ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

গার্মেন্টসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান মার্কিন রাষ্ট্রদূতের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের প্রাপ্য সম্মান ও কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নারীর ক্ষমতায়নে পোশাক শিল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দুই বছর পূর্তিতে একটি প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে প্রবন্ধটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে মার্শা বানিকার্ট বলেন, দু’বছর আগে রানা প্লাজার ভবন ধসের ঘটনা ঘটে, সেই দুর্ঘটনায় চাপা পড়ে মারা যায় শ্রমিকরা, সারা বিশ্বের নজর এসে পড়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে। মাত্র একদিনেই বাংলাদেশ হারায় এগারো শ’র বেশি প্রাণ। আজকে আমরা সেই সব শ্রমিকদের স্মরণ করছি এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে এক হয়ে আমরাও শোক পালন করছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা যখন ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, আমরা সেই বাংলাদেশকে দেখিÑ যার শ্রমিকেরা, কর্মকর্তারা এবং সরকার বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের পাশাপাশি এক সঙ্গে কাজ করছে, যাতে এরকম ট্র্যাজেডি আর না ঘটে। এক সঙ্গে মিলে আমরা উন্নততর এবং অধিকতর উৎপাদনশীল তৈরি পোশাক শিল্প খাত গড়ে তুলছি এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরছি যে, ব্যবসার সফলতা আর শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা হাতে হাত ধরে চলে। এ ধরনের কুখ্যাত কারখানা দুর্ঘটনা কেবল যে বাংলাদেশেই ঘটেছে তা নয়। নিজ দেশের কারাখানা দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে মার্শা বার্নিকাট বলেন, ঊনিশ শ’ এগারো সালের পঁচিশে মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ট্রায়াঙ্গেল শার্ট তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল এক শ’ ছেচল্লিশ জন শ্রমিক। রানা প্লাজার শ্রমিকদের মতো, ট্রায়াঙ্গাল শার্ট কারখানা দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিল অনেক তরুণ নারী শ্রমিক, যারা প্রথমবারের মতো কাজ করে উপার্জন করতে এসেছিল। রানা প্লাজার ভবন ধসের ঘটনার মতো ট্রায়াঙ্গাল শার্ট কারখানার আগুনও প্রতিরোধ করা যেত। ওই কারখানার মালিকেরা সিঁড়ি এবং বাইরে বের হয়ে যাওয়ার দরজাগুলো তালা দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিল, যার ফলে অনেক শ্রমিকই আগুনে পুড়তে থাকা ভবনটি থেকে বের হয়ে যেতে পারেনি। বরং জীবন বাঁচানোর জন্য নারী শ্রমিকরা যখন আট, নয় এবং দশ তলা থেকে লাফিয়ে পড়ছিল আর মৃত্যুবরণ করছিল তখন দর্শকদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এই দুর্ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে, যার মধ্যে রয়েছে কারখানার নিরাপত্তা মানদ- উন্নয়নের জন্য এবং আন্তর্জাতিক নারী শ্রমিক ইউনিয়নকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন। ফ্রান্সেস পার্কিন্সের নেতৃত্বে জননিরাপত্তা বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই পার্কিন্স-ই পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শ্রমমন্ত্রী হন। এই কমিটি সুনির্দিষ্ট সমস্যাগুলো শনাক্ত করে এবং নতুন আইনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেÑ যার মধ্যে ছিল এক কর্ম সপ্তাহে সর্বোচ্চ কাজের সময় কমিয়ে আনার জন্য একটি বিল। কারখানাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। নিউইয়র্ক শহরের দমকল বাহিনীর প্রধান জন কেনলন তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, আগুনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এমন দু’শ’রও বেশি কারখানা চিহ্নিত করেছে তার বিভাগ। নিরাপত্তা ত্রুটিগুলো সারিয়ে তুলতে বাংলাদেশেও একই ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২,৭০০ এর বেশি পোশাক শিল্প কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে- সেগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভবন কাঠামো ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখার জন্য এবং বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় ৩২টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ শ্রম অধিকার মানদ- যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্বের পরিচয় দিতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত ৩০০টির বেশি ইউনিয়ন নিবন্ধিত হয়েছে এবং একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে যেখানে গিয়ে ইউনিয়নসমূহ অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারে। এই সকল ইউনিয়নের সদস্যরা যেন সমষ্টিগতভাবে দর-কষাকষি করার তাদের যে আইনগত অধিকার তা প্রয়োগ করতে পারে, বহিষ্কার বা হয়রানি হওয়ার ভয় থেকে মুক্ত থাকতে পারে এবং অবৈধ প্রতিশোধের বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাদের আইনী অধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারকে উৎসাহিত করছি। আমরা শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব যেন সংঘাতে রূপ না নেয় সেজন্য তা প্রতিরোধে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকেও স্বাগত জানাই। দুর্ঘটনা থেকে পরিবর্তন শুরু হতে পারে এবং তাই হওয়া উচিত। পরিদর্শকরা যাতে প্রতিটি কারখানা পরিদর্শনের সুযোগ পায় এবং সেসব কারখানাগুলোতে যেসব সমস্যা চিহ্নিত করা হবে সেগুলো সংশোধন নিশ্চিত করা ‘বিজিএমইএ’ এবং সরকারের দায়িত্ব। কারখানার এসব সংস্কার কাজ উৎপাদনশীলতাও বাড়াবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও নারীর ক্ষমতায়নে তৈরি পোশাক শিল্প যে অসামান্য অবদান রেখেছে তা মাথায় রেখে এই খাতের ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের রফতানির লক্ষ্যমাত্রার পরিকল্পনা এই জাতির উন্নয়নের লক্ষ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
×