ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি

মঙ্গলবার দিনেদুপুরে রাজধানীর কাছে পোশাক শিল্পপল্লী হিসেবে খ্যাত আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের শাখায় যে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তা যেন ছায়াছবির দৃশ্যকেও হার মানায়। এটি এমনই দুঃসাহসী ও প্রাণঘাতী ছিল যে, ওই সশস্ত্র কার্যক্রম, তার ধরন ছিল ভীষণ নৃশংস। ঘটনায় নিহত হন ৮ জন। তিনটি মোটরসাইকেলে আগত এই ডাকাত দলে ছিল মোট নয় সদস্য। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা খুনোখুনি ঘটিয়ে টাকা লুট করে নেয় এবং এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে ফিল্মী কায়দায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। দুর্বৃত্তরা ডাকাতির কাজে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও চাপাতি ও গ্রেনেড ব্যবহার করে। শেষোক্ত দুটি অস্ত্র সচরাচর জঙ্গীরাই ব্যবহার করে থাকে। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুনের নজির জঙ্গীরাই সৃষ্টি করেছে দেশে। তাছাড়া সংগঠিত সন্ত্রাসী দল ছাড়া এমন মুড়ি-মুড়কির মতো গ্রেনেড ব্যবহারও অসম্ভব ব্যাপার। প্রাথমিক তদন্তকালে সাংবাদিকদের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার বলেন, এটা কোন স্বাভাবিক ডাকাতির ঘটনা নয়। এরা জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এমনই ধারণা করা হচ্ছে। নাশকতার উদ্দেশ্যেই তারা এ ঘটনা ঘটায় বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে। তাছাড়া ঘটনার দিন রাতেই এলাকাবাসীর হাতে আটক এক ডাকাতের বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু জিহাদী বই উদ্ধার করে। এ থেকেও ডাকাতির ঘটনায় জঙ্গীদের দিকেই সন্দেহের আঙ্গুল উঠছে। ডাকাতির সময় ব্যাংকের ৮টি সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। বিষয়টি রহস্যজনক। এটিও খতিয়ে দেখা দরকার। ডাকাতরা শুধু ডাকাতির উদ্দেশ্যে আসেনি, নাশকতার উদ্দেশ্যে এসেছিল। হামলার ধরন দেখে এমনটা মনে হচ্ছে বলে দাবি করেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়। আবার ডাকাতের দলকে গ্রেফতারে সক্ষম হলে এবং তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে পারলে মানুষের মনে প্রশাসন সম্পর্কে নতুন করে আস্থা তৈরি হয়। তখন দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে বলে বিশ্বাস জন্মায়। আশুলিয়ার ঘটনাটি অবশ্য অত্যন্ত আকস্মিক। এর নেপথ্যে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, একই ধরনের নৃশংসতার আরও পরিকল্পনা আছে কিনা সেটাই প্রশ্ন। এই ঘটনা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, দুর্বৃত্ত ও দুর্জনদের প্রতিরোধের মানসিকতা এখনও লালন করে এদেশের মানুষ। এমনকি জীবন দিয়ে হলেও তারা লুটপাট এবং মানুষ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেও পিছপা হয় না। এর পেছনে দেশপ্রেমও যে কাজ করে থাকে সে কথা বলাই বাহুল্য। তাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, কর্মচারী ও এলাকাবাসী সারাদেশের মানুষের কাছেই মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ হিসেবে সম্মান ও ভালবাসা পাবেন। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নেবে প্রশাসন এমনটা প্রত্যাশিত। আশুলিয়ায় যারা এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে আজ হোক কাল হোক তাদের অবশ্যই আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে, এমনটাই সবার প্রত্যাশা। টাকা লুটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ কিংবা নাশকতা ঘটিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিপন্ন করে তোলাÑ অভিপ্রায় যাই হোক না কেন কার্যকর তদন্তের ভেতর দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে এটা দেশবাসীর প্রত্যাশা। একই সঙ্গে এমন ভয়ঙ্কর ঘটনার নেপথ্যের কলকাঠি নাড়া গডফাদারকেও আইনের মুখোমুখি করা হোক। আমরা মনে করি দেশের নাগরিকদের আমানত রক্ষার জন্য ব্যাংকের মতো প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করা খুবই প্রয়োজন।
×