ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

বদমাইশদের বিরুদ্ধে-

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২২ এপ্রিল ২০১৫

বদমাইশদের বিরুদ্ধে-

জিয়াউর রহমানকে আমরা পরাজিত করেছি এবং একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকেও আমরা পরাজিত করেছি। আমাদের জয়ের দাপটে এই দুজনই জামায়াতে ইসলামীর কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর প্রধান শত্রু বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন বামদল। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন বামদল বাংলাদেশে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করেছেন। এই স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতির ভিত্তি কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত। এই তিনটি শ্রেণী, তাদের সারা অবয়বে হাসি নেই। কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্তকে শোষণ করেছে পাকিস্তানের রাজনীতি, তাদের মুখ থেকে হাসি কেড়ে নিয়েছে, বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন বামদল চেয়েছে দুঃখী মানুষকে সুখী করতে, তারা চেয়েছে দুঃখী মানুষকে সুখী করতে, তারা চেয়েছে দুঃখের বদলে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে। এই রাজনীতি থেকে তারা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই দুঃখী মানুষগুলোর মর্যাদার সঙ্গে জীবন যাপনের জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র দরকার, পাকিস্তান আমলে এই দাবির বিরোধিতা করেছে জামায়াতে ইসলামী। এই বিরোধিতার ভিত্তিতে কাজ করেছে ধর্ম, ব্যবহৃত হয়েছে ইসলাম; ইসলাম ধর্ম এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র এই সব দুঃখী মানুষের মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের জন্য আলাদা একটা রাষ্ট্র দরকার, এই দাবি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান রাষ্ট্র ও সেনাবাহিনী এবং ব্যবহৃত ইসলাম ধর্ম। এই দুঃখী মানুষগুলো, এই শোষিত মানুষগুলো পূর্ববাংলায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত কলোনির বাসিন্দা। সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী (পরবর্তী নামকরণ বিএনপি) কলোনি রক্ষার জন্য দরকার একটা মতাদর্শের, তার এই মতাদর্শ ইসলাম। সেনাবাহিনী এই মতাদর্শ রক্ষা করার সমস্ত শক্তি এবং জামায়াতে ইসলামী, কিংবা অপর নাম বিএনপি এই মতাদর্শ রক্ষা করার সিভিল শক্তি। এই দুই ইনস্টিটিউশনের লক্ষ্য : কলোনি রক্ষা করা। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তানী কলোনি রক্ষা করার জন্য যুদ্ধ করেছে। পাকিস্তান পরাজিত হবার পর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে পাকিস্তানী কলোনি রক্ষা করার জন্য বিএনপির সঙ্গে একত্র হয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই প্রক্রিয়ায় কলোনিয়াল মতাদর্শ টিকে থেকেছে। প্রথম প্রক্রিয়া হচ্ছে : সেনাবাহিনীর দেশ শাসন করার অধিকার। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে : সিভিল রাজনীতির জন্য সশস্ত্রতার বোধ প্রবেশ। জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি প্রথম প্রক্রিয়া এবং দ্বিতীয় প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। যেকোন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে একটা বদমাইশির অংশ থাকে। জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি এই বদমাইশির অংশ। জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সমাজব্যবস্থার মধ্যকার বদমাইশির অংশ থেকে রাজনৈতিক সাহায্য পেয়েছেন। জিয়াউর রহমান থেকে পরবর্তীরা এবং জামায়াতে ইসলামী ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনা করার অধিকার থেকে সাধারণ মানুষকে হটিয়ে দিয়ে বদমাইশি, হত্যা-ভ-ামিকে রাজনীতির অন্তঃসার করেছেন। ফলে ধর্ম থেকে অন্তর্হিত হয়েছে কল্যাণের বোধ, সমাজ থেকে লুপ্ত হয়েছে সেই ভ্রাতৃত্বের বোধ, রাষ্ট্র থেকে উধাও হয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে মোকাবেলা করার বোধ, শিক্ষা থেকে সরে গেছে জ্ঞানের বোধ, ইতিহাস থেকে বিলীন হয়েছে ভবিষ্যত প্রণয়ন করার বোধ। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, ২১ আগস্ট আইভি রহমানকে হত্যা, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা : এসবই বদমাইশির ধারাবাহিক অংশ। রাজনৈতিক বদমাইশি মেনে নেয়া যায় না। জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি জন্ম থেকে খুনের রাজনীতি শুরু করেছে। জিয়াউর রহমানরা খুনের রাজনীতির ছবক দিয়েছেন। এবং জামায়াত থেকে রাজনীতি এবং খুন সমার্থক হয়ে উঠেছে, জিয়াউর রহমানরা যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন সেনাবাহিনীর সাহায্যে নষ্ট করে দিয়েছেন। গণতন্ত্র ও সামরিক শাসন পাশাপাশি চলতে পারে না। প্রজাতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের অধিকার পাশাপাশি চলতে পারে না। এভাবে গণতন্ত্র নষ্ট করে, প্রজাতন্ত্র বিপন্ন করে জিয়াউর রহমানরা যে শাসন ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন, সেই নষ্টামির জের এখনো অব্যাহত। এই রাজনৈতিক দুঃশাসন, প্রজাতন্ত্র ও গণতন্ত্র খুন করার চক্রান্তে মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নষ্টামির জিয়াউর রহমানরা প্রকাশ্যে সমর্থন লাভ করেছে জামায়াত থেকে। জিয়াউর রহমানরা কাছে নেয়নি, তারা কাছে পেয়েছে জামায়াতকে (এবং বিএনপিকে) এভাবে জামায়াত এবং জিয়াউর রহমানদের রাজনৈতিক দুঃশাসন এক এবং অভিন্ন হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামী ও জিয়াউর রহমানদের বিএনপি এক শরীরে দুই মুখে পরিণত হয়। জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধকালীন খুনখারাবি ও যুদ্ধপরবর্তী খুনের তা-ব বিএনপির রাজনীতি হয়ে ওঠে। খুন রাজনীতির বিষয় এবং খুনীরা রাজনৈতিক নেতা : গোলাম আযম ও জিয়াউর রহমান একই মুখের দুই অংশ, সেজন্য যুদ্ধাপরাধীদের দুই দল এক হয়। আবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে সাদা চামড়াদের রাষ্ট্রগুলো স্বচ্ছতার দাবি তুলতে থাকে। তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার বিরোধিতা করা শুরু করে জামায়াত এবং বিএনপি : সাদা চামড়াদের বিচারের প্যানেলে নেই বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বচ্ছ নয় কথা বলতে থাকে সাদা চামড়াদের রাষ্ট্রগুলো এবং তাদের আশ্রিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে রাজনেতিক দল, সংগঠন ও ঐ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা এ দেশের মানুষগুলো খুন করেছে, সেই খুনী অপরাধীদের বিচার করা যাবে না বা সর্বোচ্চ দ- দেয়া যাবে না, এমন অদ্ভুত হাস্যকর কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে জামায়াত এবং জিয়াউর রহমানদের রাজনৈতিক দল বিএনপি। আমাদের বিচার করবই, সেখানে বিদেশী ব্যক্তি ও সংগঠন ভাড়া করে, আমাদের বিচার ব্যাবস্থা ব্যহত করার যে কোন চেষ্টা প্রতিহত করব। তেমনি হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী ও জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে জ্ঞানশূন্য, মেধাশূন্য, পশ্চাৎপদ দেশ করার যে চক্রান্ত চালাচ্ছে তাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে বাংলাদেশের সাহসী মানুষরা। অধিকার নামক একটি এনজিও সংগঠন এই চক্রান্তে শরিক হয়ে সহস্র সহস্র মানুষ হত্যার অভিযোগ তুলে এখন হালে পানি পাচ্ছে না বিদেশের কাছে আদরণীয় এই সংগঠনটি। যে কোন সংগঠনের প্রথম ও প্রাথমিক দায়বদ্ধতা বাংলাদেশের কাছে। মিথ্যা প্রচার করে বিদেশীদের মনোরঞ্জন করা যায়, কিংবা জামায়াতে ইসলামী, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দল, হেফাজতে ইসলামের অর্থে পুষ্ট হওয়া যায়; কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে টাকা খেয়ে মিথ্যা প্রচারের কানাকড়ি দাম নেই। বাবুনগরী কাঁদতে কাঁদতে পুলিশের কাছে অর্থপ্রাপ্তির স্বীকারোক্তি করেছেন। হেফাজতের বাবুনগরী, অধিকারের আদিলুুর রহমান, জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক দলের মধ্যে চারিত্রিক স্খলনের কোথায় জানি মিল আছে। গরিব দেশকে সব সময় টাকা দিয়ে কেনা যায় না। দুঃখী মানুষরা রুখে দাঁড়ায় নিজেদের সার্বভৌম করার জন্য। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব এখানেই। লেখক : কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ
×