ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এতদিন বাস পুড়িয়ে কোন্ মুখে সেই বাস মার্কায় ভোট চান তিনি?

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২০ এপ্রিল ২০১৫

এতদিন বাস পুড়িয়ে কোন্ মুখে সেই বাস মার্কায় ভোট চান তিনি?

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারে ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বাস প্রতীকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভোট চাওয়ার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, খালেদা জিয়া এতদিন আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়েছেন, মানুষ হত্যা করেছেন। এখন আবার তিনি বাসের পক্ষে লিফলেট বিলি করছেন। এতদিন বাস পুড়িয়ে এখন কোন মুখে সেই বাস মার্কায়ই ভোট চান তিনি? আর পত্র-পত্রিকায় কিভাবে তারই এত প্রচার করে? অবরোধ-হরতালের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের গত তিন মাসের নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই আগুন দেয়া ও মানুষ হত্যার সঙ্গে যে বিএনপি-জামায়াত জড়িত- তার প্রমাণও আসতে শুরু করেছে। যত বেশি তদন্ত হচ্ছে, ততই এগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়া এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। রোববার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক লীগের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সিটি নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়ার মাঠে নামা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন আবার তিনি নেমেছেন। এতদিন ককটেল ও পেট্রোল বোমা বিলি করেছেন, এখন বিলি করছেন বাস মার্কার লিফলেট। এই বাস পোড়ানোর টাকা আবদুল আউয়াল মিন্টুই সরবরাহ করেছেন, তার টাকায়ই এসব হয়েছে। বাস পুড়িয়ে খালেদা নেত্রী এখন কোন মুখে সেই বাস মার্কা নিয়েই নামেন? এ প্রসঙ্গে মিডিয়ার ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আর আমাদের সব পত্রিকাগুলোতেও দেখলাম বিএনপি নেত্রীর লিফলেট বিলির বড় বড় ছবি, হেডলাইন। আমি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করলাম তার কোনো হেডলাইন হলো না! হলো যিনি পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করলেন তারই। পত্রিকায় পাবলিসিটিও হলো তারই। সবাই উন্নয়ন চায়, কিন্তু উন্নয়ন করলে পাবলিসিটি পাওয়া যায় না। এখন দেখছি উন্নয়ন নয়, মানুষ হত্যা করলেই বড় বড় পাবলিসিটি পাওয়া যায়!’ তিনি বলেন, যিনি পেট্রোলবোমা মেরে ও পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছেন, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীকেও পুড়িয়ে মেরেছেন- মানুষ তাকেই বেশি ঘৃণা করে। তিনিই সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য। অথচ যিনি ধ্বংস করলেন, মানুষ হত্যা করলেন- তারই যেন যত বাহবা। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। দুই মাস পরপরই ঋতু পরিবর্তন হয়। সেই সঙ্গে মানুষের মনও যেন পরিবর্তন হয়। তাই মানুষও যেন খুব সহজেই সবকিছু ভুলে যায়। এ কারণেই কী মাত্র দুই মাসেই তারা (মিডিয়া) সব ভুলে গেল! আর তিন মাসের অবরোধ-হরতালে যে ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হলেন, সেই ব্যবসায়ীকেও দেখলাম বিএনপি নেত্রীর লিফলেট বিলির সময় দাঁত বের করে হাসছেন। তিনিই বা কিভাবে হাসতে পারেন? তিন মাসের অবরোধকালে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া কেন ঘর ছেড়ে টানা ৯২ দিন তার অফিসে বসে থাকলেন- সেই রহস্যই এখনও বুঝলাম না। আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত না করে তিনি না-কি ঘরে ফিরবেন না। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে তিনি সরকার উৎখাত করবেন! আর তিনি অফিসে বসে মানুষ হত্যা করলেন, কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষ সবারই ক্ষতি করলেন, সবার জীবনই ধ্বংস করলেন। ওনাকে প্রশ্ন করি, ঘরে কী ফিরেন নাই? আর আওয়ামী লীগও তো ক্ষমতায়ই আছে। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই যে ছোট্ট শিশুকে হত্যা করলেন, তার কী অপরাধ ছিল? তাকে কেন আগুন দিয়ে পোড়ানো হলো? এর জবাব তো জাতির কাছে খালেদা জিয়াকেই দিতে হবে। শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনপূর্ব বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য এবং পঁচাত্তর পরবর্তী জিয়াউর রহমান সরকারসহ বিগত বিএনপি ও চারদলীয় জোট সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করা, সন্ত্রাস-দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করা, মানুষ হত্যা করা- সবই বিএনপিই সৃষ্টি করেছে। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিক হত্যা করেছেন, কৃষি-শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে নির্যাতন করেছেন। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এলে মানুষ একই ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কেবল সারের দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে ১৮ জন কৃষককে গুলি তরে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই মানুষের জীবনে বিড়ম্বনার শুরু হয়। আসলে খালেদা জিয়া মানুষের কল্যাণ করবেন কিভাবে? তিনি তো দেশের স্বাধীনতাই চাননি, স্বাধীনতায় বিশ্বাসও করেন না। তার মুখেও কোন ট্যাক্স নেই। যা ইচ্ছা তাই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন তিনি। আর ক্ষমতায় গেলেই সবকিছু ভুলে যান। এটাই তার চরিত্র। আর বিএনপি কেবল ধ্বংসের রাজনীতিই জানে, কোন উন্নতি করতে জানে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সেই বিএনপিকে মানুষ কিভাবে সমর্থন করে? কৃষি ও কৃষকসহ দেশের কল্যাণে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে মানুষের কল্যাণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ কিছু পায়। আওয়ামী লীগের নীতিই হচ্ছে আত্মনির্ভরশীল হওয়া ও নিজের পায়ে চলা, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা নয়। বিএনপি চেয়েছে বাঙালী জাতিকে ভিক্ষুকের জাতি করে রাখতে আর আওয়ামী লীগ সব সময়ই চেয়েছে, এদেশ বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে ও মাথা উঁচু করে চলবে। গরিবের জন্য বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই চিন্তা করে। তাই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাই। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে এই কাজে কৃষক লীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতাও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন, হরতাল-অবরোধ দিয়ে কৃষি-কৃষক ও উৎপাদনসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে। তারপরও আমরা সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই এগিয়ে যাচ্ছি। এদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. মির্জা জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা, কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট খান আলতাব হোসেন বুলু, ছবি বিশ্বাস, আশালতা বৈদ্য, এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি প্রমুখ।
×