ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাকিবের পর এবার পালা মাশরাফির

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

সাকিবের পর এবার পালা মাশরাফির

মিথুন আশরাফ ॥ সাকিব নেতৃত্ব দিয়ে বেলুনটা ওড়ানোর ব্যবস্থা করে দিয়ে গেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিতলেন। এবার মাশরাফির তা ওড়ানোর পালা। পারবেন বেলুন ওড়ানো বলতে আজই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিতে? নিষিদ্ধের বাঁধা কাটিয়ে আবার অধিনায়ক হিসেবেই খেলতে নামা মাশরাফি বিন মর্তুজা সেই বিশ্বাস যেন করার সাহসই দিলেন। বলে ফেললেন, ‘আমরা জিততে চাই।’ বাংলাদেশ জিতে গেলেইতো হয়ে যায়। এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের ফয়সালা আজই হয়ে যায়! বাংলাদেশ আজই সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চায়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ দুপুর আড়াইটায় খেলতে নামার আগের দিন এমন এক আবহ তৈরি হয়ে গেছে শুধুই মাশরাফিদের খোঁজ হচ্ছে। ১৯৯৯ সালের পর যে বাংলাদেশ দলটি পাকিস্তানকে হারাতেই পারছিল না, ১৬ বছর অপেক্ষার পর সেই বাংলাদেশ আবারও হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। জয়টিও এসেছে আবার ৭৯ রানের বড় ব্যবধানেই। মাশরাফিদের খোঁজ হওয়ারই কথা। কিন্তু টাইগারদের মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কোনভাবেই পাওয়া গেল না। অনুশীলনই যে কেউ করলেন না। সবাইকে মিলল যে হোটেলে আছেন মাশরাফিরা, সেই সোনারগাঁও হোটেলে। পাকিস্তান ক্রিকেটারদেরও খোঁজা হয়েছে। কিন্তু তাদেরও অবস্থা একই। বাংলাদেশ দল জিতে, একদিন বিরতি দিয়েই পরের ম্যাচ থাকায় একদিন বিশ্রাম নিয়েছেন। বিশ্রাম নিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটাররাও। তবে হেরে। তাই তো মিডিয়ার সামনে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা আসেন, কথাও বলেন। কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে হেরে এতটাই বিধ্বস্ত পাকিস্তান দল, বাংলাদেশী মিডিয়ার ধারেকাছেও আসতে রাজি নন কোন পাক ক্রিকেটার! এরই মাঝে আবার মাশরাফি জানান দিলেন, ‘আমরা কোন সিরিজ খেলতে নামলে প্রতিটি ম্যাচ জেতার চেষ্টা করি। এই মুহূর্তে আমাদের জন্য দ্বিতীয় ওয়ানডেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জিততে চাই। এটা জিতলেই আমরা সিরিজ জিতে যাব। পরের ম্যাচেও নিশ্চয়ই আমরা হারের জন্য নামব না। তবে আপাতত দ্বিতীয় ওয়ানডে নিয়েই ভাবছি।’ এ কথাগুলো পাকিস্তান ক্রিকেটারদের কানে নিশ্চয়ই যাবে। গেলে আবারও নিশ্চয়ই চাপে পড়ে যাবে পাক ক্রিকেটাররা। আর তাতে লাভ হবে কাদের? আবারও বাংলাদেশেরই। সিরিজ শুরুর আগে সাকিব যে কাজটি করে দিয়েছেন, ‘ফেবারিট’ বলে; তা ভালভাবেই কাজে লেগেছে। এমন চাপই নিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেটাররা, সেই চাপে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে। হারই হয়ে যায় এবার নিয়তি। মাশরাফির কথা এবার কানে যেতেই নিশ্চয়ই পাক ক্রিকেটাররা ফুঁসতে থাকবেন। কোচ ওয়াকার ইউনুস ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারা ম্যাচে খেলেছেন। এবার কোচ হয়ে পাকিস্তানকে আবারও হারতে দেখেছেন। তার নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে হারানোর তর সইছে না। কিন্তু কিভাবে তা সফল করতে পারবে পাকিস্তান? এক কথায় বললে, প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে, সেইভাবে খেললে সাফল্যের কোন সম্ভাবনাই পাকিস্তানের নেই। মাশরাফিও তাই বুঝিয়ে দিলেন, ‘এ রকম (প্রথম ওয়ানডের মতো) খেলতে পারলে যে কোন দলের বিপক্ষে যে কোন সময় জেতা সম্ভব। জেতা সম্ভব মানে জেতাই যায়। আশা করছি যদি আমরা প্রথম ওয়ানডের মতো ভুলত্রুটি কম করি জেতার সুযোগ থাকবে।’ জেতার জন্য অবশ্য আবারও প্রথম ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান তামিমকে শুরুটা ভাল করতে হবে। মাশরাফিই যেমন বললেন, ‘আমি সবসময়ই বিশ্বাস করতাম তামিম ফর্মে ফিরবে। আবার স্বরূপে ফিরবে। তবে এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। আর জিততে হলে অবশ্যই শুরুটা সবসময়ই ভাল হতে হবে।’ প্রথম ওয়ানডেতে শুধু তামিমই নন, সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহীমও। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম এমন হলো, এক ইনিংসে দুই সেঞ্চুরিয়ানের দেখা মিলল। সেই সঙ্গে রেকর্ড জুটি, রেকর্ড স্কোরও হলো। তামিমের পর যে মুশফিক শতক করলেন, সেখানেই মূলত পাকিস্তানও হারের শঙ্কাতেই পড়ে গেল। মাশরাফি তো ‘রান মেশিন’ই বলে ফেললেন মুশফিককে। মুশফিক যে এখন দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম নাম। বাংলাদেশ দল অবশ্য এখন এমন একটি দলে পরিণত হয়েছে, যে দলে ম্যাচ উইনারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। একটা দল যখন একক কারও ওপর নির্ভরশীল না থাকে তখন উন্নতি হতে বাধ্য। বিশ্বকাপে দল যে নৈপুণ্য দেখিয়েছে, সেই ধারাবাহিকতা তাই বজায়ও রয়েছে। প্রথম ওয়ানডেতে জেতার পর এখন দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও সেই একই নৈপুণ্য বজায় রাখার চ্যালেঞ্জও আছে বাংলাদেশের সামনে। চ্যালেঞ্জ জিতলেই তো হয়ে যায়। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে সিরিজে হারানোও হয়ে যায়। আজই সেই দিনটি হোক, সেই প্রত্যাশাই করা হচ্ছে।
×