ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

আজ জিতলেই সিরিজ বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ ভারতের পত্রিকাগুলো কখনই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোন নিউজ খুব বেশি প্রাধান্য দিতে চায় না। কিন্তু যখনই শুক্রবার পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে বাংলাদেশ, নিউজটি ভালই প্রাধান্য পায়। ভারতের সব পত্রিকাতেই ‘বাংলাদেশের জয়গান।’ এটি অনেক বড় প্রাপ্তিও। যখন বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ জুনে হবে কিনা- এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তখন ভারতের পত্রিকায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেভাবে নিউজ ছাপা হয়েছে; তাতে সুবাতাসের একটি বাতাবরণেরই ইঙ্গিত মিলছে। কলকাতার পত্রিকা এবেলার শিরোনাম তো সবারই মনে ধরেছে- ‘পাক যুদ্ধে জয়ী সাকিবরা।’ সেই যুদ্ধ আজও মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দেখা যাবে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে হবে। এ যুদ্ধে বাংলাদেশ যদি জিতে যায়, তাহলে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে যাবে! সেই সিরিজ জেতার হাতছানিই দিচ্ছে বাংলাদেশকে। পারবে বাংলাদেশ সিরিজ জিততে? এমন প্রশ্ন ছোড়া বোধহয় এখন আর উচিত নয়। প্রশ্নগুলো পাকিস্তানের জন্যই রাখা উচিত। বাংলাদেশের স্থানে এখন পাকিস্তান নামটি বসিয়ে দিলেই হয়। কারণ এবার ওয়ানডে সিরিজে যে ‘বড় দলের’ তকমা বাংলাদেশের গায়েই সেঁটে গেছে। ফেবারিট বাংলাদেশই। সেই প্রমাণ দিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপের পর দুই দল প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নেমেছে। বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। সেখানে পাকিস্তান ধুঁকতে ধুঁকতে যে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে, এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে হেরেই গেছে। সেই হারও হয়েছে ১৬ বছর পর! ১৯৯৯ সালের পর যে দলকে কোনভাবেই হারানো যাচ্ছিল না, হারতে হারতে হারের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল একটানা ২৫; অবশেষে জয় এসেছে। জয় যখন এসেছে তখন বাকি থাকা দুই ম্যাচের আরেকটি জিতলে তো সিরিজ জয়ই হয়ে যাবে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এখনও পার্থক্য বিস্তর। ক্রিকেটে পাকিস্তান অনেক শক্তিশালী দলের নাম। সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখনও সেই স্থানে পৌঁছতে পারেনি। র‌্যাঙ্কিংয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশই। কিন্তু এবার সিরিজ বলছে ভিন্ন কথাই। বরাবর পাকিস্তান শক্তিশালী হয়ে সিরিজ খেলতে নামলেও এবার তরুণ দলটি নিয়ে ‘দুর্বল’ দলই। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ৬২ রানে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার হারাল ৭৯ রানে। ৩৩ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। মিসবাহ, আফ্রিদি, ইউনুসহীন দলটি যে কতটা পেছনে পড়ে গেছে, তা বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রথম ওয়ানডের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পাকিস্তানের কোনভাবেই এ সিরিজে আর কোন ওয়ানডেই জেতার কথা নয়। তামিম ইকবালের ১৩২ ও মুশফিকুর রহীমের ১০৬ রানের ইনিংসগুলো তো পাকিস্তান ক্রিকেটকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। এ দুইজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে যখন বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাসের রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩২৯ রান করল, তখনই তো পাকিস্তানের হার নিশ্চিত হয়ে যায়। বুকে একটু ধুকধুক যে ছিল না, তা একেবারেই নয়। তবে সবারই বিশ্বাস ছিল, আফ্রিদি, আজমল, মিসবাহহীন দলটি এবার অন্তত কুলিয়ে উঠবে না। শেষে যখন টপাটপ উইকেট পড়তে থাকল, তখন সবাই নিশ্চিত হয়ে গেল জয়ী দলটির নাম বাংলাদেশ, হারা দলটির নাম পাকিস্তান হতে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামও ক্রমেই খালি হতে থাকল। এ আবার কেমন স্মৃতি। সব সময়ই দেখা গেছে বড় দলগুলোর বিপক্ষে দর্শকরা স্টেডিয়াম ছাড়েন বাংলাদেশের করুণ দশা দেখে। এবার পাকিস্তানের করুণ দশার শেষ পরিণতি না দেখেই বের হয়ে যাচ্ছেন দর্শকরা! শেষপর্যন্ত পাকিস্তান ২৫০ রান করতে পারল। দীর্ঘ বছর ঘুরে একের পর এক ম্যাচ হারের পর জয় মিলল। কোথায় উল্লাস হবে, তা না ক্রিকেটাররা আনন্দ প্রকাশ করলেন না। ফেবারিট তকমা যে শুরু থেকেই লেগে গেছে। তাই বোধহয় ‘পাকিস্তানকে হারাব তা তো আগেই জানা’ এমন ভাবই তৈরি হয়ে গেছে। আনন্দ উদযাপনও সেভাবে হলো না। তবে দর্শকরা যাঁরাই ছিলেন, তাঁরা কিন্তু স্টেডিয়াম ঘিরে উল্লাস করেই গেছেন। তাঁদের উৎসবের সীমা ছিল না। যখন প্রথম ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেয়া সাকিব বলছেন, ‘আগে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিততে চাই; এরপর তৃতীয় ওয়ানডে জেতার দিকে নজর দেব।’ তখন যেন উৎসব আরও বেড়ে গেল। কথাগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেই হয়েছে। কারণ সাকিবই বলেছিলেন, ‘আমরাই ফেবারিট। এবারই সুযোগ পাকিস্তানকে হারানোর।’ বাংলাদেশ বুঝিয়ে দিয়েছে, তারাই ফেবারিট এবং সুযোগটি কাজেও লাগিয়েছে। এখন আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করার পালা। ম্যাচটিতে জিতলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই সিরিজ জয়ের হাতছানিই দিচ্ছে এখন।
×