ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিজিবিরও তদারকির দাবি

ভোমরা বন্দরে মালামাল আমদানিতে বিপুল রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২০ এপ্রিল ২০১৫

ভোমরা বন্দরে মালামাল আমদানিতে বিপুল রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারতীয় ফলসহ অন্যান্য মালামাল আমদানিতে অনিয়ম ও দুর্র্নীতির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ফাঁকি দেয়া রাজস্বের টাকা আমদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত আমদানিকারক, ছাড়কারক সংস্থাসহ কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এসব টাকা ভাগ বাটোয়া করে খাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এবং পানামা কর্তৃপক্ষের লোকজন অতিরিক্ত আমদানি করা মালামালের শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে মেসার্স রীনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ছিদ্দিকুর রহমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদনে এই রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে আমদানিকৃত পণ্যসমূহ বিজিবির মাধ্যমে প্যারালাল তদারকির দাবি জানিয়েছেন। ব্যবসায়ী ছিদ্দিকুর রহমানের অভিযোগ অস্বীকার করে ভোমরা কাস্টমসের সহকারী পরিচালক তারিক মাহমুদ রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, ভোমরা বন্দরে সরকারী ল্যান্ড পোর্টের মাধ্যমে কাজ তদারকি হয়। পানামা নামে কোন সংস্থা ভোমরা বন্দরে কাজ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবেদনকারীর অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং কোন বাস্তবতা নেই বলে তিনি মনে করেন। ভোমরা বন্দরের সহকারী পরিচালক পার্থঘোষ বন্দরে ২ মাস আগে যোগদান করেছেন উল্লেখ করে জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে এ ধরনের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। এ ধরনের অভিযোগ তার যোগদানের আগের হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভোমরা বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের এবং এটি ওপেন সিক্রেট। বিষয়টির সঙ্গে বন্দরে মালামাল আমদানিকারক, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন্দরের গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ভাগ বাটোয়ারার সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সুবিধা নেয়ার তালিকায় সংবাদকর্মীদের নামের তালিকাও দীর্ঘ। অনেক সংবাদকর্মী এই অনিয়মের সুবিধা না নিলেও তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা নিয়ে পকেট ভরেন বন্দরের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এমন অভিযোগও রয়েছে। ভোমরা বন্দরে ব্যবসায়রা প্রতি ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ টন ফল আমদানি করে ১৪ টনের রাজস্ব পরিশোধ করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া ২০ টনের ঘোষণায় ৪০ থেকে ৫০ টন মাল ঢোকানো হচ্ছে। এখানে দেয়া হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোমরা বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে এ বন্দর দিয়ে ভারতীয়, আপেল, আনার ও আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ফল ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আমদানিকারক, ছাড়কারক, সিএ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গোপন অর্থনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে প্রতি ট্রাকে ১৪ টন হিসেবে ফলের সর্বনিম্ন ওজন ধরে রাজস্ব আদায় করছে শুল্ক বিভাগ। কাস্টম কর্তৃপক্ষের ওয়ে মেশিন চালু না থাকায় চুক্তিভিত্তিক ট্রাকপ্রতি ১৪ টনের রাজস্ব ধরা হচ্ছে। অন্যদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাপক স্কেল থাকলেও সেখান থেকে মালামালের পরিমাপের কোন কাগজ ট্রাক চালকদের দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা প্রতি ট্রাকে ১৮ থেকে ২০ টন ফল আমদানি করে ১৪ টনের রাজস্ব পরিশোধ করছে। অবশিষ্ট ফলের রাজস্ব ফাঁকির সহায়তার জন্য ট্রাক পিছু প্রায় ৫০ হাজার টাকা কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা, ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও ছাড়কারক প্রতিষ্ঠান ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গড়ে প্রতিদিন ট্রাকপিছু অতিরিক্ত ফলসহ অন্যান্য মালামাল আমদানি করে ২৫ থেকে ২৭টি ট্রাক থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব লুটপাট করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লেখা ছিদ্দিকুর রহমান নিজেকে একজন আমদানি ও রফতানিকারক পরিচয় দিয়েছেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রীনা এন্টার প্রাইজের ঠিকানা বাড়ি নং ২২, রোডনং-১০, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ। সরকারী দফতরের প্রায় ৪০টি শাখাসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে অভিযোগের কপি পাঠিয়েছেন। তার অভিযোগ অনুযায়ী এই বন্দরে আমদানিকারকরা কম মূল্যে এলসি ওপেন করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত পণ্যের টাাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করছে। আবেদনকারী বন্দরের সকল অবৈধ কার্যক্রম কঠোরভাবে দমনের পাশাপাশি রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে সোনামসজিদ ও হিলি পোর্টের মতো ভোমরা বন্দরে প্যারালাল তদারকির জন্য বিজিবিকে ক্ষমতা প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। তবে দরখাস্তে দেয়া তার মোবাইল নাম্বারে রবিবার দিনভর রিং করা হলেও মোবাইলটি বন্ধ আছে বলে জানানো হয়। অন্যদিকে বন্দরের অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে ভোমরা বন্দর সিএ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নেছার উদ্দিনের সঙ্গে রবিবার সকাল থেকে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেনননি।
×