ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিভি প্রসঙ্গে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

বিটিভি প্রসঙ্গে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা

গত ১৩ মার্চ পাঠকনন্দিত দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘সোনালী ঐতিহ্য হারাচ্ছে!! অস্তাচলে বিটিভি’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা বিটিভির মতো জাতীয় গণমাধ্যমের ভাবমূর্তি বিনষ্টির কারণ হতে পারে বলে বিটিভি কর্তৃপক্ষ মনে করে। প্রতিবেদনে বিটিভি সম্পর্কে অনেকাংশেই অতিরঞ্জিত বক্তব্য পরিবেশন করা হয়েছে। অনেক মন্তব্যই স্রেফ মন্তব্য, কোন বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ছিল না। প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হয় লেখাটি প্রতিবেদক যখন তৈরি করেছেন, তার প্রেক্ষাপট অনেক আগের। প্রতিবেদনের প্রথমেই বলা হয়েছে- দিনে দিনে রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমটি হারাচ্ছে দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা। দক্ষ ও যোগ্য লোকের অভাবে ক্রমাগত নিম্নগামী হচ্ছে অনুষ্ঠান ও সংবাদের মান। এ ধরনের তথ্যহীন বক্তব্য বর্তমান বাস্তবতায় সম্পূর্ণ কাল্পনিক। যা কিছুকাল আগে হয়ত ছিল। বর্তমান সত্য এই, বাংলা ভাষায় বিশ্বের প্রথম টেলিভিশন বিটিভি তার ঐতিহ্য ও গৌরব নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে বিটিভি নতুন যুগের নতুন সোপানে পদার্পণ করেছে। গণমানুষের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে আরও আকর্ষণীয় ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান নির্মাণ করছে। প্রতিবেদনে দক্ষ ও যোগ্য লোকের যে অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা শতভাগ সত্য নয়। ১৯৯২ সালে প্রণীত নিয়োগবিধির কিছু ত্রুটি/অসঙ্গতির কারণে দীর্ঘ সময় বিটিভির বিভিন্ন শাখায় দক্ষ ও সৃজনশীল জনবল নিয়োগ হয়নি। বর্তমান মহাপরিচালক যোগদান করার পর থেকে ক্রমান্বয়ে অযোগ্য ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে ক্ষমতাসীন সরকার নিয়োজিত প্ল্যানারদের মাধ্যমে অনুষ্ঠান নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন বিটিভির প্রযোজকগণই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা করছেন। দেশের প্রথিতযশা নাট্যকার, যাঁরা বিগত বছরগুলোতে বিটিভিতে আসতেন না তাঁরা বিটিভির জন্য নিজেরাই নাটক লিখছেন। মানহীন অনুষ্ঠান যাতে প্রচার না হয় সে লক্ষ্যে প্রযোজকদের নির্মিত অনুষ্ঠান সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রিভিউর জন্য মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রচারিত অনুষ্ঠান মনিটরিংয়ের জন্য উপ-মহাপরিচালকের (অনুষ্ঠান) নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে যাতে নিম্নমনের অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ না থাকে। প্রতিবেদকদের বক্তব্যে ‘এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ও দলীয় লেজুরবৃত্তিকারী কর্মকর্তাদের প্রশ্রয়ে এমন অচলাবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে’ যা মোটেও সত্য নয়। কারণ বিটিভির নিয়োগবিধি অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর এন্ট্রি পদগুলো পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ টেলিভিশন একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনিক শৃঙ্খলার মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখানে সব কার্যক্রমই মহাপরিচালকের নিয়ন্ত্রণাধীন। প্রতিবেদনে ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ ও গণহারে অযৌক্তিক পদোন্নতির কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদকের এ বক্তব্য আংশিক সঠিক। ১৯৯২ সালে প্রণীত নিয়োগবিধিটি বর্তমান সময়ের চাহিদানুযায়ী ত্রুটিপূর্ণ। নিয়োগবিধিটি যুগোপযোগী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যা বর্তমানে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন। ‘মানহীন অনুষ্ঠান’ প্রচারের যে ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে, তা দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়। বিটিভি আর দশটা চ্যানেলের মতো নয়। দর্শকদের নির্মল আনন্দ ও বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষের কাছে বিটিভি শতভাগ দায়বদ্ধ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ বহু বিষয়ে অনুষ্ঠান করতে হয় বিটিভিকে। দেশের তৃণমূলের মানুষসহ সকল শ্রেণী-পেশার দর্শকদের কথা বিবেচনায় রেখে বিটিভিকে অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে হচ্ছে। গত এক বছরে বহিরাগত বহু অযোগ্য প্ল্যানার দ্বারা অনুষ্ঠান নির্মাণ বন্ধ করে দেয়ার ফলে তারাই বিটিভির অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছেন। প্রতিবেদনে দায়সারাভাবে প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান ও সংবাদ বিভাগ মর্মে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অবাস্তব বলে বিটিভি মনে করে। কারণ, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম হিসেবে রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েই বিটিভির অনুষ্ঠান ও সংবাদ পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানের আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ, তা বহিরাগত কতিপয় অযোগ্য অনুষ্ঠান সহযোগীর কারণে অতীতে হতো, এখন তা হচ্ছে না। বিটিভির অফিস অটোমেশনের আওতায় আর্টিস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যা জুন ২০১৫ নাগাদ বাস্তবায়িত হবে। এ সিস্টেমের আওতায় শিল্পী কলাকুশলীদের সম্মানী তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে সরাসরি অনলাইনে প্রেরণের ব্যবস্থা থাকবে। দেশের একমাত্র টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল হয়েও প্রায়শই বিটিভির পর্দা ঝিরঝির করে, কাঁপতে থাকে ছবি, ভেঙে যায় শব্দ। প্রতিবেদনে উল্লিখিত অভিযোগটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। বিটিভি এনালগ পদ্ধতি থেকে সবেমাত্র ডিজিটাল সম্প্রচারের যাত্রা শুরু করেছে। এনালগ পদ্ধতির কারণে এবং কোন কোন এলাকায় কেবল অপারেটররা প্রাইম ব্যান্ডে বিটিভির সম্প্রচার না করার কারণে ঐসব এলাকায় ছবি ও শব্দ অস্পষ্ট শোনা যায়। বিটিভি এদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখছে। কেবল অপারেটররা যাতে বিটিভির অনুষ্ঠান প্রাইম ব্যান্ডে পরিচ্ছন্নভাবে প্রচার করে এ লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বিটিভির উদ্যোগে কেবল অপারেটর মালিকদের কয়েক দফা সভা করা হয়েছে। এছাড়াও পত্র মারফত অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে টিভি গাইড প্রসঙ্গে মন্তব্য করা হয়েছে। অতীতের দুর্বলতা কাটিয়ে জানুয়ারি-মার্চ ২০১৫-এর টিভি গাইড ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। এখন এপ্রিল-জুন ২০১৫ সংখ্যার কাজ চলছে। প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্থায়ীভাবে নিযুক্ত ১৫ জনের বেশি প্রযোজক পদধারী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করেন বার্তা বিভাগ যা মোটেও বাস্তব তথ্য নয়। কারণ বার্তা বিভাগের সিনিয়র দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ দৈনন্দিন সংবাদ প্রচার ও কাভারেজ সিডিউল তৈরি করে থাকেন। কারও প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে বা প্রভাব বিস্তার করে কাজ করার সুযোগ এখানে নেই। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতেই বার্তা বিভাগ পরিচালিত হয়ে থাকে। ২০০৭ সালের নিয়োগ পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। পদগুলোতে পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরকারী কর্মকমিশনের মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করে যোগ্য জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে যোগ্য ব্যক্তিরাই বার্তা বিভাগে নিয়োগ পেয়েছেন। ‘চিত্রগ্রহণ বিভাগেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম’ মর্মে প্রতিবেদনে যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে তা অতিরঞ্জিত। প্রধানমন্ত্রীর এ্যাসাইনমেন্ট কাভারেজ কাজ বন্ধ রাখার ষড়যন্ত্র করার মতো দুঃসাহস কারও নেই। স্টিল ক্যামেরার সামান্য ব্যাটারি এবং চার্জার প্রধানমন্ত্রীর এ্যাসাইনমেন্ট কভার না করার হাতিয়ার হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট স্থিরচিত্র গ্রাহককে বিভাগীয় শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। তবে এ কথা সত্য যে, বিটিভির কার্যপরিধি অনুযায়ী যথাসময়ে নিয়োগ ও পদোন্নতি না হওয়ার এ শাখায় দক্ষ চিত্রগ্রাহকের সঙ্কট রয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের ১ম শ্রেণীর ৩২৮টি, ২য় শ্রেণীর ১৪১টি, ৩য় শ্রেণীর ৭৬২টি ও ৪র্থ শ্রেণীর ৩৬৩টি অনুমোদিত পদের মধ্যে বহুপদ এখনও শূন্য রয়েছে। প্রবেশক পদে নিয়োগবিধি অনুযায়ী বিটিভিতে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর সরাসরি কোটায় জনবল নিয়োগ এবং পদোন্নতির কোটায় পদোন্নতি প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে শূন্য হওয়া ১ম শ্রেণীর ২৮টি, ২য় শ্রেণীর ০৯টি পদে পূরণ কার্যক্রম পিএসসিতে প্রক্রিয়াধীন। অপরদিকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর শূন্য পদগুলো বিটিভির অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় অবিলম্বে পূরণ করা হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে জনবল শূন্যতা কিছুটা লাঘব হবে। বিটিভিতে উর্ধতন পর্যায়ের বেশকিছু কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ায় ৫ম গ্রেড ও তদুর্ধ পর্যায়ে কর্মকর্তার শূন্যতা বিরাজ করছে। পদোন্নতির জন্য নিম্নপদে ফিডার পূর্ণ হওয়া কোন কর্মকর্তা না থাকায় পদোন্নতি প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে সাময়িকভাবে প্রেষণে/চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত কর্মকর্তাগণ সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন দফতর থেকে প্রেষণে নিয়োজিত হলেও কর্মকর্তাগণ বিটিভির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
×