ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি সংস্কারের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

১৫ জেলায় শিল্পকলা একাডেমি সংস্কারের উদ্যোগ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ঝিমিয়েপড়া সাংস্কৃতিক কর্মকা- জাগিয়ে তুলতে চায় সরকার। এর মাধ্যমে তরুণ সমাজকে বিপথগামী হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ দেশ উপহার দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক কার্যক্রম প্রসারে সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে। এর অংশ হিসেবে দেশের ১৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি নবায়ন, সংস্কার ও মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এজন্য ৪০ কোটি ৫৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রসার এবং সংরক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে জনগণের কাছে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধাদি সৃষ্টি হবে। সেই সঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামসমূহের অবকাঠামোগত সুবিধাদি উন্নয়নের মাধ্যমে সেবার মান নিশ্চিত করা, একুইস্টিক ট্রিটমেন্ট (অনুষ্ঠান করার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি), মঞ্চ ব্যবস্থাপনা এবং আলোকসজ্জার মতো প্রয়োজনীয় সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে ১৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অডিটরিয়ামসমূহকে ব্যবহার উপযুক্ত করে তোলা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) বিশ্ব সভাপতি রামেন্দু মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এরকম উদ্যোগগুলো জরুরী। দীর্ঘ মেয়াদে এই বিনিয়োগ ফলপ্রসূ হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সুবিধা বৃদ্ধি করা জরুরী যেসব জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, গোপালগঞ্জ এবং গোপলগঞ্জে শেখ ফজলুল হক মনি মেমোরিয়াল অডিটরিয়াম, রাজশাহী, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জে শহীদ এম. মনসুর আলী অডিটরিয়াম, সিলেট, হবিগঞ্জ, যশোর, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, ঝালকাঠি, নীলফামারী এবং দিনাজপুর। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, জেলা পর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমির উন্নয়ন উদ্যোগ ভাল হলেও জঙ্গীবাদের বিপক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকা- জোরদার করতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায় শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা, উপজেলা পর্যায়ে একজন সাংস্কৃতিক অফিসার নিয়োগ, প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং তৃণমূলের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। যাতে করে সারাবছর ধরে তারা সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারে। কেননা উপজেলায় এত লোকের বাস কিন্তু তাদের বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের জন্য তেমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এটা হতে পারে না। আগামী বাজেটে সাংস্কৃতিক খাতে বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান তিনি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতি প্রচার, প্রসার, উন্নয়ন এবং সংরক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এর প্রকৃত এবং মূল উদ্দেশ্য হলো জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংস্কৃতির উন্নয়ন, সমৃদ্ধিকরণ ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদির সৃষ্টি করা। পূর্বে ৪০০ আসনবিশিষ্ট অডিটরিয়ামসহ ২০টি মূল স্থাপনা ২০টি জেলায় স্থাপিত হয়েছিল। ৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং অডিটরিয়াম বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত হয়েছিল। ১৯টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি এক্সটেনশন রেনোভেশন এ্যান্ড এ্যাডজাস্টমেন্ট অব ডিসট্রিক্ট শিল্পকলা একাডেমি শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সম্প্রসারণ ও নবায়ন করা হয়েছিল। প্রকল্পগুলো সম্পাদনের পর দেখা যায় যে, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় যেসব সুবিধাদি সৃষ্টি হয়েছে তা শিল্পকলা প্রদর্শনীর জন্য যথেষ্ট নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৪৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির নবায়ন, সংস্কার, মেরামত ও আধুনিকায়ন সুবিধাদি স্থাপন কাজ অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রস্তাব প্রেরণ করে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ওপর ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সুপারিশক্রমে ৭৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সংবলিত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক অনুবিভাগে প্রেরণের পূর্বে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য নথি উপস্থাপন করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দের কথা বিবেচনা করে ৪৪টির পরিবর্তে ১৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি নবায়ন, সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প নেয়ার বিষয়ে অনুশাসন প্রদান করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির কাজ অন্তর্ভুক্ত করে মন্ত্রণালয় হতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাওয়ার পর ২০১৪ সালের ২৪ নবেম্বর প্রকল্পের ওপর পুনরায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্তের আলোকে বাস্তব চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি পরিবীক্ষণের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের একটি কমিটি ঝালকাঠি শিল্পকলা একাডেমি পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন পেশ করে। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত এবং কমিটির সুপারিশ প্রতিফলন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪০ কোটি ৫৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালে জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির পুনর্গঠিত ডিপিপি প্রেরণ করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য হুমায়ুন খালিদ বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে ১৫টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামসমূহের নবায়ন, সংস্কার ও মেরামত কাজ করার মাধ্যমে অবকাঠামোগত সুবিধাদি উন্নয়ন এবং মঞ্চ ব্যবস্থাপনা, এ্যাকুইস্টিক ও আলোকসজ্জার প্রয়োজনীয় সুবিধাদি স্থাপীত হলে জাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে জনগণের কাছে সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে। প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, শিল্পকলা একাডেমি ভবন ও অডিটরিয়াম সংস্কার, মেরামত, মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, মেরামত, সংরক্ষণ ও নবায়ন, যানবাহন, অফিস সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র ক্রয় এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, জেনারেটর ও সাব-স্টেশন যন্ত্রপাতি স্থাপন।
×