ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫ হাজার টাকায় রফার প্রস্তাব

মাদারীপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু ॥ ধামাচাপা দিতে নাটক

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২০ এপ্রিল ২০১৫

মাদারীপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু ॥ ধামাচাপা  দিতে নাটক

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ১৯ এপ্রিল ॥ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন টেবিলে সাবিনা আক্তার (২৫) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে লাশ জীবিত উল্লেখ করে রেফার্ড নাটক সাজিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় সাবিনার লাশ তার বাবার বাড়ি বহেরাতলা ইউনিয়নের সুতারপার ভেন্নাতলার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে শিবচরের প্রভাবশালী ক্লিনিক নেতাদের যোগসাজসে চিকিৎসকরা তৎপর হয়ে উঠেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের সোতারপার ভেন্নাতলা গ্রামের আব্দুল হক দড়ির মেয়ে সাবিনা আক্তারকে সিজারের জন্য শনিবার দুপুর ১টায় শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়। বেলা সোয়া ১টার তার সিজারের জন্য এনেস্থিসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করেন ডাঃ আব্দুল মোতালেব। এরপর ডাঃ বিনয়কৃষ্ণ গোলদার সিজারের মাধ্যমে সাবিনার পেট থেকে একটি পুত্র সন্তান বের করে আনেন। সিজারের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ভুল চিকিৎসায় মারা যায় সাবিনা আক্তার। ঘটনাটির দায় এড়ানোর জন্য চিকিৎসকরা শলাপরামর্শ করে প্রায় ২ ঘণ্টা সাবিনার মৃতদেহ অপারেশন থিয়েটারে আটকে রাখে। এরই মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল মোতালেব, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ রাজিব ও ডাঃ বিনয়কৃষ্ণ গোলদার কৌশলে রোগীর অবস্থা গুরুতর উল্লেখ করে মৃত সাবিনাকে জীবিত দেখিয়ে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। বেলা আড়াইটায় লাশ একটি এ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় মনির হোসেনকে দিয়ে সাবিনার ভগ্নিপতি নান্নু ও বোনকে সঙ্গে করে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করে। বিষয়টি সাবিনার আত্মীয়-স্বজন বুঝতে পেরে তারা ফরিদপুর না গিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ঘুরিয়ে তাদের বাড়ির দিকে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে কয়েকটি ক্লিনিকের মালিক হাসপাতালে এসে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য টিএইচওর বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সাবিনার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তবে রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও তাদেরকে শর্ত দেয়া হয় যাতে মিডিয়াকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনসহ কারও কাছে বিষয়টি প্রকাশ করা যাবে না। শুধু তাই নয় তাদের রীতিমতো শাসিয়ে দেয়া হয়েছে। যে কারণে এখন সাবিনার পরিবারের কেউ মুখ না খুললেও মৃত সাবিনার বড় বোন আসমা আক্তার বলেন, ওয়ার্ড বয় মনির হোসেনের সঙ্গে সাবিনার সিজারের জন্য ৮ হাজার টাকা চুক্তি হয়। আমরা জানি সরকারী হাসপাতালে কোন টাকা পয়সা লাগে না। তারপরও তারা আমাদের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছে। ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা করে আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
×