দেশের কয়েকটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা, হানাহানি, সংঘর্ষ, প্রাণহানি, নিপীড়ন, নির্যাতন, লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করার যে চক্রান্ত চলে আসছে, এসব ঘটনা যেন সে চক্রান্তকে আরও জটিল করে তুলছে। এমনিতেই বিএনপি-জামায়াত জোটের তিন মাসের বেশি অবরোধ-হরতালের কারণে নতুন শিক্ষাবর্ষে ক্লাস ও পরীক্ষা অনেকটা ব্যাহত হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও স্বাভাবিকভাবে হতে পারেনি। কিছুদিন ধরে অবরোধ-হরতাল নামক নাশকতার কর্মসূচী স্তিমিত হয়ে আসার পর ধারণা করা হয়েছিল যে, শিক্ষাঙ্গনগুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে। সাময়িক যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে গুরুত্ব দেয়া হবে। এবং সেটাই কাম্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, গত কদিন ধরে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, হানাহানি, সহিংসতা, এমনকি যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, যা কোনভাবে প্রত্যাশিত হতে পারে না। এসব ঘটনা শিক্ষাঙ্গনকে কালিমালিপ্ত করেছে। অবশ্য ছাত্র-শিক্ষকরাই শুধু সকল ঘটনায় জড়িত তা নয়, স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরাও কোন কোনটির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দিনাজপুরের ঘটনায় ছাত্র সংগঠনের দুটি গ্রুপের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র সংঘর্ষে দুজন ছাত্রও নিহত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে গত কয়েকদিনে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তাতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বয়ে গেলেও কার্যত এসব রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। কয়েকটি ঘটনার সময় পুলিশ কাছাকাছি উপস্থিত থাকলেও যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এদিকে ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির বিরুদ্ধে বুয়েটের এক শিক্ষকের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে বাগ্বিত-ার এক পর্যায়ে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে।
রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি। উপাচার্য ও শিক্ষকদের হুমকি ও লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটিয়েছেন এক রাজনীতিবিদ। ওদিকে শিক্ষামন্ত্রীকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলেও কাউকে চিহ্নিত বা আটক করা যায়নি। দেশের শিক্ষাঙ্গনে এভাবে হানাহানি, অরাজকতা, সন্ত্রাসী কা- চলতে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষাব্যবস্থায় স্বাভাবিকতা আসবে কিভাবে। যে কোন মূল্যে শিক্ষাঙ্গনের অস্থিরতা দূর করা, শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যে জরুরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এসবের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে দেশবাসী সেটাই প্রত্যাশা করে।
শীর্ষ সংবাদ: