ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১২ কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

১২ কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চলতি অর্থবছর বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি হবে ১২টি কারণে। কারণগুলো তুলে ধরে এ রকমই পূর্বাভাস দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। সংস্থাটির এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের মতে, রাজনৈতিক হিংসাশ্রয়ী কার্যক্রমে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর মতে, ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকার ক্ষতি, এফবিসিসিআই বাজেটের অর্ধেক মানে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ক্ষয়-ক্ষতি প্রাক্কলনের পার্থক্যের মাত্রা প্রায় সীমাহীন। বাস্তব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে বলতে হয় এসব প্রাক্কলনের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। সবই অনুমান মাত্র। তাই প্রবৃদ্ধির হার বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কিংবা আরও বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু জনগণ হিংসাশ্রয়ী রাজনৈতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনানুগভাবে দ্রুত এসব নৈরাজ্যিক কার্যক্রম দমনে সক্ষম হয়েছে এবং রাজনীতি নিয়মতান্ত্রিক ধারায় দ্রুত ফিরে এসেছে এসব বিবেচনা করার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির চলমান গতিধারা বিশ্লেষণ করে দৃঢ়তার সঙ্গেই জিইডি প্রবৃদ্ধির এই প্রক্ষেপণ দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আইএমএফ ও এসকাপ বিগত কয়েক বছর যাবত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিষয়ে যেসব প্রক্ষেপণ দিয়েছিল, তার কোনটিই সঠিক হয়নি। চলতি বছরেও তাদের অনুমান সঠিক হওয়ার কোন কারণ দেখি না। বিশ্বব্যাংক গত অর্থবছরে প্রক্ষেপণ দিয়েছিল জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। জিইডির প্রতিবেদনে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ অথবা তার উপরে যাওয়ার কারণ হিসেবে ১২টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, বাজেট ব্যয় গত বছরের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ১২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এর প্রভাব পড়বে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমান বছরে বেড়েছে ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়ছে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হয়েছে ২৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে রফতানি আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আমদানি ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে বেড়েছে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম হয়নি। বরং উভয় ক্ষেত্রেই ৩৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রবাসে শ্রমিক পাঠানো ২০১৪ সালের জানুয়ারি-মার্চ থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি-মার্চে ১৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি পাঠানো হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে তা ১২ হাজার ৬২১ জন বেশি। ২০১৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিটেন্স আয় সমান ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এসেছে। দেশে প্রবাসী আয় চাহিদাকে উজ্জীবিত করে। বৈদেশিক সহায়তা বেশি পাওয়া গেছে এবং অর্থনীতিতে তা ব্যয়িত হচ্ছে। এর পরিমাণ হচ্ছে ২০১৪ সালের জুলাই-জানুয়ারিতে যা ছিল ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৫ সালের একই সময়ে তা এসেছে ১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। খাদ্য উৎপাদনসহ কৃষি পণ্যের সামগ্রিক উৎপাদন বেড়েই চলছে। রাজনৈতিক হিংসাশ্রয়ী কার্যক্রম বাজারে তেমন প্রভাব ফেলেনি। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে বাজারে কোন পণ্য দুষ্প্রাপ্য হয়নি কিংবা দাম বাড়েনি। কোন কলকারখানা বন্ধ হয়নি। সময়ে অসময়ে কাজ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এদেশের অর্থনৈতিক এজেন্টরা পারদর্শী। বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে (বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে)। বিশ্ব আবশ্যকীয় পণ্য ও জ্বালানি মূল্য নিম্নমুখী। ভারত ও চীনে প্রবৃদ্ধির হার এবার উর্ধমুখী (ফলে আমাদের রফতানিকে আরও গতিশীল রাখবে)। এসব কারণেই চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা (২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ফলে ২০১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। যা স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলে হয়ত ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারত। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, প্রবৃদ্ধির অগ্রগতি ধরে রেখে আগামীতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। উৎপাদনে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেবা খাত, এ খাতের ক্ষতি ৬৮ শতাংশ। দ্বিতীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে শিল্প খাত, এ খাতের ক্ষতি ২৫ শতাংশ এবং তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি খাত, এ খাতের ক্ষতি ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের এ পূর্বাভাসের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার পরিকল্পনামন্ত্রী মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বব্যাংকের দেয়া পূর্বাভাস সঠিক নয়। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যেই। কেননা ইতোমধ্যেই গত নয় মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কয়েক মাসের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের যে পূর্বাভাস প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, সেটি ঠিক নয়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলো অনেক ভাল। ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।
×