ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২১ এপ্রিল ২০১৫

ঢাকার দিনরাত

সাত দিন ঢাকার ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যেতে যেমন দেখেছি সাদা চোখে, তেমনি রূপকার্থেও বলা যাবে আনন্দ কান্না উৎসব ক্ষোভ বিক্ষোভের বৃষ্টি ও ঝড়ও প্রত্যক্ষ করেছে ঢাকা। সীমিত পরিসরে তার কতটুকুই বা শব্দবন্দী করা সম্ভব। তবু তা থেকে কিছুটা স্বাদ ও সৌরভ দেয়ার প্রচেষ্টা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে বেশি বাকি নেই। প্রার্থীদের বিচিত্র প্রচার এখন তুঙ্গে। তাতে ঢাকাবাসী কিছু বিনোদনের রসদও পাচ্ছেন। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরীতে শেষ পর্যন্ত বৈশাখী বৃষ্টি আসা-যাওয়া করতে শুরু করেছে। মিলছে সাময়িক স্বস্তি। সবচেয়ে বড় কথা হরতাল-অবরোধের অবসানে পহেলা বৈশাখ এসেছিল তরতাজা স্ফূর্তির বারতা নিয়ে। নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের শুরু বরাবরের মতো ছায়ানটের গান দিয়েই। সারাটা দিন ভালয় ভালয় গেলেও সন্ধ্যাবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রতিবাদ, ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত আছে। বৈশাখে শিউলি! শিউলি ফোটে শরতে- এ কথা প্রায় সবার জানা। আরও জানা যে বাসন্তী ডাঁটার ওপর শুভ্র সুগন্ধি পাপড়ির দারুণ এ ফুলটি ফোটে এক সন্ধ্যার জন্য। ভোরে সে ঝরে যায়, আর শিশির এসে তার পায়ে চুমু খায়। না, প্রকৃতি বন্দনা আমার উদ্দেশ্য নয়; বলতে চাইছি কেবল সাদৃশ্যের কথা। ফুল নয়, বলব পোস্টারের কথা। এমনটা দেখেছি আগে ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা মফস্বল শহরে পৌরসভার বেলায়। সার বাঁধা দড়ির ওপর সাঁটা থাকত ভোট প্রার্থীর ছবিঅলা পোস্টার। দেশের সর্ববৃহৎ নগরটিরও সমদশা প্রত্যক্ষ করেছিলাম শনিবার। এমনিতেই ঢাকা শহরের রাজপথে তার-বেতারের অভাব নেই। বিদ্যুত বা টেলিফোনের খুঁটির সঙ্গে ডজন ডজন তার এমনভাবে পেঁচিয়ে শূন্যে ঝুলতে থাকে যে পথচারী সতর্ক না হলে তাতে আটকে ধরাশায়ী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তিন-চার-পাঁচ স্তরের আড়াআড়ি দড়ি। এ যেন যত প্রার্থী তত দড়ি। পোস্টারে পোস্টারে ঢাকা পড়ে গেছে দৃষ্টিসীমানা। অনেকটা বিয়ে বাড়ির আমেজ যেন। শনিবার মধ্যরাতে হলো তুমুল বৃষ্টি। কাগজের পোস্টারগুলো ভিজে খসে ভূপাতিত হলো। লাখ লাখ পোস্টার এক রাতের ভেতর অদৃশ্য! তবে সব প্রার্থী তো সমান নন। দুয়েকজন বৃষ্টির ব্যাপারটা আগাম আঁচ করে লেমিনেটেড পোস্টারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এ যেন পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার। ফলে এ ধরনের পোস্টারগুলো শিউলি ফুলের নিয়তি থেকে মুক্ত থাকল। এক রাতে তার আয়ু ফুরল না। এতে পোস্টার রক্ষা হলো বটে, পরিবেশ রক্ষা হলো কি? অন্যরকম বৈশাখী ঝড় শুক্রবার ছুটির দিন ঢাকায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট খেলায় রীতিমতো অন্যরকম বৈশাখী ঝড় বয়ে গিয়েছিল। একসঙ্গে কয়েকখানা রেকর্ড গড়ে ফেলল টাইগাররা। ওয়ানডেতে জোড়া সেঞ্চুরি, দলগত সর্বোচ্চ রান এবং কোন জুটিতে সর্বাধিক রানÑ তিন খানা গর্বিত রেকর্ড। ষোলো বছর পর প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে হারানোর সুখটাই ভিন্নধর্মী। অনেকে মুজিবনগর দিবসে একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের ক্রিকেট টিমকে হারানোর মধ্যে ভিন্ন ধরনের তৃপ্তিলাভও করেছেন। এর দু’দিন পর রবিবারে এসে গেল সিরিজ জয়ের হাতছানি। আগের ম্যাচের তুলনায় আরও কোণঠাসা হলো প্রতিপক্ষ পাকিবাহিনী। পূরণ হলো প্রত্যাশা। বৈশাখে টাইগারদের ভিন্নধর্মী বৈশাখী ঝড় দারুণ উপভোগ করেছেন ঢাকাবাসী খেলার মাঠে গিয়ে। কোন কোন বোলার ঝড়ের গতিতে বল ছুড়ে দিয়ে পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের পরাস্ত করেন। আবার তামিম-মুশফিকরা বৈশাখী ঝড়ের কাছ থেকে প্রেরণা নিয়ে ব্যাটে ঝড় তুলে উপর্যুপরি হাঁকিয়েছেন চার-ছক্কা। সিরিজ জয়ের মহা আনন্দ খুব কি বেশি পেয়েছি আমরা? গানমেলা প্রথমবারের মতো ঢাকায় আয়োজিত হলো গানমেলা। ব্যান্ডগানসহ নানা গানের আসর নিয়মিতভাবেই বসে এই রাজধানীতে। তবে একনাগাড়ে দশ দিনব্যাপী পাঁচমিশালি গানের আয়োজন নতুনই বটে। গানের সিডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন এই গানমেলা থেকে। শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই মেলায় সিডি বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল বেশকিছু স্টল। চৈত্রের শেষদিন গানমেলায় গিয়েছিলাম প্রবীণ গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজীর আমন্ত্রণে। গান তো কেবল কণ্ঠশিল্পীর নয়, প্রথমতো এটি একজনকে লিখতে হয়। তারপর আরেকজনের সুর সংযোজনের পালা। তারপর সঙ্গীত পরিচালক সেটি তুলে দেন শিল্পীর কণ্ঠে। অনেক সময় সুরকারই সে দায়িত্ব পালন করেন। গানমেলায় গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সব পর্যায়ের ব্যক্তিরাই মিলিত হয়ে আনন্দ করার সুযোগটিকে সুন্দরভাবেই কাজে লাগালেন। নবীন গাইয়ে থেকে শুরু করে সুপারস্টার কণ্ঠশিল্পীরা প্রতি সন্ধ্যায় পরিবেশন করেন গান। যাদের জন্য গান সেই শ্রোতাদের উপস্থিতিও ছিল প্রচুর। খোলা আকাশের নিচে পাতা শত শত প্লাস্টিকের চেয়ার পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। চারপাশে দাঁড়িয়ে গান উপভোগ করার মতো মানুষেরও কমতি ছিল না। আয়োজকরা জানালেন এখন থেকে প্রতি বছরই গানমেলা হবে। অপ্রত্যাশিত ঢাকা দু’চোখের সামনের সৌন্দর্য বা কদর্যকে অনেক সময়ই সঠিক মাত্রায় চিনে ওঠা যায় না। সে জন্যে চাই নিবিড় অবলোকন। এই কাজটি করতে পারে দক্ষ আলোকচিত্রীর ক্যামেরা। ছবি তুলে আমাদের চোখের সামনে উপস্থিত করতে পারে। সেই ছবির দিকে তাকিয়ে আমাদের মনে হতে পারেÑ এ কী সত্য! ঢাকার দৃক গ্যালারির ‘অপ্রত্যাশিত ঢাকা’ শীর্ষক প্রদর্শনীর ছবিগুলো ঢাকাবাসীদের মনে প্রশ্ন গেঁথে দেবে। বসবাসের অযোগ্য এই ঢাকাতেই আমরা থাকি! ঢাকার রয়েছে হাজারো সমস্যা। তার থেকে প্রধান প্রধান সমস্যাকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে আলোকচিত্রমালার মাধ্যমে। সবগুলো ছবিই তুলেছেন তরুণ প্রজন্মের ফটোগ্রাফারেরা। এটি জাগো ফাউন্ডেশনের ‘আইয়্যাম ঢাকা’ শীর্ষক প্রচারের অংশ। ঢাকায় এখন দারুণ জোরেশোরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য নগরপিতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। কেউ কেউ এসেছিলেন। যারা আসেননি তাদের বাড়ির সামনে ছবিগুলো তুলে ধরার ব্যবস্থা নেবেন আয়োজকরা এমনটাই জানান ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকসান্দ। আগামীকাল থেকে সপ্তাহব্যাপী আবার ঢাকার ৭টি স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে এ ছবিগুলো। মধ্যরাতের শব্দদূষণ বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে। লেখার টেবিলে চমকে উঠলাম শব্দ শুনে। ভেবেছিলাম ছোটখাটো কোন ভবন ধসে পড়ল নাকি! তা নয়, ভবন গড়ার তৎপরতায় মাঝরাতে আমাদের এই সড়কের নীরবতা খান খান হয়ে গেছে। দুটো বোঝাই ট্রাক থেকে একদল নির্মাণ শ্রমিক নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের সামনের রাস্তার ওপরেই ইট নামাচ্ছে। একসঙ্গে আট দশজনের কর্মতৎপরতায়, ইটে-ইটে ঠোকাঠুকি লেগে শব্দ হচ্ছে। আশপাশের অন্তত চারটে বাড়ির প্রতিটি তলাতে এই শব্দ পৌঁছনোর কথা। যদি কোন ফ্লাটে কোন অসুস্থ শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি থাকেন, তবে তাদের কাছে এই শব্দ নিঃসন্দেহে পীড়াদায়ক বলে মনে হবে। কিছুক্ষণ দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে মধ্যরাতের এই কর্মযজ্ঞ হজম করলাম। না, কেউই কোন টুঁ শব্দ করলেন না। নগরবাসীদের এসব গা সওয়া, মানে কান-সওয়া হয়ে গেছে। শুধু কি আমাদের ফ্ল্যাটের সামনে? না, ঢাকার বিভিন্ন আবসিক এলাকায় (অনেক বাণিজ্যিক অঞ্চলেও) কোন না কোন সড়কে নতুন দালান উঠছে। এসব বহুতল দালানের কাজ চলে এক থেকে তিন বছর ধরে, আর দিন নেই রাত নেই যখন তখন ঘড়ঘড় ঘড়ঘড়, ঠাসঠুস, ধুমধাম, দ্রুমদ্রম, ডাডাডাডা বিচিত্র উচ্চমাত্রার ধ্বনি চলছে তো চলছেই। বালু সিমেন্ট মেশানো আর ছাদ ঢালাইয়ের সময় যে বিকট ও একটানা শব্দ হয় ততে আশপাশের মানুষের ত্রাহি দশায় পড়তে হয়। মধ্যরাতের শব্দদূষণের হাত থেকে মহানগরবাসীর পরিত্রাণ নেই। আমাদের আগের ফ্ল্যাটে পানির সংকট দেখা দিল। ওয়াসার পানির গাড়ির ঘন ঘন ডাক পড়তে লাগল আমাদের মহল্লায়। সরকারী হার তো নির্দিষ্ট, এক গাড়ি পানির জন্য ৫০০ নাকি ৭০০ দিতে হতো। কিন্তু চাইলেই ওয়াসার পানি পাওয়ার রহস্য বুঝলাম বাড়িঅলার অতিরিক্ত বিল মেটাতে গিয়ে। প্রতিবার গাড়ি আনার জন্য ড্রাইভার, ওয়াসার কর্মীকে ‘বখশিশ’ দিতে হতো পাঁচ শ’ টাকা করে। আসল কথা সেটা নয়, এলাকাবাসী রাস্তা খুঁড়ে পানির নতুন লাইন আনার সব বন্দোবস্ত পাকা করে ফেলল। রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু হতো রাত ১২টার পরে। পিচের রাস্তার ওপর শাবল-খুন্তির বাড়ি কী তীব্র বিশ্রি আওয়াজ তুলতে পারে সে অভিজ্ঞতা হলো। রাত দুটোয় আর স্থির থাকতে পারলাম না প্রথমদিন। প্রতিবাদ করায় সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে যেন থমকে দাঁড়াল। তারপর এক মোড়লকে ডেকে আনা হলো। তিনি হাঁক দিলেন, কাজ চলবে ফজরের আজান পর্যন্ত। দেখি কে সমস্যা করে। অগত্যা সেই লাগাতার অসহনীয় আওয়াজ মাথায় করেই ঘুমনোর চেষ্টা করেছিলাম। দিনের বেলার শব্দদূষণ নিয়ে অল্প করে হলেও বলা দরকার। ঢাকার রাজপথে হরেক রকম উচ্চ শব্দের ভেতর সবচেয়ে অসহনীয় মনে হয় এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। সাইরেন একটানা বেজে চলে, তার থামাথামি নেই। ঢাকার রাস্তার ওপর গাড়ির যে চাপ তাতে এক সিগনাল থেকে অন্য সিগনাল পর্যন্ত পেছনের গাড়িকে ওভারটেক করে এ্যাম্বুলেন্সের সামনে এগিয়ে যেতে অল্প পথই পাড়ি দিতে হয়। তাই সামনে চলা পাঁচ-দশখানাকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ-সঙ্কেত দেয়ার জন্য অতি উচ্চ অতি তীব্র শব্দে সাইরেন বাজানোর সামান্যতম যুক্তি নেই। এই সাইরেন শুনে বরং সুস্থ মানুষই অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম ঘটে। সুতরাং ঢাকার পাড়ায়-পাড়ায় গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কাছে পরবর্তী নির্বাচিত মেয়রের পক্ষে একটি নোটিশ পাঠানোর অনুরোধ করতেই পারে ঢাকাবাসী। এবং একইসঙ্গে মোটরসাইকেলগুলোর হর্নের ব্যাপারেও একটা কার্যকর অভিযান চালানো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ফেসবুকে ঢাকার কড়চা এই অংশে আমরা ঢাকার আলোচিত একটি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে দেয়া পোস্ট/স্ট্যাটাস তুলে ধরি। বর্ষবরণ উৎসবের ঘৃণিত ঘটনাটির পর নারীদের ভেতর সবচেয়ে যারা সরব তাদের ভেতর আছেন লেখকÑ এ্যাক্টিভিস্ট জাহানারা নুরী। তাঁর লেখা থেকে তুলে দিচ্ছি : “পহেলা বৈশাখ আমার ওপর আঘাত মানে আমার সংস্কৃতির নতুন নতুন বিনির্মাণের ওপর আঘাত। আমি নারী। আমিই বাংলার প্রগতির ধারাজল। আমিই রাঙ্গা পাড় দুধ সাদা শাড়ি। আমি অরুণিমা টিপ সিঁদুর, আমিই এলোচুল। আমি ছিলাম ঘরে। ছিলাম তোমার মন্দিরে। আমি ছিলাম তোমার হৃদয়ে। নববর্ষে আমি বেরিয়ে পড়ি দেশের বুকের ভেতর। পহেলা বৈশাখ তাই আমার ভেতর ঈশ্বরীর উদ্বোধন। আমি শামিল হই আমার দেশের মানুষের জনস্রোতে। আমি সত্যিকার অর্থে দেশের মেয়ে হয়ে উঠি, বাংলার পাখি, ফুল লতাপাতা, কোকিল কিম্বা চড়ুই অথবা চপলা দুহিতা হয়ে উঠি। পহেলা বৈশাখে আমি লালন, আমিই সুফী। পহেলা বৈশাখে বাবাকে লুকিয়ে আমি তোমার ভালবাসা। ভাইয়ের আহ্লাদ, মায়ের শাসানী চোখ। পহেলা বৈশাখে আমি শুধু রবীন্দ্রনাথ, শেষের কবিতা, রুদ্রর গান, জীবনানন্দর চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, আবুল হাসানের রাজা যায় রাজা আসে, কিম্বা হাসান আজিজুল হকের জীবন ঘষে আগুন। আমাকে আহত করে বৈশাখকে হত্যা করতে চাও, পারবে না। বসন খুললেই নারী আহত হয় না। আহত হয় তোমাদের মনুষ্যত্ব, উন্মুক্ত হয় তোমাদের ভেতরকার দগদগে ঘা। এই দেশের দীর্ঘ ইতিহাস বলে অতীতের সকল সভ্যতাই এই পলি মাটির সঙ্গে আপোষ করেছে, মাটি আপোষ করেনি কোনও কুচক্রী ক্ষমতার বাহারি রংদার জোব্বা কিম্বা উষ্ণীষের সঙ্গে। যেদিকেই তুমি আমার মনোযোগ নিয়ে যেতে চাও না কেন এই মাটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে যে তার বিচার চলবে। রাজপথে আছি। আমার নববর্ষের বাহারি সাজ কখনও পহেলা বৈশাখী মেলা হবে কখনও জাগরণ মিছিল। হোক প্রতিরোধ বাঙালীর দেশীয় সংস্কৃতি বন্ধের অশুভ পাঁয়তারার। হোক প্রতিরোধ নারীর বিরুদ্ধে যৌন সন্ত্রাসের। জয় বাংলা। জয় হোক মানুষের জাগরণের। প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের।” কবিতার জিনসন্ধ্যা প্রখ্যাত জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী কবিতা লেখেন জানা ছিল না। সেদিন অনুষ্ঠানে তিনি নিজের লেখা যে বইগুলো নিয়ে এসেছিলেন তার একটি ছিল ইংরেজী। তার মানে হলো তিনি ইংরেজী-বাংলা উভয় ভাষাতেই কাব্যচর্চা করেন, এমনকি নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-লালনের কবিতা ও গানও অনুবাদ করেছেন। এখন থেকে তাঁকে বলব কবি ও বিজ্ঞানী। যা হোক, ‘সাহিত্যপত্র সহজপাঠ’র আয়োজনে শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরায় অনুষ্ঠিত হলো ‘কবিতার জিনসন্ধ্যা’। কবিতা সৃষ্টির বায়োলজিক্যাল-জেনেটিক্যাল ব্যাখ্যা দিলেন ড. আবেদ। তিনি এই তত্ত্বের নাম দিয়েছেন নিউরো এসথেটিকস। কান পেতে শোনার মতোই ছিল তাঁর বক্তৃতা। কবিতাও পড়লেন তিনি। উত্তরা ও এর আশপাশে বসবাসকারী কবিরা কবিতা পাঠ করেন। গানেরও ব্যবস্থা ছিল। এমন একটি আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ পাবেন ড. শোয়াইব জিবরান। ২০ এপ্রিল ২০১৫ সধৎঁভৎধরযধহ৭১@মসধরষ.পড়স
×