ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে মৃত্যু আট

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২০ এপ্রিল ২০১৫

বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীতে মৃত্যু আট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের অনেক স্থানে শনিবার রাতে বয়ে যায় শিলাবৃষ্টিসহ শক্তিশালী কালবৈশাখী। এতে কিশোরগঞ্জে গাছ চাপায় ৫ জন এবং ময়মনসিংহে গাছচাপা ও বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। সারাদেশে আহত হয়েছে ৫০ জনের বেশি মানুষ। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েক হাজার একরের বেশি জমির ফসল। বিধ্বস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভেঙ্গে গেছে শত শত গাছপালা। বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকার নেমে আসে। ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। নিজস্ব সংবাদদাতা, স্টাফ রিপোর্টার, আবহাওয়া অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’ এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাগে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আগামী ৫ দিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে পারে। নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জে কালবৈশাখীর তা-বে বাবা-ছেলেসহ ৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে পাকুন্দিয়ায় বাবা-ছেলে, কটিয়াদীতে একজন, কুলিয়ারচরে মাছবিক্রেতা ও বাজিতপুরে এক শিশু স্কুলছাত্রী রয়েছে। আহত হয়েছে কয়েকজন। ঝড়ের তা-বে স্কুল ভবনসহ কাঁচা-টিনশেডের অর্ধশতাধিক বসতঘর ল-ভ- হয়ে গেছে। আর কয়েক শত গাছপালা উপড়ে যায়। স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহে কালবৈশাখীর সময় গাছচাপায় ও বজ্রপাতে মারা গেছে ৩ জন। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। এদের মধ্যে গুরুতর ৩ জনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, মুক্তাগাছা উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের জালাল উদ্দিন (৩৫), ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামের আব্দুল করিম (৪০) ও ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের ইলিয়াস আলী (৩৫)। শনিবার মধ্যরাতের কালবৈশাখীর সময় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঝড়ের তা-বে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায় ও কাঁচা ঘরবাড়িসহ উঠতি বোরো ফসলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও থেকে জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে শনিবার সন্ধ্যা ও মধ্যরাতে দু’দফা কালবৈশাখীর তা-বে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,কাঁচা ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। টাঙাব ইউনিয়নের পুলেরঘাট বাজারের ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গয়েশপুর বাজারে খালেক দফতরির ইলেকট্রনিক্স শো-রুম ও পৌর শহরের মায়ামী ফুড প্রোডাক্টের কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপজেলার হাজার হাজার গাছপালা ও তিন শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। সন্ধ্যার প্রথম দফা শিলাবৃষ্টি, ঝড় এবং মধ্যরাতের ঝড়ে উপজেলার টাঙ্গাব, দত্তের বাজার, পাইথল, নিগুয়ারীসহ অন্যান্য ইউনিয়নে বোরো পাকা ধান, শাক-সবজি, ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ও মধ্য রাতের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে উপলোর প্রায় ২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা (ময়মনসিংহ) থেকে জানান, ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ধান, গাছপালা ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে শনিবার সন্ধ্যারাত ও মধ্যরাতে দু’দফায় বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে উপজেলার রাজৈ, বিরুনিয়া, মেদুয়ারী, ভালুকা, ডাকাতিয়া, ভরাডোবা ও মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় শতাধিক কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার জামিরাপাড়া, চান্দাব, কাইচান, বিরুনীয়া ও ঝালপাজাসহ বিভিন্ন গ্রামে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শত শত গাছপালা ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, শনিবার মধ্যরাতে নওগাঁ অঞ্চলে ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হয়েছে। জেলার মান্দা ও নিয়ামতপুরে শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে । জেলায় সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই পুরোদমে শুরু হবে ক্ষেতের বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ। এসময় শিলাবৃষ্টি হলে ক্ষেতের ধান ক্ষেতেই মিশে যাবে, ঠিক এমনই ভাবনায় এলাকার কৃষক শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ঝড়ে জেলার কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার বেশ ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ ঘটে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, গত রাতের শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ সামান্য, তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা থেকে জানান, শনিবার রাতে জেলার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি ও নারান্দিয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রচ- কালবৈশাখী বয়ে যায়। একই সঙ্গে ভারি শিলাবৃষ্টি হয়। এতে দু’ ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামের কয়েক হাজার একর জমির উঠতি বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই এসব ধান ঘরে তোলার কথা ছিল কৃষকদের। জানা গেছে, রাত আটটার দিকে বৈরাটি ইউনিয়নের নুনুই, আলমপুর, তেনুয়া, জিগাতলা, লালচাপুর, মাথাং, খামারহাটি, কাজলা, মইমা, ধাইরাকোনা, বৈরাটি, বড়তলা, চিত্রং বিল এবং নারানদিয়া ইউনিয়নের নারানদিয়া, ইয়ারন, খসখইস্যা, পাইকুড়া, দুলচাপুর, বৌলাম, পাইলাটি, নরনারায়ণপুর, মহেন্দুপুর এবং সালচাপুরসহ মোট ২৭টি গ্রামের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায় এবং ভারি শিলাবৃষ্টি হয়। এতে গ্রামগুলোর আশপাশের হাজার হাজার একর জমির বোরো ধান মাটিতে মিশে যায়। বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত হয়। পূর্বধলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সুজন রবিবার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, শিলাবৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারবেন না। স্থানীয় এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক জানিয়েছেন, তিনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগকে নির্দেশ এবং কৃষকদের অর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) থেকে জানান, নেত্রকোনা জেলার সবচেয়ে বড় হাওড় ডিঙ্গাপোতায় শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছে। শনিবার রাতে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টি বর্ষণের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টির তা-ব। এতে বড়তলী বানিয়াহারী ইউনিয়নের আকৈলখলা, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া, মাঘান সিয়াধার ইউনিয়নের সিয়াধার গ্রামের বোরো পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। উপজেলা কৃষি অফিসার মাফিজুল ইসলাম জানান, শিলাবৃষ্টিতে কমপক্ষে ছয়শত একর বোরো ফসল বিনষ্ট হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব থেকে জানান, শনিবার রাতে ভৈরবের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যায়। ঝড়ে ৫টি ইউনিয়নের শতাধিক বাড়িঘর, ৪টি স্কুল, ৩টি মাদ্রাসাসহ গাছপালার ক্ষতি হয়। বেশি ক্ষতি হয় আগানগর, শ্রীনগর ও সাদেকপুর গ্রাম। ঝড়ে পাকা ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঝড়ে বিদ্যুত খুঁটি ভেঙ্গে পড়ায় গ্রামগুলো বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। কালবৈশাখীতে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাযন করছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় কালবৈশাখীতে শনিবার রাতে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং বেশকিছু বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় ওই এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
×