ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারীদের ভোট দেবেন না

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যাকারীদের ভোট দেবেন না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে উগ্র সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠী ও পেট্রোলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যাকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী মেয়র প্রার্থীদের ভোট না দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান দেশের বিশিষ্টজনরা। এ সময় ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে তিনদিনের বিশেষ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা হেফাজতের ৫ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শাপলা চত্বরের উন্মত্ততা সামনে আনতে চাইছেন বলে অভিযোগ করেছেন। পরিবেশ শান্ত ও উৎসবমুখর থাকায় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করার মতো কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও মত দেন সবাই। নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়ার ভূমিকা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন কিনা, এ বিষয়ে কমিশনের কাছে ব্যাখাও চাওয়া হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয়ে ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক ও দক্ষিণে সাঈদ খোকনকে সহস্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। এ দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে শুক্রবার থেকে প্রচার অভিযানে নেমেছেন নাগরিক কমিটির সমস্যরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করবেন তারা। এদিকে ঢাকার দুই মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনদিনের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, ২০ এপ্রিল বিকেল তিনটায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সাঈদ খোকনের সমর্থনে সুধী সমাবেশের আহ্বান করা হয়েছে। ২২ এপ্রিল চিড়িয়াখানা রোডের ৮ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে আনিসুল হকের পক্ষে বিকেল তিনটায় সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে দুই মেয়র প্রার্থীসহ দেশের বিশিষ্টজনরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও ২৪ এপ্রিল বিকেল পাঁচটায় সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নাশকতার বিরুদ্ধে অবস্থান তুলে ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুই মেয়র প্রার্থীসহ শত বরেণ্য ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে এক শ’ পায়রা উড়িয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির ঢাকা গড়ে তোলার শপথ নেবেন। সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির চেয়ারপার্সন শুক্রবার রাতে হেফাজতের ৫ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের উন্মত্ততা আমরা ভুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু খালেদা জিয়া তা সামনে নিয়ে এলেন। তিনি বলেন, হেফাজত একটি ধর্ম প্রচারের সংগঠন। রাজনৈতিক দল নয়। নির্বাচনের আগে এই ধরনের একটি সংগঠনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক কিসের ইঙ্গিত তা আমরা জানতে চাই। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসারে ধর্মকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার না করার কথা থাকলেও একটি গোষ্ঠী তা করার চেষ্টা করছে। সভা- সমাবেশ করে খালেদা জিয়া প্রার্থীদের পক্ষে আইন ভেঙ্গে ভোট চাচ্ছেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাই। আমরা নগরবাসীর বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আমরা হেফাজতের মতো সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির উন্মত্ততার পথে ফেরার ফাঁদে পা দেব কিনা, নাকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকব। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে, প্রকাশ্যে জনসভা করে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার করা যাবে না। অথচ নববর্ষের দিন নয়াপল্টনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে হাজার হাজার লোকের সমাবেশে খালেদা জিয়া দুই মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এটি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কিনা, আমাদের প্রশ্ন। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা হান্নান শাহসহ অনেকে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করেছেন। এক কোটি মানুষের এই নগরীতে এত চমৎকার পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ পর্যন্ত কোন প্রার্থী অভিযোগ করেননি। এই পরিবেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। এর আগে স্থানীয় সরকারের অনেক নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হয়নি। বর্ষবরণের দিন টিএসসিতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবকের হাতে নারীরা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় তিনি নিন্দা জানিয়ে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সকল দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঘটনার ব্যর্থতার জন্য পুলিশ বাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সহস্র নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আধুনিক ঢাকা গড়ে উঠবে। ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ আর গৌরবের ঢাকাকে আমরা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নগরী গড়ে তোলার সুবর্ণ সুযোগ এখনই। তাই আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে সমর্থন জানিয়ে নাগরিক কমিটি কাজ করছে। এ দুই প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, আমাদের লক্ষ্য সুন্দর ও বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলা। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন,আধুনিক শহর গড়ে তুলতে এই দুই প্রার্থীকে ভোট দেয়ার বিকল্প নেই। কারণ দু’জনেই যোগ্য প্রার্থী। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ও পিছিয়েপড়া লোকজন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে ঢাকার আকাশ থেকে মুক্তির পতাকা হেফাজত, যুদ্ধাপরাধী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও বোমাবাজরা ছিনিয়ে নেবে, তা দেখতে চাই না। ২৮ তারিখের নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রার্থীদের ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, যারা উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করছেন তাদের ভোট দিন। সন্ত্রাসী, জঙ্গী, বোমাবাজদের না বলুন। আমি আশা করব নাগরিকরা এমন কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না, যেন আমরা সবাই সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে যাই। অধ্যাপক ড. নাজমা শহীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাহকরা কখনই বোমাবাজদের সমর্থন দিতে পারে না। নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের প্রার্থীদের বিজয়ী করে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীকে কঠোর জবাব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বলেন, মৌলবাদী চক্রান্তের প্রথম আঘাত নারীর দিকেই। এরই ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণের দিন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভোটকেন্দ্রের ভেতর সিসিটিভি থাকলে ভোটারের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীজুড়ে ক্যামেরা বসালে নাগরিক কমিটির কোন আপত্তি নেই। সকল বক্তাই তাদের বক্তব্যে নিজেদের সমর্থিত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তিন প্রার্থী ঢাকা উত্তরের আনিসুল হক, দক্ষিণের সাঈদ খোকন এবং চট্টগ্রামের আ জ ম নাছির উদ্দিনকে জয়ী করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাসেল আশেকী, ফিরোজ হোসেন, হানিফ খান প্রমুখ।
×