ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টি২০’তেও জয়োৎসবে প্রস্তুত টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

টি২০’তেও জয়োৎসবে প্রস্তুত টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ ওয়ানডেতে জয়োৎসব হয়ে গেছে। এক এক করে টানা তিন ওয়ানডে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাওয়াশ করা গেছে। এবার টি২০’তেও সেই উৎসবের অপেক্ষাতেই আছে পুরো জাতি। আজ সেই উৎসবের দিন। সিরিজের এক টি২০ ম্যাচে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচেও বাংলাদেশ জিতে গেলে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি২০’তে জেতার সঙ্গে উৎসবের রঙে রঙ্গিনও হবে ক্রিকেটাররাসহ পুরো জাতি। পারবে বাংলাদেশ এবারও জয় তুলে নিতে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা’র মতে সম্ভব। যদি ওয়ানডে সিরিজে যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা গেছে তা বজায় রাখা যায়। মাশরাফিই যেমন বললেন, ‘সিরিজ (ওয়ানডে সিরিজ) আগে জিতেছি আমরা। জানতাম কঠিন সময় আসতে পারে। ওই সময় দল কেমন করে, সেটা দেখা প্রয়োজন ছিল। একটা সময় মনে হয়েছিল, ওরা ৩০০-৩২০ (তৃতীয় ওয়ানডেতে) করবে। কিন্তু ম্যাচে আমরা ভাল করতে পেরেছি বলে জিততে পেরেছি। এভাবে পেশাদারিত্ব দিয়ে খেলতে পারলে আরও ম্যাচ জেতা সম্ভব।’ সেই পেশাদারিত্ব দেখানোর দিনও আজ। অবশ্য পাকিস্তানের টি২০ অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি টি২০ ফরমেটে খেলা বলে আশাবাদী। আজকের ম্যাচ নিয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, ‘এখন নতুন ফরমেট। আমি, সোহেল তানভীর, উমর গুল, সাঈদ আজমল এবং মোহাম্মদ হাফিজ সবাই ফিরে এসেছি। টি২০ সমন্বয়টা আমাদের অনেক ভাল। আমি খুবই ইতিবাচক এবং আত্মবিশ্বাসী যে আমরা ভাল করতে পারব। কিছুসংখ্যাক সিনিয়র ক্রিকেটার দল ছেড়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া দেড় বছর সংগ্রাম করেছে। আপনারা যদি অস্ট্রেলিয়া দলের নৈপুণ্য দেখেন তবে বুঝতে পারবেন তারাও জান তো না কিভাবে একটি টুর্নামেন্ট জিততে হয়। যদি ২/৩ বাংলাদেশী খেলোয়াড় সরে দাঁড়ায় তারা আবার সংগ্রামের মুখে পড়বে। তবে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে আগামীকাল (আজ)।’ তরুণ দল নিয়ে ওয়ানডে খেলে পাকিস্তান টানা তিন ওয়ানডেতেই হেরেছে। ১৬ বছর পর পাকিস্তানকে হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাও আবার ৬ দিনের মধ্যে ৩ জয় তুলে নিয়েছে। এখন তাই টি২০’তে জয়ের আশাও করা হচ্ছে। তবে টি২০ দলটিতে বাংলাদেশ দলে নেই রুবেল হোসেন। তাকে টেস্ট সিরিজে খেলানোর জন্য বিশ্রামে রাখা হয়েছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশকে ভোগাতে পারে। বাংলাদেশ টি২০’তে ভুগবে না পাকিস্তানই আবার আফ্রিদির সঙ্গ পেয়েও হারবে; তা আজ রাতে ম্যাচ শেষ হতেই বোঝা যাবে। এর আগে পাকিস্তান দল অবশ্য সমালোচনায় তীরে বিদ্ধ হচ্ছে। যা পাকিস্তান দলের ক্রিকেটারদের ভোগাতে পারে। আগে শুধু সাবেক ক্রিকেটাররা পাকিস্তান দলের সমালোচনা করেছেন। এখন দেশটির সংবাদমাধ্যমও তাতে ভালভাবে যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তান বাংলাওয়াশ হওয়ার পরত পাকিস্তানকে নিয়ে যেমন চলছে সমালোচনা, বাংলাদেশের জয়ধ্বনি পাকিস্তান সংবাদমাধ্যমেও ছড়াচ্ছে! পাকিস্তানের সংসদেও দল নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা! পাকিস্তানের শীর্ষস্থান ডন শিরোনাম করেছে, ‘৩-০ : বাংলাদেশ ইনফ্লিক্ট হিস্টোরিক হোয়াইটওয়াশ অন হেল্পলেস পাকিস্তান।’ সেখানে বলা হয়েছে, ওপেনিং ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারের প্রথম সেঞ্চুরি হতাশ পাকিস্তানকে আট উইকেটে বিধ্বস্ত করেছে। তাদের আরেকটি সংবাদের শিরোনাম ‘গিভ নিউ টিম, আজমল সাম টাইম টু সেটল : মিসবাহ’। টেস্ট টিমের অধিনায়ক মিসবাহ উল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের ভক্তদের তিনি ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ পরাজয় দলের পরিবর্তনে প্রভাব রাখতে।’ দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, ‘বাংলাদেশ হিউমিলিয়েট পাকিস্তান উইথ আ ৩-০ হোয়াইটওয়াশ।’ যেখানে বলা হয়েছে, ‘স্বাগতিক বাংলাদেশের কাছে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হেরে নাস্তানাবুদ হয়েছে পাকিস্তান।’ পাকিস্তান টুডে লিখেছে, ‘রেস্ট ইন পিস পাকিস্তান ক্রিকেট।’ চলছে শুধুই সমালোচনা। যে সমালোচনায় ওয়ানডে ক্রিকেটে ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। এবার টি২০ ম্যাচেও তাই হলেই হয়। তবে এবার একটু সতর্ক হয়েই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছড়াছড়ি ছিল না। তরুণদের গাইড করার মতো সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলেন না। দেখা গেছে, তৃতীয় ওয়ানডের আগে যেই শহীদ আফ্রিদি এসে ক্রিকেটারদের একটু জ্ঞান দিয়েছে, তাতে কাজও হয়েছে। এবার তো আফ্রিদি খেলবেনই। পাকিস্তান ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক আজহার আলী সেই বিষয়টি ভালভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। শুরুতেই বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়ে এর পর বললেন, ‘বাংলাদেশ ভাল ক্রিকেট খেলেছে। আমরাও ভাল খেলেছি কোন কোন ক্ষেত্রে; কিন্তু তা সম্মিলিত রূপ দিতে পারিনি। আমাদের সবারই জানা যে আগলে রাখার মতো আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটাররা নেই। নতুনরাও মিলিতভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সব মিলিয়ে একটু সময় আমাদের লাগবে দল গুছিয়ে উঠতে। আমাদের ভাবনায় এখন শুধুই টি২০ এবং টেস্ট। আমরা সেখানে কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে পাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, সেখানে আমরা ভাল করব।’ এবার পাকিস্তানের ভাল করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সিনিয়রদের ভিড়ে তরুণরাওতো একটু সাহস করেই খেলতে পারবেন। তবে শেষ চার টি২০’তে পাকিস্তানের অবস্থা কিন্তু খুব ভাল ছিল না। তিনটিতেই হেরেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশও যে খুব ভাল কিছু করেছে, এমনও নয়। বিশ্বকাপের আগে ডিসেম্বরে যেখানে সর্বশেষ টি২০ খেলেছে পাকিস্তান, সেখানে বাংলাদেশ সর্বশেষ টি২০ খেলেছে গত বছর আগস্টে। ৮ মাস হয়ে গেছে টি২০ ক্রিকেট খেলে না বাংলাদেশ। আবার সর্বশেষ যে ৫ ম্যাচে খেলেছে বাংলাদেশ, শুধুই হার লেখা আছে। বাংলাদেশের টি২০ ইতিহাসও খুব বেশি সমৃদ্ধ নয়। ৪১ টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১১টিতেই জিতেছে। এক ম্যাচের কোন রেজাল্ট হয়নি। বাকি সব হেরেছে। হারের সংখ্যা বেশি, ২৯! পাকিস্তানের বিপক্ষে তো কোনদিনই টি২০’তে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ৭ টি২০ খেলে সবই হেরেছে। প্রতিটি আবার দাপট দেখিয়েই জিতেছে পাকিস্তান। এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। একদিকে পাকিস্তান দল বিশ্বকাপে ধুঁকতে ধুঁকতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বিদায় নিয়েছে। এরপর তো দলে পরিবর্তনের হাওয়াই লেগে গেছে। আর বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে যে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে, তা এখনও কাজে লেগেই চলেছে। পাকিস্তানকেই যেমন ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে। আজ টি২০’তেও যতই সিনিয়র নিয়ে খেলুক পাকিস্তান, বাংলাদেশ যে জিতবে না, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিকদের আত্মবিশ্বাস যে টি২০’তেও দেখা যাবে না; তা কে বলতে পারে। আর দেখা গেলেই তো হয়ে যায়। কী হয়ে যায়? পাকিস্তানকে টি২০’তেও হারানো হয়ে যায়। তা হয়ে গেলে আবারও জয়োৎসবই হবে। সেই উৎসবের অপেক্ষাতেই এখন পুরো দেশবাসী।
×