ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখুন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২১ এপ্রিল ২০১৫

সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘নিখোঁজ’ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ-উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দিয়ে এ বিষয়ক রুলের নিষ্পত্তি করেছে হাইকোর্ট। তাঁকে খুঁজে পাওয়া গেল কি-না সে বিষয়ে আগামী ছয় মাসের প্রতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে পুলিশকে। ঢাকায় অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক কারখানা (বিল্ডিংয়ের) তালিকা দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চগুলো এ আদেশ প্রদান করেছে। অন্যদিকে, সুপ্রীম-কোর্টের এক আইনজীবী পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেছেন। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রুলের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে দ্বৈত বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়। আবেদনকারীর পক্ষে এ বিষয়ে শুনানিতে অংশ নেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বশিরউল্লাহ। এছাড়া সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করার অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রতি মাসে আদালতে দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত আদেশে বলেছে, আগামী ছয় মাস অর্থাৎ এক মাস অন্তর এই প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এর মধ্যদিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে ছয় মাস অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে রুলের নিষ্পত্তি করে দিয়েছে হাইকোর্ট। আদেশে বলা হয়, প্রতি মাসের প্রথম দিন এই অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে। আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল বশিরউল্লাহ। সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের আবেদনে গত ১২ মার্চ এই রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। সালাহউদ্দিনকে কেন খুঁজে বের করে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেয়া হবে না- সরকারকে তা জানাতে বলা হয়েছিল। সেই রুলের ওপর দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত সোমবার এই আদেশ দেয়। হাসিনা আহমেদের অভিযোগ, গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। ‘নিখোঁজ’ হওয়ার আগে ফোন করে তাঁকে বিষয়টি জানানোরও চেষ্টা করেন এই বিএনপি নেতা। স্বামীর খোঁজ চেয়ে পরদিন রাতে গুলশান ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন হাসিনা। এরপর তিনি হাইকোর্টে গেলে আদালত ওই রুল জারি করে। সে অনুযায়ী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচটি প্রতিবেদন ও দুটি পুলিশ ডায়েরি ১৫ মার্চ আদালতে উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত জানুয়ারির শেষদিকে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর সালাহউদ্দিনের নামে হরতালসহ নানা কর্মসূচীর ‘গায়েবী’ বিবৃতি গণমাধ্যমে আসছিল। তবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছিলেন না এই রাজনীতিক। সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহউদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তাঁর স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর মুখপাত্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সালাহউদ্দিন। সে সময়ও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ঝুঁকিপুর্ণ কারখানা ॥ রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ পোশাক কারখানা (বিল্ডিংয়ের) তালিকা দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আলোচিত সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা মামলাসমূহের সর্বশেষ অবস্থা কী, সে বিষয়ে আদালতকে জানাতে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের করা রিট ও স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের দেয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের শুনানি সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি আব্দুর রবের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আগামী রবিবার তাদের এসব প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন। এছাড়া ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্লাস্টের পক্ষে এ্যাডভোকেট বরকত আলী, রাজউকের পক্ষে এ্যাডভোকেট কেএম সাইফুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আল আমিন। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, রানা প্লাজার ঘটনায় করা চারটি রিট ও স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের দেয়া একটি আদেশের শুনানি সোমবার হয়েছে। আদেশের পর সারা হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হাইকোর্টে জনস্বার্থে কয়েকটি রিট করা হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন বিষয়ে রুল জারিসহ সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্ট। তবে সময়মতো সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল না করায় সোমবার হাইকোর্ট সাভার থানার ওসি ও রাজউককে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। যৌন হযরানিকারীদের গ্রেফতার চেয়ে রিট ॥ পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। একই সঙ্গে রিটে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এ ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুপুরে এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ এ রিট দায়ের করেন। এ বিষয়ে ইউনুস আলী বলেন, একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার করার জন্যও আদেশ চাওয়া হয়েছে। আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপিসহ ছয়জনকে উক্ত রিটের বিবাদী করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেয়েদের যৌন হয়রানি করা হয়। পরে এ বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এর বিরোধিতা করে। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করে।
×