ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা মাঠে নামায় ভীত নন আনিস, সাঈদ খোকন

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২০ এপ্রিল ২০১৫

খালেদা মাঠে নামায় ভীত নন আনিস, সাঈদ খোকন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের অভিযোগের শেষ নেই। তাদের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই নির্বাচনে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে সেনা মোতায়েনের দাবি তোলা হচ্ছে। মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকার সেনা মোতায়েন করতে চায় না। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে নামায় মোটেও উদ্বিগ্ন নন বলে জানিয়েছেন। রবিবার তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের পক্ষে জনসংযোগ চালান। এ সময় সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয় দিনের মতো তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান রাজধানীর উত্তরায়। এ সময় তিনি তাবিথ আউয়ালের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেন। তার বাস মার্কা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। কিন্তু খালেদা জিয়ার এ নির্বাচনী প্রচারে ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন বলেছেন, শুনেছি বিএনপি নেত্রী তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। আমি এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। ঢাকাবাসী আমার সঙ্গে রয়েছেন। ঢাকাবাসীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অর্ধশতাব্দীর চেয়ে বেশি সময়ের। আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মাঠে নামায় বাড়তি চাপ অনুভব করছেন না। রবিবার ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস দিনভর নির্বাচনী জনসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি রাজধানীর জিগাতলা থেকে সকালে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চায় না। আমরা চাই নির্বাচনের ৭ দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হোক। সরকার দলীয় লোকজন ও পুলিশ প্রচারের সময় নানাভাবে হেনস্তা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, আমরা যেখানেই যাচ্ছি মানুষের ঢল নামছে। কিন্তু সরকারদলীয় লোকজন আমাদের ওপর হামলা করছে। পুলিশ হেনস্তা করছে। আমি কোন বাসায় ঢুকলে সমানেই ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি বসাতে হবে। তিনি বলেন, বাধা সত্ত্বেও জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। জনগণ যদি ভোট দিতে পারে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবেন বলে উল্লেখ করেন। আফরোজা আব্বাস জিগাতলা এলাকার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়Ñ হাজারীবাগ, রায়েরবাজার, ধানম-ি ও নিউমার্কেট এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। প্রচারের সময় আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খোকন, সাবেক সাংসদ নিলোফার চৌধুরী, বিলকিস ইসলাম প্রমুখ ছিলেন। এদিকে ঢাকা দক্ষিণের অপর মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন বরিবার পুরান ঢাকার কোতোয়ালি-সূত্রাপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। এছাড়া প্রথমবারের মতো তার স্ত্রী ফারহানা সাঈদ এদিন স্বামীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। ফারহনা সাঈদ রাজধানীর ধানম-ির ৩২ নম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি স্বামীর ইলিশ মার্কা প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। এছাড়া সাঈদ খোকনের পক্ষে তার কর্মী ও সমর্থকরা রাজধানীর রায়সাহেব বাজার মোড় এলাকায় পথসভা করেন। এ পথসভায় অংশ নিয়ে পরে সাঈদ খোকন জনসন রোডে নির্বাচনী প্রচার চালান। ডিআইটি মার্কেটের সামনে তৈরি করা প্যান্ডেলের নিচে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, শুনেছি বিএনপি নেত্রী তাদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। আমি এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। ঢাকাবাসী আমার সঙ্গে রয়েছেন। ঢাকাবাসীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অর্ধশতাব্দীর চেয়ে বেশি সময়ের। বিএনপি নেত্রীকে মানুষ হত্যার নির্দেশদাতা আখ্যা দিয়ে বলেন, কিছুদিন আগেও তিনি নিরীহ মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশেই পথচারীসহ নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ঢাকাবাসী শান্তিপ্রিয়। তারা কোন হত্যার নির্দেশদাতাকে গ্রহণ করবেন না। মির্জা আব্বাসকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মেয়রÑ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ঢাকার জন্য কী করেছেন। অথচ আমার বাবা ঢাকার উন্নয়ন করেছেন। তার উত্তরসূরী হিসেবে আমি তার দর্শন লালন করি। আপনারা একটিবারের জন্য হলেও আমাকে সুযোগ দিন। অন্তত পরীক্ষামূলক হলেও সুযোগ দিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি, উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক গোলাম সরোয়ার কবির, কাউন্সিলর প্রার্থী ইয়ার মোহাম্মদ, হাজী মোঃ সেলিম ও গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু প্রমুখ। এদিকে ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক রবিবার রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামায় বাড়তি চাপ অনুভব করছেন না। প্রচারে কে নামলো তা জরুরী নয়। বেশি যোগ্য প্রার্থীকেই জনগণ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে আশা করি। জনগণের সমস্যা সমাধানে যে পাশে থাকবে জনগণ তাকেই ভোট দেবে। এ বিবেচনায় আমি এগিয়ে। আমার বিশ্বাস জনগণ ভুল করবে না। এ সময় তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল রাজধানীর আগারগাঁও এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় তিনি বলেন, আচরণবিধি মেনেই প্রচার চালাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ও জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পরে আগারগাঁওয়ের তালতলা থেকে কাজীপাড়া ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। এদিকে বিকল্প ধারা সমর্থিত প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী রবিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। অন্যদিনের মতো এদিনও রাস্তায় ঝাড়ু দিয়ে প্রচার শুরু করেন। পরে শহীদ পার্ক মাঠ, জাপান গার্ডেন সিটি, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, রিং রোড ও শ্যামলীর সিনেমা হল এলাকার বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন। এ সব এলাকার বিভিন্ন পথসভায় ঈগল প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, আমরা বলেছি পরিচ্ছন্ন শহর আর পরিচ্ছন্ন রাজনীতির কথা। রাজনীতি পরিচ্ছন্ন করতে হবে তা হলেই শহর পরিচ্ছন্ন হবে। সিপিবি প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফি এদিন রাজধানীর শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। তিনি বলেন, জনগণের গোলাম পেতে হলে হাতী মার্কায় ভোট দিন। জনগণের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করুন। অপর মেয়র প্রার্থী জোনায়েদ সাকি রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে জনসংযোগ শুরু করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ করা গেলে বিদ্যমান সম্পদ দিয়েই সিটি কর্পোরেশনের জনগণের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসূচী নেয়া সম্ভব। এ সময় তিনি তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। এদিকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসির ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তরের জাসদ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অভিনেতা নাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ইসির কথা ও কাজে কোন মিল নেই। ইসির দ্বিমুখীতায় নির্বাচন বিঘিœত হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। সকালে মিরপুর বাগবাড়ী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি।
×