ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গার্মেন্টস মালিকদের দুর্নীতিতে কমপ্লায়েন্স ঘাটতি বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ এপ্রিল ২০১৫

গার্মেন্টস মালিকদের দুর্নীতিতে কমপ্লায়েন্স ঘাটতি বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রফতানিতে শীর্ষে থাকা পোশাক শিল্প মালিকদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ দায়িত্বে অবহেলার কারণে কমপ্লায়েন্স ঘাটতি বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি। সংস্থাটির করা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উদ্যোক্তারা অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করছেন। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির করা এ প্রতিবেদনটি প্রত্যাখান করেছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। টিআইবি বলছে, সরকার ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে এ শিল্পে দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। এক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের ১০৮ কোটি টাকা এখনও অব্যবহৃত রয়েছে। বিজিএমইএ বলছে, এটি সঠিক নয়। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ ধরনের প্রতিবেদন করা হতে পারে। শুধু তাই নয়, এখন নতুন মজুরি বোর্ড অনুযায়ী বেতন প্রদান, নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি এবং শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬টি শর্তের সবগুলো পূরণ করা হয়েছে। এছাড়া কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট এ্যাকোর্ড এবং এ্যালায়েন্স সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। তবে এ শিল্পখাত নিয়ে বরাবরই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। এ প্রতিবেদনটি তারই অংশ কি-না সেটা খতিয়ে দেখে বিজিএমইএ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। মঙ্গলবার তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গত এক বছরের গৃহীত পদক্ষেপের ওপর এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রাজধানীর ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে নিজস্ব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে টিআইবির এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, খরচ বৃদ্ধির পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে গত এক বছরে ৩০ শতাংশ কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। এছাড়া কার্যাদেশ বাতিল ও কমপ্লায়েন্ট ঘাটতির অজুহাতে ২২০টি মাঝারি ও ক্ষুদ্র আকারের কারাখানা বন্ধ হয়েছে। প্রায় এক থেকে দেড় লাখ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির সহকারী কর্মসূচী ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা। পরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল ও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তবে এ প্রতিবেদনটি তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ্য হয়েছে। গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে এ শিল্পের আরেক সংগঠন বিকেএমইএ এবং বিটিএমইএ। বিজিএমইএয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, টিআইবির বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনে পোশাক শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখনও কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। টিআইবির করা প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএয়ের সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের করা এ প্রতিবেদনটি সঠিক নয়। সংস্থাটি দেশের কোন গার্মেন্টস পরিদর্শন করেছে বলে মনে হয় না। এমনকি এ বিষয়ে সংস্থাটি বিজিএমইএয়ের সঙ্গেও কথা বলেনি। প্রতিবেদনটি এখনও বিজিএমইএয়ের হাতে আসেনি। আমরা এটি সংগ্রহের চেষ্টা করছি। আশা করছি, এটি পুরোপুরি দেখে বিজিএমইএ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হবে। তিনি বলেন, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এক নম্বর হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। মোট দেশজ উৎপাদনে এ শিল্পের অবদান ১০ ভাগ এবং মোট রফতানির ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাক ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এই ব্র্যান্ডিং নিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, এখন নতুন মজুরি বোর্ড অনুযায়ী বেতন, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট এ্যাকোর্ড এবং এ্যালায়েন্স সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয়, জিএসপি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লান তৈরি করে তাতে ১৬টি শর্ত জুড়ে দেয়। ওই শর্তগুলোর সবগুলো পূরণ করা হয়েছে।
×