ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২০৫০ সালের মধ্যে ॥ কার্বনমুক্ত বিশ্ব চাই

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

২০৫০ সালের মধ্যে ॥ কার্বনমুক্ত বিশ্ব চাই

এক দল শীর্ষ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার প্রতিশ্রুতি পালন করতে সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘২০৫০ সালের মধ্যে কার্বনশূন্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করাই সরকারগুলোর লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুধবার ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে ঐ নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্থ লীগ এক বিবৃতিতে বলেছে, মানবজাতিকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রভাব এড়াতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির জানা মজুতের তিন-চতুর্থাংশ অবশ্যই ভূগর্ভেই রাখতে হবে। খবর এএফপি, বিবিসি ও গার্ডিয়ার অনলাইনের। আর্থ লীগ বিবৃতিতে বিপজ্জনক বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এড়ানোর প্রতিশ্রুতি পালন করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানায়। আর্থ লীগে রয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের অর্থনীতি বিষয়ক কয়েকটি প্রভাবশালী রিপোর্টের প্রণেতা নিকোলাস স্টার্ন, জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের উপদেষ্টা ও জলবায়ু বিজ্ঞানী হ্যান্স জোয়াচিম শেলনুবার এবং মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফরি স্যাকস। গ্রুপটি বিবৃতিতে চলতি বছর ডিসেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালই ‘মানবজাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ’ হবে বলে সতর্ক করে দেয়। ঐ সম্মেলনের আলোচ্যসূচী প্রসঙ্গে গ্রুপটি অর্থনৈতিক কারণজনিত কার্বন গ্যাস নির্গমন ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য ডিগ্রীতে নামিয়ে এনে বিশ্বের উষ্ণায়নকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে সীমিত করে দেয়ার লক্ষ্য গ্রহণের দাবি জানানো হয়। গ্রুপটি ঐ ‘ধরিত্রী বিবৃতি’তে বলেছে, যদি উষ্ণায়নের মাত্রাকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে দিতে না হয়, তাহলে জীবাশ্ম জ্বালানির জানা মজুতের তিন-চতুর্থাংশকে অবশ্যই ভূগর্ভে রেখে দিতে হবে। ঐ ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসই হবে “নিরাপত্তা সীমা” বলে সরকারগুলো একমত হয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের সভ্যতা বিশ্বের উষ্ণায়ন, জীববৈচিত্র্যের অবক্ষয় ও প্রাকৃতিক সম্পদের বিকাশের কারণে বর্তমানে যেমন অস্তিত্বগত ঝুঁকির মুখে পড়েছে, তেমন ঝুঁকি আর কখনও দেখা যায় না। আর্থ লীগ চেয়ারম্যান ইউহান রকস্ট্রোম ও জলবায়ু বিজ্ঞানী ব্রায়ান হসকিনস লন্ডনে বিবৃতিটি প্রকাশ করেন। রকস্ট্রোম বলেন, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৫ এক ভাগ্য নির্ধারণী মুহূর্ত। বিশ্বের উষ্ণায়নের মাত্রা ২ দশমিক শূন্য ডিগ্রী সেলসিয়াসের (৩ দশমিক ৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) নিচে রাখার সুযোগ কোনমতে উন্মুক্ত আছে। এক নিরাপদ, বেশ স্থিতিশীল জলবায়ু ম-িত ভবিষ্যতে উত্তরণের সুযোগ এখনও রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন রোধের ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব ব্যর্থ হলে ২১০০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার শতকরা ১০ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। রকস্ট্রোম বলেন, এটি এক বৈজ্ঞানিক দুঃস্বপ্ন। পৃথিবী বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হোক এটা আপনারা চান না। এটি একেবারে অচিরেই ঘটতে পারে; আমাদের আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস করা উচিত। তিনি স্বীকার করেন যে, গ্রুপটির দাবি এবং প্যারিসের বৈশ্বিক উষ্ণায়ন শীর্ষ সম্মেলনে কি অর্জিত হতে পারে, এ দুইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান রয়েছে। কারণ কয়েকটি বড় বড় শক্তি এরই মধ্যে প্রত্যাশাকে খাটো করে দেখাচ্ছে। রকস্ট্রোম বলেন, আমাদের যেখানে থাকা উচিত আদৌ আমরা সেখানে নই। স্যাকস বলেন, প্যারিসে অনুষ্ঠেয় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলন বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার সর্বশেষ সুযোগ। ঐ বিবৃতিতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাজ্যের প্রফেসর স্যার ব্রায়ান হসকিনস বলেন, কার্বনশূন্য সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বিশ্বে কার্বন নির্গমন ২০২০ সালের দিকে সর্বোচ্চ মাত্রায় যাওয়া এবং দ্রুত পড়ে গিয়ে ২০৫০ সালের দিকে প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর উচিত নেতৃত্ব গ্রহণ করা এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সাহায্য করা।
×