ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি জোটের সঙ্গে সংঘাতের আশঙ্কা

ইয়েমেনের দিকে ইরানী নৌবহর

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

ইয়েমেনের দিকে ইরানী নৌবহর

ইরান শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের কাছে আবার রসদ সরবরাহের চেষ্টায় সাত থেকে নয়টি জাহাজের একটি বহর ইয়েমেনের দিকে পাঠাচ্ছে। এদের কতগুলো অস্ত্র বহন করছে। দু’মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা একথা জানান। খবর হিল ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে ইরানের শক্তি পরীক্ষার পথ খুলে দিতে পারে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। এ জোট ইয়েমেনকে ঘিরে নৌ অবরোধ কার্যকর করছে এবং হুতিদের ওপার চার সপ্তাহ ধরে বিমান হামলা চালাচ্ছে। ইরান গত সপ্তাহে ইয়েমেনের কাছে জলসীমায় একটি ডেস্ট্রয়ার ও আরেকটি নৌযান পাঠায়, তবে জলদস্যু বৃত্তি রোধ করার নিয়মিত দায়িত্ব পালনই এর উদ্দেশ্য বলে জানায়। নতুন পদক্ষেপ নিয়ে যা অস্বাভাবিক তা হলো ইরানীরা এটি গোপন করার চেষ্টা করছে না, বরং তারা যুক্তরাষ্ট্র ও এর উপসাগরীয় মিত্রদের কাছে ওই পদক্ষেপ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করছে বলে মনে হয়। ওই নৌবহর ইয়েমেনের কাছাকাছি এলে কি ঘটবে তা স্পষ্ট নয়। সৌদি আরব অবরোধ কার্যকর করতে ইয়েমেনকে ঘিরে জাহাজ মোতায়েন করেছে। মিসরও তাই করেছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, জাহাজ বহরটি হুতিরা দখল করে নিয়েছে এডেনের এমন কোন বন্দরে ভেড়ার চেষ্টা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান অভিযানে সহায়তা করলেও ইয়েমেনের নৌ-অবরোধে অংশ নিচ্ছে না। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র কর্নেল প্যাট রাইডার একথা জানান। তবে মার্কিন নৌবাহিনী ওই অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। নৌবাহিনীর সদস্যরা ১ এপ্রিল লোহিত সাগরে পানামার পতাকাবাহী এক জাহাজে সম্মতির ভিত্তিতে ওঠে পড়ে। জাহাজটি হুতিদের জন্য অবৈধভাবে অস্ত্র বহন করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। সেখানে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। কিন্তু ঐ পদক্ষেপ ইয়েমেন সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সক্রিয় সামরিক ভূমিকা নিয়ে ওয়াশিংটনে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। আরও জাহাজে তল্লাশি চালানো হবে বলে পেন্টাগন চলতি সপ্তাহে আভাস দেয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ইয়েমেন নিয়ে ইরান ও সৌদি আরবের পরোক্ষ লড়াই বিস্তৃত হয়ে এক নৌ সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য ও রসদ সরবরাহের সুবিধা দিয়ে সৌদি বিমান হামলায় সহায়তা করছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি জঙ্গী বিমানগুলোকে জ্বালানি সরবরাহ করতে শুরু করে। সৌদি আরবকে সহায়তা করা প্রয়োজন বলে প্রশাসন কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বোমা হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে দেশটির জলসীমায় মার্কিন নৌবাহিনীর সাতটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন রয়েছে। তবে মার্কিন সৈন্যরা ওই অঞ্চলে সৌদি নৌবাহিনীর অবরোধে অংশ নিচ্ছে না। মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা শুক্রবার একথা জানান। আমেরিকার জাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ফরেস্ট শারম্যান ও ইউএসএস উইস্টন চার্চিল, মাইন সুইপার ইউএসএস সেন্ট্রি ও ইউএসএস ডেক্সটাস এবং প্রায় ২২০০ মেরিনবাহী ও জল-স্থলে আক্রমণে সমর্থ এমন তিনটি জাহাজ ইউএসএস আইয়ো জিসা, ইউএসএস নিউইয়র্ক এবং ইউএসএস ফোর্ট ম্যাকহেনরি। নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তারা একথা জানান। মালবাহী জাহাজ ইউএসএনএস চার্লস ড্রুও ওই অঞ্চলে রয়েছে। নৌবাহিনী ইয়েমেনকে ঘিরে এডেন উপসাগর ও লোহিত সাগরে টহল দিয়ে থাকে। কিন্তু ওইসব জাহাজ এমন এক গুরুতর সময়ে সেখানে মোতায়েন রয়েছে, যখন সৌদি নৌবাহিনী ইয়েমেনের বন্দরগুলোতে রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা যাতে নতুন করে অস্ত্রের চালান না পেতে পারে, দৃশ্যত সে চেষ্টাতেই সৌদিরা গত মাসে তাদের তৎপরতা শুরু করে। ইরান চলতি সপ্তাহে ওই অঞ্চলে এর নিজস্ব নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়ে সৌদি তৎপরতার জবাব দেয়। বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের দায়ে ইরানকে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। ইরানী জাহাজগুলো বাব আল মানদার প্রণালীতে অবস্থান করছে বলে জানানো হয়। ইয়েমেন ও জিবুতির মধ্যবর্তী ঐ সঙ্কীর্ণ জলপথই লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল চলতি সপ্তাহে জানায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন ঘিরে সমুদ্রে এর ভূমিকা সম্প্রসারণ করে বিদ্রোহীদের জন্য পাঠানো ইরানী অস্ত্রের খোঁজে বিভিন্ন নৌযানে তল্লাশি চালায়। কিন্তু ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের এক মুখপাত্র এয়ার ফোর্স কর্নেল প্যাট্রিক রাইডার শুক্রবার ওই তৎপরতাকে খাটো করে দেখান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে না এবং ওই অঞ্চলের জলসীমায় সচরাচর যেমন করে থাকে তেমনভাবেই টহল দিচ্ছে।
×