে বল হাতে শুরুতেই তামিমের কাছে ছক্কা খেলেও ব্যাট হাতে করলেন ২৬ রান। তাতে পাকিস্তানের একটু যা সম্মান বাঁচাল। তা না হলে তো যাচ্ছেতাই অবস্থা হয়ে যায়। পাকিস্তান ইনিংস দেখে বিরক্তিই লেগে যায়। টি২০ খেলা দেখতে আসার মূল উদ্দেশ্যই থাকে ধুমধড়াক্কা ব্যাটিং। পাকিস্তান ইনিংসে ‘ধু’ও মিলল না, ‘ধুমধড়াক্কা’ দূরে থাক। সেই তুলনায় তামিম শুরুতেই ছক্কা, বাউন্ডারি হাঁকিয়ে খেলায় ‘জোস’ এনে দেন। সাকিব-সাব্বির মিলে তো যেন বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। সাকিব ৪১ বলে যে অপরাজিত ৫৭ রান করেন, তাতে ৯টি চারের মার রয়েছে। আর মাশরাফির ‘হার্টহিটার’ সাব্বির তো ৩২ বলে অপরাজিত ৫১ রান করেন ৭টি চার ও ১ ছক্কায়। মাশরাফি ম্যাচের আগেরদিন তিন ক্রিকেটারের কথা বিশেষ করে বলেছিলেন। একজন, সৌম্য। যিনি অভিষেক টি২০ ম্যাচে দুর্ভাগ্যক্রমে রান আউট হয়েছেন। আরেকজন, সাকিব। তিনি ঝলক দেখিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয়জন হলেন সাব্বির। তিনি তো ম্যাচসেরাই হয়ে গেলেন। টি২০’র শিরোপা আগে দেয়া হলো। তাতে যত না আনন্দ, উৎসবের আওয়াজ শোনা গেল; ওয়ানডে শিরোপা মাশরাফির হাতে যেই তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উৎসবে ফেটে পড়ল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। সেই সঙ্গে আনন্দ ১৬ কোটি প্রাণেই জোয়ার তুলল। তিন ওয়ানডের তিনটিতেই জেতার পর টি২০’ও জিতে নিল বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ পাকিস্তান ১৪১/৫; ২০ ওভার (মুখতার ৩৭, হারিস ৩০*, হাফিজ ২৬; মুস্তাফিজুর ২/২০)। বাংলাদেশ ১৪৩/৩; ১৬.২ ওভার (সাকিব ৫৭*, সাব্বির ৫১*, মুশফিক ১৯)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সাব্বির রহমান (বাংলাদেশ)।
×