ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন

প্রচারে ব্যস্ত নারী প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

প্রচারে ব্যস্ত  নারী  প্রার্থীরা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য জোরশোরে প্রচারে নেমেছেন নারী প্রার্থীরা। নানা কারণে পুরুষ প্রার্থীদের প্রচার একটু বেশি দৃশ্যমান হলেও একেবারে পিছিয়ে নেই নারীরা। তবে প্রচারে পাল্লা দিয়ে চলতে পারলেও সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের সংখ্যাগত দিক দিয়ে নারীদের অবস্থান ভাল নয়। ঢাকার দুটিসহ তিন সিটিতে মেয়র পদে যেমন নেই কোন নারী প্রার্থী তেমনি ১৩৪টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাত্র ২৬ জন নারী। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের বিপরীতে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মাত্র ২৩ জন। আর চট্টগ্রামে ৪১টিতে নির্বাচন করছেন মাত্র তিন জন নারী। অথচ তিন সিটি কর্পোরেশনে মোট কাউন্সিলর প্রার্থী এক হাজার ১৫২ জন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা কম হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর নারী প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকতা না করাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নিজেরাও সরাসরি ভোট যুদ্ধে পারবে না মনে করেন। তাই সংরক্ষিত আসনের দিকেই বেশি আগ্রহ দেখান তারা। নারীদের আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কম হওয়া ও সংখ্যা কম হওয়ার একটি কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ মুহূর্তে নারীর জন্য নিরাপদ রাজধানী গড়াসহ নানা অঙ্গীকার নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা। নারী লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে নারী অধিকার সংরক্ষণ, নিরাপত্তা জোরদার করার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। এছাড়া মাদকমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। রাস্তাঘাট সংস্কার এবং আবর্জনামুক্ত শহর গড়তে চান তারা। সেইসঙ্গে তারা ঢাকাকে নিরাপদ শহর হিসেবেও গড়ে তুলতে চান। তিন সিটি কর্পোরেশনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পুরুষের চেয়ে অনেক পিছিয়ে নারীরা। একে অনেকেই উদ্বেগজনক হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ৯৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট কাউন্সিলর প্রার্থী ৮৭৮ জন হলেও বিপরীতে নারী প্রার্থী মাত্র ২৩ জন। এর মধ্যে উত্তরে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মাত্র ১২ জন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে স্বপ্ন আহমেদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মনিরা মোশারফ ও ফেরদৌসী আহমেদ, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শিরিন রুখসানা, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মাহমুদা বেগম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিলকিস আলম ও রাবেয়া আলম, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে নীলুফা ইয়াসমীন নীলু ও কোহিনূর আক্তার বীথি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে খোন্দকার রোমানা হাসান, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে শরমিলা আহমেদ এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাজেদা আলী হেলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে দক্ষিণে ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ জন নারী। তারা হলেনÑ ২ নম্বর ওয়ার্ডে হাবিবা চৌধুরী, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তানিয়া হোসেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাবিনা জাহান, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নার্গিস মাহমুদা, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে শাহিদা মোর্শেদ, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে উম্মে খাদিজা পারভেজ, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেহেরুন নেছা, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডে আমিনা আক্তার, ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডে কোহিনূর বেগম ও ফারহানা রায়হান রিতা এবং ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে আল্পনা শিকদার। যদিও এছাড়া ঢাকা উত্তরের ১২টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৭৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর দক্ষিণ সিটিতে ১৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থীর সংখ্যা ১২২ জন। এদিকে চট্টগ্রামে সাধারণ আসনে নারীদের অবস্থান আরও করুণ। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী যেখানে ২৭৪ জন সেখানে নারী প্রার্থী মাত্র তিন জন। এরা হলেনÑ ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে রাবেয়া সুলতানা, ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে ফাতেমা বাদশা এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে জাহিদা আক্তার। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে কোন নারী প্রার্থী ছিলেন না। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষ প্রার্থীদের মতো নারী প্রার্থীদের প্রচারণাও জমজমাট। দিন-রাত নিজ এলাকার অলি-গলি চষে বেড়াচ্ছেন। এবার ঢাকা উত্তর থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফেরদৌসি আহমেদ মিষ্টি। তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের দলগুলো নারী-পুরুষ সমান অধিকারের কথা বললেও নারীদের সরাসরি নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দেয় না। অন্যদিকে বেশিরভাগ নারীরা নিজেরাই নিজেদের পুরুষের চেয়ে খাটো ভাবেন এবং সংরক্ষিত আসনের দিকেই আগ্রহ দেখান। তাই নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দলগুলোর নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিরাও ভাবেন মহিলারা পুরুষের সমানভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না তাই তাদের সমর্থন জোটে কম। সংরক্ষিত আসনে ১৬ বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে মাহমুদা বেগমের। তিনি এলাকাবাসীকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে বখাটেদের আইনের হাতে সোপর্দ করা, সকাল ৬টার মধ্যে যাতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ঝাড়ু দেয়ার কাজ শেষ করেন তা নিশ্চিত করা, রাস্তার বাতি, আবর্জনা পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজে যাতে কর্পোরেশনের পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা হয়- তাতে ভূমিকা রাখবেন বলে জানালেন। ঢাকা উত্তরের সাধারণ আসনের আরেক প্রার্থী রুনু আক্তারেরও সাবেক কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে। তিনি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজে ভূমিকা রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উত্তরের ২, ৩ ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী রোকসানা মলি বলেন, তিনি বিজয়ী হলে তার এলাকা পল্লবীকে মাদকমুক্ত করবেন। মাদকের অবাধ সরবরাহ বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতকে জোরদার করে তুলবেন। কেবল মাদক নয়, তিনি জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে রাস্তাঘাট সংস্কার ও আবর্জনা পরিষ্কার করাবেন। দক্ষিণে কেটলি মার্কায় লড়ছেন ইঞ্জিনিয়ার শম্পা বসু। সকলের বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলুন, নারী অধিকার সংরক্ষণ করুনÑ সেøাগানকে সামনে রেখে ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা, পাবলিক যানবাহনে নারীর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারীদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শম্পা বসু। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহিলাদের অংশগ্রহণ কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য শিরীন আক্তার। তিনি বলেন, মেয়র পদে একজন নারীও প্রার্থী হননি এটা দেখে কষ্ট পেয়েছি। যেখানে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পীকার ও সংসদ উপনেতা নারী সেখানে মেয়র নির্বাচনে অন্তত একজন নারী প্রার্থীও নেই এটা কিছুটা হতাশাজনক। সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে শিরীন আক্তার বলেন, নারীরা তৃণমূলে এখনও তেমন শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি।
×