ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সহসভাপতি শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সহসভাপতি শেখ হাসিনা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আফ্রো-এশীয় শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সহ-সভাপতিত্ব (কো-চেয়ার) করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিসরের প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম মেহলাবও একই অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ৩৪ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ১০৫ দেশের প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ছয় দিনের সম্মেলনের তিনদিন বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার হচ্ছে শীর্ষ সম্মেলন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় দুই ঘণ্টার প্লেনারি সেশন-৪ (চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন) শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মিসরের প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম মেহলাব এই সেশনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। নাইজিরিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপিন্স, লিবিয়া, পাকিস্তান, কম্বোডিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের নেতারা এই সেশনে বক্তব্য দেন। খবর বিডিনিউজ ও বাসসর। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার হোটেল ‘বোরোবুদুর জাকার্তা’ থেকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বালাই সিদাং জাকার্তা সম্মেলন কেন্দ্রে নিয়ে নিয়ে আসা হয়। প্লেনারি সেশন শেষের পর ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামিদাল্লাহর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। আফ্রো-এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার জাকার্তায় পৌঁছানোর পর বুধবার ব্যস্ত সময় কাটান শেখ হাসিনা। সম্মেলনে দেয়া ভাষণে সন্ত্রাস দমন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্ব নেতাদের সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা ও অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রপন্থা দমন এবং টেকসই উন্নয়ন- এই তিন বিষয় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে মত দেন তিনি। এসব লক্ষ্য পূরণে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে আফ্রো-এশীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বুধবার সম্মেলনের ফাঁকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন এবং কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আবদুল্লাহ জেড আল-মাহমুদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লংয়ের সঙ্গেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন। রাতে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। আফ্রো-এশীয় সম্মেলনের প্রথম সমাবেশ ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়াতেই হয়েছিল ‘বান্দুং সম্মেলন’ নামে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকর্নর উদ্যোগে সেই সম্মেলনের প্রভাবে দুই বৃহৎ বিশ্ব জোটের বাইরে পরবর্তীতে সৃষ্টি হয়েছিল জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)। ৬০ বছর পূর্তিতে ইন্দোনেশিয়াই এবারের সম্মেলনের আয়োজক দেশ হিসেবে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, সচিব মোঃ শহীদুল হকসহ উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকসহ ৫১ জন জাকার্তায় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কোন্নয়নে মতৈক্য ॥ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতারা একমত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে এশিয়ান-আফ্রিকান সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, দুই নেতাই উন্নয়নশীল দেশের (দক্ষিণ-দক্ষিণ) সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের জন্য ইন্দোনেশিয়ার বাজার সুবিধা চেয়েছেন। একইসঙ্গে জাহাজ নির্মাণসহ সমুদ্রবিষয়ক ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কাজে লাগাতেও দেশটির প্রেসিডেন্টের কাছে শেখ হাসিনা সহায়তা চেয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট তার দেশের কয়লা, ক্লিঙ্কার, মরিচ, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য বাংলাদেশে বাজারসুবিধা চেয়েছেন। একইসঙ্গে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে যৌথ প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তার উপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বেসরকারী খাতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার বিষয়েও দুই দেশের বেসরকারী খাতের মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।’ দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট কমিশনের বৈঠক নিয়মিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে বৈঠকে। দুই শীর্ষ নেতা বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ বিবৃতি অনুমোদন করেছেন বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ার বাজারে ১২৯ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। বাংলাদেশের এ প্রস্তাব তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। এছাড়া কৃষি, পর্যটন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, জাহাজ নির্মাণ ও সমুদ্র বিষয়েও পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে এতে। জঙ্গীবাদ ও সহিংসতা দমনে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করারও অঙ্গীকার করা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
×