ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপাচার্য নিয়োগে-

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

 উপাচার্য নিয়োগে-

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের গুরুত্ববহ স্থান। গবেষণা ও মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি বিস্তারের প্রতিষ্ঠান। গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে এসব প্রতিষ্ঠান বেহাল অবস্থায়। যথাযথভাবে পরিচালনার ব্যাপারে অদক্ষতার কারণে সৃষ্টি হয় সমস্যা। নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ঘাটতির অশুভ প্রভাব পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকা- স্পষ্ট করে যে, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা যেমন পদে পদে; তেমনি অরাজকতাও। ছাত্র আর শিক্ষক মিলিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়। সহযোগিতায় আছে প্রশাসনিক আরও কর্মকর্তা-কর্মচারী আর এদের পরিচালনার, নেতৃত্বের প্রধান ভার উপাচার্যের। ক্যাম্পাস হচ্ছে মূলত অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার। সেখানে উপাচার্যের ভূমিকাই প্রধান। সবার অভিভাবক তিনি। উপাচার্যের ব্যর্থতার, অযোগ্যতার, অদক্ষতার কারণে বিক্ষুব্ধ পরিবেশ ও শিক্ষা-দীক্ষাহীনতার অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে, হয়েছেও। এমন অবস্থা ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক তথা দেশের জন্য মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব যাঁর, তিনি যদি নেতৃত্বদানের যথাযোগ্য গুণাবলীবিহীন হন, সর্বজনগ্রাহ্য না হতে পারেন, নীতি-নৈতিকতার প্রকাশ ঘটাতে না পারেন তবে অসুস্থ পরিবেশ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও ছাত্র ধর্মঘট, ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের বিরোধ, ক্লাস বর্জন, হানাহানি, মারামারি, বন্দুকযুদ্ধ, প্রতিপক্ষকে হত্যার ঘটনা গত কয়েক দশক ধরেই ঘটে আসছে। এখনও কোথাও কোথাও উপাচার্যের দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা, জামায়াত-শিবির ও সাম্প্রদায়িকতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ঘটনা সংবাদপত্রে ছাপা হয়। একালে যোগ্য বা ভাল শিক্ষক হলেই উপাচার্য হওয়ার উপযুক্ত- এমন বিবেচনা করা হয় না। সেই শিক্ষকই এই পদে উপযুক্ত, যিনি ছাত্র-শিক্ষকদের শিক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন। জ্ঞানে-গুণে, মানে-সম্মানে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। কিন্তু প্রকাশিত প্রতিবেদন স্পষ্ট করে যে, অনেকেই অশোভন আচরণে অভ্যস্ত, প্রতিষ্ঠানসহ কারিকুলাম পরিচালনায় অদক্ষ, নীতিবিবর্জিত, শিক্ষার প্রসারে উদাসীন, রাজনৈতিক দলের প্রতি নিজ স্বার্থে আনুগত্য প্রকাশ করে থাকেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানে ও শিক্ষকদের স্বাধীন মুক্তচিন্তার মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ প্রণয়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অধ্যাদেশের প্রায় সব ধারাই দু’দশকের বেশি লঙ্ঘিত হয়ে আসছে। স্বেচ্ছাচারী ও নতজানু প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে বিএনপি- জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের দিয়ে ১৯৯১ সালে অধ্যাদেশ লঙ্ঘন শুরু। তবে তা ফিরিয়ে আনায় কোন উদ্যোগ নেন না প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রমনা শিক্ষকরাও। অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য সর্বোচ্চ পদ। সিনেটে নির্বাচিত তিনজনের প্যানেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর বা রাষ্ট্রপতি চার বছরের জন্য একজনকে নিয়োগ দেন। কিন্তু ১৯৯১ থেকে সিনেটে আর কেউ নির্বাচিত হননি। ওই সময় থেকে ব্রিটিশ আমলের এক ঠুনকো আইন দেখিয়ে এই পদে বসছেন দলীয় বা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট জনরা। প্যানেল প্রথায় উপাচার্য নিয়োগ না করে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় ২০০৮ সালের মার্চে। বলা হয়েছিল এতে স্বচ্ছতা আসবে। দূর হবে দলীয়করণ। কিন্তু সেসব কাগজে আর মুখের ভাষাতেই বিদ্যমান। স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হওয়ার কারণ, অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবছর যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা, একযুগেরও বেশি তা হয় না। তিন উপাচার্যের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে তিনটি তদন্ত কমিটি করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। আবার উপাচার্য অপসারণ দাবিতে শিক্ষকদের একযোগে পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্যদের যেসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত- অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য নিয়োগ দান বহাল রাখা।
×