ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস নির্মূল ॥ যৌথ অভিযান চলবে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২১ এপ্রিল ২০১৫

জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস নির্মূল ॥ যৌথ অভিযান চলবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বসে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় তিনি এই নির্দেশ দেন। এছাড়া সিটি নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ সময় কয়েকজন মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী নীতিমালা অনুসরণ করে সিটি নির্বাচন নিয়ে সকলের কাজ করা দরকার। বিএনপির পক্ষে বেগম জিয়া প্রচারে নেমেছেন। সিনিয়র এক মন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে নগর কমিটিকে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। এর জবাবে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, নিয়মের মধ্যে থেকে আমার পক্ষে যা যা করার প্রয়োজন তা করছি। দলীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে তাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছি। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, যার যেটুকু সুযোগ আছে তিনি যেন সেটুকু করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের প্রার্থীদের পক্ষে যার যার ভূমিকা পালন করবেন। দলের বিজয়ের কথা সকলকে ভাবতে হবে। তবে আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। তাই কেউ এমন কোন কাজ করবেন না, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হয়। জয়-পরাজয় থাকবে। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারা বিজয়ী হবে। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযান চলবে। বিশেষ করে যেসব জেলায় বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধের সময় বেশি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার সময় যেসব জেলায় কোন ঘটনা ঘটেনি। আমি ওই সব জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী প্রতি জেলায় একটি করে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি করা হবে বলেও জানান। পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হওয়া ব্যক্তিদের কবর খুঁজে বের করে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভা কক্ষ থেকে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় তিনি এ কথা বলেন। ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিল ঢাকা ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের অফিসও। ভিডিও কনফারেন্সে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জেলাগুলোর উন্নয়ন ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অবহিত হন তিনি। তিনি বিভিন্ন জেলায় যেসব প্রকল্প চলমান রয়ছে তা দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার সময় যেসব জেলায় কোন ঘটনা ঘটেনি, ওই সব জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় যেন দেশের উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হতে না পারে সে জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে তাদের প্রতি নির্দেশ দেন। নাশকতা ও জঙ্গী কর্মকা- রোধে প্রশাসনকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী আরও যাতে না নিতে পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের কর্মসূচী আঁচ করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিগত তিন মাসের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা ৯২ দিনের অবরোধের ক্ষতি সরকার পুষিয়ে নিতে পারবে। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে কাজ করলেই আমরা এই তিন মাসের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। এতকিছুর পরও আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি সাত ভাগের নিচে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের সবার সম্মিলিত মেধা ও শ্রমেই উন্নয়নকাজগুলো যথাযথ সময়ে শেষ করতে পারব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য তার সরকার রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশপ্রেম নিয়েই তা করবেন। পাশাপাশি দেশবিরোধী যে কোন ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশে^র রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশে ধীরে ধীরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী কোন মানুষ যেন গৃহহারা না থাকে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, খাসজমিগুলো ব্যবহার করতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কোন কোন খাতে কী কী কাজ করা যায়, তা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, কোন জমি যেন পতিত পড়ে না থাকে। সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। তারা আন্দোলনের নামে এই ন্যক্কারজনক কর্মকা- চালিয়েছে। প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতো মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষের জন্যই তো রাজনীতি। কিন্তু যে রাজনীতিতে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয় সেটি কী রাজনীতি? সাধারণ মানুষকে তারা টার্গেট করে পুড়িয়ে মেরেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখবেন। সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদদের কোন ছাড় দেবেন না। বাংলার মাটিতে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। বিএনপি ও জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন এ ধরনের কর্মসূচী দিয়ে কী চেয়েছিলেন? তিনি নিজেকে গুলশান অফিসে অবরুদ্ধ করে রেখে সেখান থেকে ককটেল বোমা সরবরাহ করতেন বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতি জেলায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাবলম্বী দেশ গড়তে প্রতি জেলায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য কেউ প্রস্তাব দিলে সেগুলো অনুমোদন করা হবে। সুনামগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং ইনস্টিটিউট হওয়া একান্ত প্রয়োজন। মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। হাওড় এলাকার উন্নয়নে হাওড় বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুতের সুবিধা পায়নি যেসব এলাকা সেখানে সোলার প্যানেল দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সুনামগঞ্জে মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও করা যাবে। সরকার চায় না এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী থাক। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা হওয়া ব্যক্তিদের কবর খুঁজে বের করে চিহ্নিত করা ও যাদের নাম পাওয়া যাবে না তাদের জন্য নাম না জানা অনেক শহীদ লিখে চিহ্নিত করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
×