ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীরা চান করনীতির পুনর্বিন্যাস

এসএমই উন্নয়নে বৃহৎ শিল্পের সমন্বয় দরকার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

এসএমই উন্নয়নে বৃহৎ শিল্পের সমন্বয় দরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উন্নয়নে বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে সমন্বয় দরকার বলে মত দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। সেই সঙ্গে এ খাতে বিশেষ সুবিধা ও এসএমইবান্ধব করনীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা। তবে ব্যবসার ধরন ও গুরুত্ব বুঝে করের হার নির্ধারণ ও করের সবগুলো খাতের (আয়কর, শুল্ক ও মূসক) নীতির পুনর্বিন্যাস চান ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘দক্ষিণ এশিয়ার এসএমই উন্নয়নে কেমন করনীতি চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মত দেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জাপান, ভারত, চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে এসএমই শিল্প বৃহৎ শিল্পের অংশীদারী হয়েই এগিয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পের সীমাবদ্ধতা থাকায় আমদানি, রফতানি ও উৎপাদনসহ সবক্ষেত্রে ভালভাবে কাজ করা যায় না। এক্ষেত্রে বৃহৎ শিল্পের সঙ্গে সমন্বয় হলে তাদের কাজ সহজ হয়। তিনি বলেন, বর্তমান করনীতিতে যে টার্নওভার ট্যাক্স ও ভ্যাটের হার রয়েছে তা এসএমই শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বর্তমানে শিল্প ও হিসাবের ওপর ভ্যাট আদায় করা হয়। এটি মুনাফার ওপর হওয়া উচিত। কর্পোরেট কর কমানোসহ ট্যাক্স হার পুনর্বিন্যাস না করলে এসএমই শিল্পসহ ব্যক্তি বিনিয়োগ এগোবে না। এসএমই উন্নয়ন ও নতুন বিনিয়োগে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির ওপরও জোর দেন তিনি। পাকিস্তানের এসএমই বিষয়ক বাণিজ্যিক উপদেষ্টা কানিজ ফারাহ ফারুক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশের করের হার এসএমইবান্ধব নয়। এসএমই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টার্নওভার ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে সক্ষম হন না। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে একে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা দরকার। ভ্যাট বা পরোক্ষ করের পরিবর্তে আয়কর বা প্রত্যক্ষ করের ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে অভিমত দেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের দেশের রাজস্ব আয়ের ৯০ শতাংশ দেন বৃহৎ ব্যবসায়ীরা। তাই নতুন আইন করার সময় তাঁদের পরামর্শ নেয়া হয়। ফলে উপেক্ষিত হয় বাকি ১০ শতাংশ কর দেয়া এসএমই শিল্প। এসএমই শিল্পের কথা ভেবে ভ্যাটে বহু স্তর বহাল থাকা দরকার। তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি অনেক দেশের চেয়ে কম। শুধু বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করা হয় বিধায় এর প্রবৃদ্ধি ১১ থেকে ১২ শতাংশের বেশি হয় না। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সভাপতি ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের দেশে সংখ্যার ওপর নির্ভর করে ট্যাক্স ও ভ্যাট নেয়া হয়। এটি আসলে সংখ্যা নয়, ক্রেডিটের ওপর হওয়া দরকার। সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান বলেন, এসএমই শিল্পকে এগিয়ে নিতে এর জন্য আলাদা আলাদা জায়গায় শিল্প পার্ক গড়ে তোলা দরকার। এসএমই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভ্যাট পলিসি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহায়তায় সরকার নতুন আয়কর ও ভ্যাটনীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। বহু স্তরের ভ্যাটের পরিবর্তে এক স্তর ভ্যাট পদ্ধতি চালু করা হবে এ নীতিতে। তবে ৩৬ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার মওকুফ, ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৪ শতাংশ ট্যাক্স এবং এরপর চূড়ান্ত ভ্যাট অনেকটা বহু স্তর ভ্যাটনীতিরই নামান্তর। তবে আমাদের দেশের ব্যবসার ধরন অনেকরকম হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ভ্যাট দেয়া ব্যবসায়ীদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভ্যাটের ক্ষেত্রে একটা সাধারণ নীতি কার্যকর। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এশিয়ার অন্যান্য দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বৃহৎ শিল্পের অংশীদারী হয়ে কাজ করে অনেক প্রসার ঘটিয়েছে। জাপান, চীন ও ভারতসহ এশিয়ার অনেক দেশ এসএমই খাতকে বিশেষ সুবিধা দেয়ায় তাদের শিল্প অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। কাজী আকরাম বলেন, বাংলাদেশে এসএমই শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৫০ লাখ লোক জড়িত। এত বিরাটসংখ্যক লোক এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিশেষ কোন সুবিধা পায় না তারা। অথচ বিশেষ সুবিধা নিয়ে তৈরি পোশাক আজ প্রধান শিল্পে পরিণত হয়েছে।
×