ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোলারদের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

বোলারদের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রিকেটপ্রেমীরা শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলেন। অনেকেই হতাশায় ভাবছিলেন আজ বুঝি আর রক্ষা নেই। টস জিতে শুরুতে যেভাবে ব্যাটিং কারছিল পাকিস্তান দল সেটা দিবারাত্রির তৃতীয় ওয়ানডের দিনের প্রথম ভাগটাকে নিস্তব্ধ করে রাখল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাংলাদেশী ক্রিকেট প্রেমীদের। বুধবার পাকিস্তান ইনিংস চলার ৩৮ ওভার পেরিয়ে গেলেও উল্লাস করার তেমন উপলক্ষই পায়নি দর্শকরা। কারণ অধিনায়ক আজহার আলী দুর্দান্ত খেলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এবং দলকে এমন অবস্থানে নিয়ে গেছেন সেটা নিশ্চিতভাবেই বলে দিচ্ছিল ৩ শতাধিক রান তুলে ফেলবে পাকরা। ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা বেশি নেই এবং প্রায় সোয়া দুই বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরেছেন। সে কারণে আজহারকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা নিয়ে অনেক কানাঘুষা ও সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু ব্যাটেই জবাব দিয়েছেন ডানহাতি এ ৩০ বছর বয়সী ওপেনার। আগের দুই ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানো আজহার বুধবার হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। তাকে বোল্ড করে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। এরপর থেকেই মূলত বাংলাদেশী বোলাররা চেপে ধরেন পাক ব্যাটসম্যানদের। মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন ও আরাফাত সানির দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটে। তাদের ভয়ানক বোলিংয়ে শেষ ১০ ওভার ৩ বলে মাত্র ৪৭ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে পাকরা। শেষ পর্যন্ত ২৫০ রানেই শেষ হয় পাকদের ইনিংস। আগের দুই ম্যাচে এতটা ভাল শুরু পায়নি পাকরা। উদ্বোধনী জুটিতেই ৯১ রান তোলেন আজহার ও অভিষেক হওয়া ওপেনার সামি আসলাম। দারুণ খেলছিলেন সামি। তবে ৪৫ রান করার পর তাকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথম আঘাত হানেন অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। মোহাম্মদ হাফিজও ডাউন দ্য উইকেটে এসে বড় শট খেলার জন্য বাইরে এলে আরাফাতের বলে বোল্ড হয়ে যান। ১০৫ রানে দুই উইকেট নেই, ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ স্পিনারদের দারুণ লাইনলেন্থ বজায় রেখে। তবে শুরু থেকেই একেবারে ব্যতিক্রম ছিলেন আজহার। আগের দুই ম্যাচে দুটি দারুণ ফিফটি হাঁকিয়ে আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ওয়ানডে খেলার যথেষ্ট সক্ষমতা আছে তার মধ্যে। এদিনও রুবেল-তাসকিনদের বেপরোয়া হয়ে পিটিয়েছেন। একমাত্র মাশরাফি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন তাকে। তবে আজহার রানের চাকা রেখেছেন সচল। দ্রুত দুটি উইকেট চলে যাওয়ার পরেও মনোভাব বদলাননি আজহার। বলে-বলেই রান নিচ্ছিলেন এবং দলের রানরেট ভাল রাখেন। তৃতীয় উইকেটে হারিস সোহেলের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে ওঠে আবারও। এবার আরও ৯৮ রান যোগ হয় জুটিতে। তখনও পাকিস্তানের রানরেট পাঁচের ওপরে। ৫ ওয়ানডে ফিফটির মালিক আজহার দুর্দান্ত খেলে ১১২ বলে ১০ চারে ১০১ রান করেন। তাকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। এরপর থেকেই যেন আবার উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের বোলিং। স্পিন এবং পেস উভয় বিভাগ জ্বলে ওঠে। ফলে হারিসও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। আজহার বিদায় নেয়ার সময় পাকিস্তানের রান ছিল ৩৮.৪ ওভারে ২০৩ মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে। ওয়ানডের বর্তমান ফরমেট, ফিল্ডিং সাজানোর নিয়মাবলী ইত্যাদি কারণে অহরহই এই পরিস্থিতিতে যে কোন দল তিন শতাধিক রান তুলে ফেলে। সে কারণে আজহারের পর হারিসও যখন ফিরে গেলেন সে সময়ও খুব বেশি আনন্দিত হওয়ার কারণ দেখতে পায়নি দর্শকরা এবং মাশরাফিবাহিনী। কিন্তু এরপর যেন পুরোপুরি উল্টে গেল পরিস্থিতি। পাকরা ভাল অবস্থানে যাওয়ার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চড়াও হতে ব্যর্থ হলেন বাংলাদেশী বোলারদের ওপর। স্পিন-পেসের যুগপৎ আক্রমণ দারুণ জমে ওঠে। পরিস্থিতি অনুসারে বাংলাদেশ দলের ওপর চাপ থাকাটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু উল্টো বাংলাদেশী বোলাররাই পাক ব্যাটিং লাইনআপে চাপ সৃষ্টি করে। লাইনলেন্থ ধরে রেখে বোলিং করে একের পর এক উইকেট তুলে নেয় তারা। আবারও জেগে ওঠে ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দারুণ যন্ত্রণা দিয়েছিলেন পেসার ওয়াহাব দারুণ ব্যাটিং করে অর্ধশতক হাঁকিয়ে। কিন্তু এদিন আর তাকে দাঁড়তে দেয়নি বাংলাদেশী বোলাররা। পারেননি সাদ নাসিমও। এ দু’জনকেই দ্রুত বিদায় নিতে হয়েছে। বেশ দ্রুতই কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাক ব্যাটসম্যানরা। রুবেল-মাশরাফি গতি তোপে একের পর এক উইকেট হারায় সফরকারীরা। টানা দুই ওভারে সাদ ও ওয়াহাবকে তুলে নিয়ে পাক ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদ- গুড়িয়ে দেন ভয়ঙ্কর রুবেল। প্রথম ৪ ওভারে ৩৬ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে না পারলেও ডেথ ওভারের নায়ক রুবেল পরের দুই ওভারে ৭ রানে ২ উইকেট নেন। মাশরাফিও দুর্দান্ত বোলিং করে ফাওয়াদ আলমকে শিকার করেন। আরাফাত-সাকিবও সমানতালে ঘূর্ণি ক্ষমতা প্রদর্শন করলে দারুণ প্রত্যাবর্তন ঘটে বাংলাদেশের। আজহারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পরও সে কারণে শেষ ৪৭ রান করতেই বাকি ৮ উইকেট হারায় পাকিস্তান দল। এক ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় তারা। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের দারুণ নমুনা দেখিয়ে দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা সহজ টার্গেট রাখার ক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা পালন করেছেন বোলাররা। ক্যারিয়ারের ১৫০তম ম্যাচ খেলা সাকিব, আরাফাত, রুবেল ও মাশরাফি প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নিয়ে সম্মিলিতভাবে বিপর্যস্ত করেছেন পাকিস্তানকে।
×