ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডির সংলাপ

ভারতে পণ্য রফতানিতে শুল্ক রেয়াতের পরও নন-ট্যারিফ নানা শর্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

ভারতে পণ্য রফতানিতে শুল্ক রেয়াতের পরও নন-ট্যারিফ নানা শর্ত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে পণ্য রফতানিতে বিশেষ শুল্ক রেয়াত দেয়ার পরও ভারতের বাজারে পণ্য রফতানির পরিমাণ আশা অনুরূপ হচ্ছে না। কাগজে-কলমে শুল্ক সুবিধা দিয়ে আরোপ করা হয়েছে নন-ট্যারিফ নানা শর্ত। এর মধ্যে রয়েছে টেস্টিং, লেবেলিং, পণ্যের দাম, কাস্টমস সমস্যা ইত্যাদি। পণ্য রফতানিতে ভারতের পণ্য মাননিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যুারো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের (বিআইএস) নানা হয়রানির সম্মুখীন হন দেশের রফতানিকারকরা। এ জন্য দুই দেশের সরকার ও স্থল বন্দরগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিএসটিআইএ’র মান বৃদ্ধি, বাণিজ্য প্রসারের জন্য যৌথ মাননিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন এবং ভারতীয় আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশি পণ্য বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার ইন বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ট্রেড- অ্যাড্রেসিং এসপিএস ইস্যু অ্যান্ড কনসার্ন’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এ মত দেন। সংলাপে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কর্মাস-বাংলাদেশর সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ চক্রবর্তী, সাবেক সচিব সুহেল আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ। সংলাপে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট খালেদা আক্তার। গবেষণাপত্রে খালেদা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করে বিএসটিআই। তেমনি ভারতে পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করে বিআইএস। ফলে দেখা যায় কোনো পণ্যের মান বাংলাদেশে যা ধার্য করা হয় তার সঙ্গে ভারতীয় মানের মিল থাকে না। ফলে মানের গড়মিলের কারণে সেটি ভারতে রপ্তানি করা যায় না। তাই এসপিএস বিষয়ক চুক্তির আলোকে উভয় দেশের মধ্যে একটি যৌথ মাননিয়ন্ত্রক সংস্থা করার সুপারিশ করা হচ্ছে। যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, যেমন বাংলাদেশে জুসের ক্ষেত্রে ফল থাকতে হবে ১০-১২ শতাংশ। কিন্তু ভারতে ফলের হার থাকে ২০-২২ শতাংশ। এক্ষেত্রে জুসটি শুল্কমুক্ত সুবিধায় থাকলেও মানের গড়মিলের কারণে সেটি ভারত নিতে চায় না। তাই রপ্তানিও করা যাচ্ছে না। আর এসব কারণেই বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এসপিএস বিষয়ক ইস্যুগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এ ব্যাপারে দ্বিপাক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে জোর দিতে হবে। খালেদা আক্তার গবেষণাপত্রে আরো বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০০৫ সালে দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য ২ বিলিয়ন হলেও ২০১৪ সালে তা ৬ বিলিয়ন ডলারে বেড়ে দাঁড়ায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতে আমাদের রপ্তানি হয়েছে ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার যা ২০১৪ সালের একই সময়ের চাইতে ৩৭ শতাংশ বেশি। সংলাপে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, সরকার উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে নিরলসভাবে কাজ করছে। আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমদের নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পণ্যের গুণমান আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বিএসটিআইয়ের নিজেদের সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেনি। বিএসটিআই কাজ সঠিকভাবে করে তাহলে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাহিরের সংস্থাগুলো সেভাবে আমাদের পণ্যর বিষয়ে আপত্তি তুলতে পারবে না। অবিশ্বাস দূর করেত উভয় দেশের সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতের প্রাণের পণ্য রফতানির অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তানভীন ইসলাম জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনই কয়েকটি পথে পণ্যে ভারতে যায়। পণ্যেগুলো যে বন্দরের মাধ্যমেই রফতানি করা হোক তা কলকাতার সেন্টার ফুড ল্যাবরেটরিতে (সিএফএল) পরীক্ষা করাতে হয়। সামগ্রিক প্রক্রিয়া শেষ করতে ১৫-২০ দিন লেগে যায়। এতে করে অনেক সময় পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। আবার গুদামজাত খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যে রফতানি ব্যয় বেড়ে যায়। এতে করে পণ্যের দাম বাড়ালে সেটি ভারতের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা কষ্টকর। রফতানির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা পৃথিবীর ১০০টির বেশি দেশে পণ্য রফতানি করি।
×