ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জানুয়ারি থেকে বিদ্যুত সরবরাহের অনুরোধ বেপজার

ছয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

ছয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্যোগ

রশিদ মামুন ॥ দেশের ছয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর জন্য আগামী জানুয়ারি থেকে বিদ্যুত সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিদ্যুত বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ সংক্রান্ত বৈঠকের পর বেপজা বিদ্যুত বিভাগকে এ অনুরোধ জানায়। এতে চীন, জাপান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েতের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের ছয় জেলায় দুই হাজার ২৫৭ একর জমিতে গড়ে তোলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যুত এবং উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসে বিদ্যুত বিভাগে অফিস করার সময়ও সকল অর্থনৈতিক অঞ্চলের গ্রাহককে বিদ্যুত এবং গ্যাস সংযোগ প্রদানের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এদিকে আজ বিদ্যুত বিভাগ দেশের শিল্প কারখানায় বিদ্যুত সংযোগ প্রদানের জন্য এক বৈঠক আহ্বান করেছে। বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির হিসেবে এখন দেশে ১০ হাজার শিল্প কারখানার আবেদন রয়েছে বিদ্যুত সংযোগের। বিদ্যুত বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী এক মেগাওয়াটের নিচের যে কোন সংযোগ দিতে পারে বিতরণ সংস্থা। তবে এক মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের লোড হলে বিদ্যুত বিভাগের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ছয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আগামী জানুয়ারি থেকে বিদ্যুত সরবরাহ চাওয়া হয়েছে। যে ছয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বিদ্যুত সরবরাহ চাওয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে মৌলভী বাজারের শেরপুরের শ্রীহাট্টা অর্থনৈতিক অঞ্চল, জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য গাজীপুরের শ্রীপুর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য আনোয়ারায় দ্বিতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল, মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আবদুল মোমেন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং নরসিংদীর পলাশে এ কে খান এ্যান্ড কোম্পানি অর্থনৈতিক অঞ্চল। দেশের ছয় জেলায় দুই হাজার ২৫৭ দশমিক ৩১ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এই শিল্প অঞ্চলে ২০১৬ সালে ৪৫ মেগাওয়াট, ২০১৭ সালে ২৪৫ মেগাওয়াট এবং ২০১৮ সালে ৪৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুত সরবরাহের জন্য বিদ্যুত বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। বেপজা থেকে বিদ্যুত বিভাগে প্রেরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে আগামী জানুয়ারি থেকে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে অধিকাংশ বিশেষ অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। এর পরের বছর ২০১৮ তে পুরোদমে শিল্প কারখানা এসব এলাকায় চালু হবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় প্রতি ১০০ একর জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। তবে শুরুতে এসব বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য পাঁচ মেগাওয়াট করে বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সূত্র জানায়, ২০১০ সালে গ্রহণ করা নীতিতে দেশের প্রত্যেক বিভাগে একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করা হবে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখানে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে চীন, জাপান, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েত বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় উঠবে বাংলাদেশের নাম। এ সময় বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই অঞ্চল থেকে বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলারের শিল্প পণ্য রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপস্থাপনায় বলা চীন, থাইল্যান্ড এবং আসিয়ানভুক্ত অন্যান্য দেশে ক্রমবর্ধমান শ্রমিক মজুরি এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে তারা দ্বিতীয় কোন দেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কৌশলগত কারণে ভাল রয়েছে। এই ছয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে মংলার জমি বেপজার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে একে খানকে প্রাকযোগ্যতা যাচাইয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে। আবদুল মোমেনকে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। মিরেরসরাই অঞ্চলে ৯০০ একর খাস জমি প্রতীকী দরে বেপজার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
×