ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত

শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিরতা ॥ সব সরকারী কলেজে ধর্মঘট রবিবার

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিরতা ॥ সব সরকারী কলেজে ধর্মঘট রবিবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে এক সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপকের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসনে। আন্দোলনসহ নানামুখী অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যসহ সরকারী কলেজ ও এ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষককে পা ধরিয়ে মাপ চাওয়ানোর মতো ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের কঠোর শাস্তির দাবিতে আগামী রবিবার দেশের সকল সরকারী কলেজে ধর্মঘট আহ্বান করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। একই সঙ্গে ১ মের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে আল্টিমেটামও দিয়েছে সারাদেশের শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা। বিভিন্ন জেলার সরকারী কলেজে প্রতিদিনই চলছে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন। শিক্ষা প্রশাসন ঘটনা খতিয়ে দেখতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে শিক্ষককে পা ধরিয়ে মাপ চাওয়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছেন। পাশাপাশি দোষী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। শিক্ষক লাঞ্ছনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট এখনও বুনিয়াদি/ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করেননি। বিধিবিধান না জানা একজন জুনিয়র কর্মকর্তাকে কেন ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব প্রদান করা হলো, তা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষা ক্যাডারের নেতারা। এর আগে গত ৯ এপ্রিল এইচএসসি ইংরেজী প্রথমপত্র পরীক্ষা চলাকালে পিরোজপুরের ভা?-ারিয়া সরকারী কলেজ কেন্দ্রে প্রধান প্রত্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন সহকারী অধ্যাপক মোনতাজ উদ্দিন। একপর্যায়ে সেলফোনে কথা বলতে বলতে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশ্রাফুল ইসলাম। পরিচয় না জানায় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা হকচকিত হয়ে যান। এরই মধ্যে আবার ম্যাজিস্ট্রেট শিক্ষককে বলেন, এক বেঞ্চে দুই ছাত্রী পাশাপাশি বসছে কেন? তাদের সরিয়ে দিন। এ অবস্থায় সহকারী অধ্যাপক মোনতাজ উদ্দিন তার পরিচয় জানতে চাইলে ক্ষেপে যান আশ্রাফুল ইসলাম। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনির হোসেন হাওলাদার ও পুলিশ ডেকে পাঠান ওই ম্যাজিস্ট্রেট। শিক্ষককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার হুমকি দেন ম্যাজিস্ট্রেট। প্রকাশ্যে মোনতাজ উদ্দিনকে ম্যাজিস্ট্রেটের পা ধরে ক্ষমা চাইতেও বাধ্য করেন। এ ছবি গত ক’দিনে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন সরকারী কলেজে চলছে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন। শিক্ষা ক্যাডারের কেন্দ্রীয় নেতারা মঙ্গলবার পিরোজপুরের ভা?-ারিয়া সরকারী কলেজে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন। বুধবার ঢাকা কলেজ, নড়াইল সরকারী কলেজে হয়েছে প্রতিবাদ সভা। এদিকে, মাউশি কর্তৃপক্ষ ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে সংস্থার পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক সামছুল হুদাকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সদস্যরা হলেনÑ সংস্থার উপপরিচালক ওসমান ভূঞা ও সহকারী পরিচালক হেমায়েত উদ্দিন হাওলাদার। এছাড়াও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যাপক সামছুল হুদা জানান, তদন্তকাজ শুরু করতে তিনি শুক্রবার (আগামীকাল) পিরোজপুর যাবেন। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার সঙ্গে কথা বলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া ও এর সম্মানজনক সমাধানের বিষয়ে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, এ ধরনের ঘটনায় শুধু অফিস ডেকোরামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়নি, সমগ্র শিক্ষক সমাজকে অপমান করা হয়েছে। আমরা এই ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছি। আগামী ২৬ তারিখ সারাদেশের সরকারী কলেজ ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ক্যাডার কর্মবিরতি পালন করবে। আগামী ১ মে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির জরুরী সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে ওই বিষয়ে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
×