ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তামিম-মুশফিক সেরা জুটিতে কাঁপল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

তামিম-মুশফিক সেরা জুটিতে কাঁপল পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ তামিম ইকবাল (১৩২) আর মুশফিকুর রহীম (১০৬)। দুইজনই শতক করলেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশও দেখল এক ম্যাচে দুই ব্যাটসম্যানকে সেঞ্চুরি করতে। শুধু কি তাই। মুশফিক-তামিম সেরা জুটিই গড়ে ফেললেন। বাংলাদেশ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৭৮ রানের জুটিটিই গড়ে ফেললেন। এ দুইজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান শিবিরেও যেন প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হতেই কম্পন ধরে গেল। আগেই একটা ‘ফেবারিট’ তকমা বাংলাদেশের গায়ে সেঁটেছিল। তাই বলে এতটাই দুর্দান্ত খেলবে বাংলাদেশ! পাকিস্তান বোলারদের কিছুই মনে করল না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ৪৮ রানে গিয়ে সৌম্য সরকার (২০) রানআউট হলেন। আর ৬৭ রানে গিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৫) ক্যাচআউট হয়ে গেলেন। পাকিস্তানের প্রাপ্তি বলতে তো এটিই। বাংলাদেশের ইনিংস তো শুধু তামিম আর মুশফিকময়ই হয়ে থাকল। তাতে বাংলাদেশ ৩২৯ রানও গড়ে ফেলল, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরও। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম-সৌম্য। কিন্তু হঠাৎই রানের গতি একটু শ্লথ হয়ে গেল। সৌম্যের পর যখন মাহমুদুল্লাহ আউট হলেন, এর পর থেকেই রানের চাকা সচল হতে থাকে। তামিম-মুশফিক মিলে পাকিস্তানী বোলার জুনায়েদ খান, রাহাত আলী, ওয়াহাব রিয়াজ, সাঈদ আজমলদের পাড়ার মহল্লার বোলার বানিয়ে ফেলেন। এগিয়ে যেতে যেতে একটা সময় দুইজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ২০১২ সালে মুশফিক-এনামুলের করা ১৭৪ রানের জুটির রেকর্ড ভাঙ্গেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ২০০৬ সালে রাজিন-হাবিবুলের বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ করা ১৭৫ রানের জুটিও ভেঙ্গে ফেলেন তামিম-মুশফিক। নতুন রেকর্ড গড়েন। আর ৩ রান যোগ হতেই অবশ্য তামিম আউট হয়ে যান। তবে আউট হওয়ার আগে সমালোচনার ভালই জবাব দেন। তামিমের ব্যাটে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই ৯৫ রানের ইনিংস এসেছিল। এছাড়া পুরো বিশ্বকাপে ফ্লপ থাকায় চরম সমালোচনা হচ্ছিল। তামিমকে নিয়ে কটু কথার ঝড় বইছিল। তামিম অবশেষে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে এসে জবাব দিয়ে দেন। আউট হওয়ার আগে ১৩৫ বলে ১৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩২ রান করেন। দলীয় ২৪৫ রানে আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক তুলে নেন। তামিম আউট হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মুশফিকও শতক পান। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা মুশফিক প্রথম ওয়ানডেতে এসে শতকই পেয়ে যান। ২৯৫ রানে আউট হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে শতক করেন মুশফিক। শেষে ৭৭ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১০৬ রান করে আউট হন মুশফিক। ৬৯ বলে শতক করেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এ ব্যাটসম্যান। আর ৭ বল আগে শতক করলে সাকিব যে ৬৩ বলে শতক করেছিলেন, দ্রুততম শতক করার রেকর্ডটিও ভাঙ্গতে পারতেন মুশফিক। কিন্তু এরপরও দুর্দান্ত একটি কাজই করে দিয়েছেন। স্টেডিয়াম ভরা দর্শকের মন ভরিয়ে দিয়েছেন। মুশফিক শতক করাতেই প্রথমবারের মতো কোন ওয়ানডে ম্যাচে দুই সেঞ্চুরিয়ানকে দেখতে পেল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে বাংলাদেশ। তাই ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দলকে নিয়ে আলাদা রকম আশাই তৈরি হয়। পাকিস্তানকে হারিয়ে দেবে এবার, সেই প্রত্যাশা শুধু ক্রিকেটপ্রেমীরাই নন, দেখেন ক্রিকেটাররাও। ক্রিকেটারদের আশা যেন সফল হয় এ জন্য দুপুর আড়াইটায় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে। ১৬ কোটি বাঙালীর বিরাট আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল আগেও ছিল ক্রিকেট। বিশ্বকাপের পর সেটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বকাপ পেরিয়ে টাইগারদের প্রথম সিরিজ। আগ্রহের অন্ত নেই ক্রিকেটপ্রেমীদের। ছুটির দিন হওয়ায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম ওয়ানডে তাই আনন্দের উপলক্ষ হয়েই ধরা দিয়েছে গোটা দেশে। লড়াইয়ের মঞ্চ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের চারপাশের চিত্রটা শুক্রবার লোকেলোকারন্য সমাবেশে রূপ নেয় ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দুই আগে থেকেই। টিকেট পাওয়া ভাগ্যবানরা যেমন আছেন। টিকেটপ্রার্থীর সংখ্যাও অনেক। হন্যে হয়ে টিকেট খুঁজছেন হাজারও দর্শক। কোথাও একটি টিকেটের সন্ধান মিলছে তো হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শত মানুষ। নানা রঙেঢঙে হাজির দর্শকরা। স্টেডিয়াম চত্বরটাও রঙিন। বসেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। পকেট ভারি হচ্ছে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। টাইগারদের শুভ কামনা সংবলিত টি-শার্টের ছোট দোকান ফুটপাথে। প্রচুর রোদ বলে পানীয় বিক্রির ধুম লেগে ছিল। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, কী নেই। মাঠ মাতানোর সব উপকরণই হাজির। কেউ কেউ আবার টাইগার্স ফ্যান ক্লাবের ব্যানারে দলবেঁধে এসেছেন একই সাজে। সেখানে টাইগারিয়ান, সাকিবিয়ান জাতীয় ব্যানারও ছিল। দর্শকরা যখন স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেন খেলা শুরু হওয়ার আগেই দেখলেন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করা এক বাংলাদেশ দলকে। যেখানে মুশফিক-মুমিনুলকে নিয়ে খোশ মেজাজে মজা করছেন মাশরাফি। যেই খেলা শুরু হলো শুধু আনন্দই করলেন দর্শকরা। শুরুতে একটু ধীর গতিতে হয়েছে খেলা। কিন্তু যেই তামিম-মুশফিক জুটি গড়তে শুরু করলেন। শুধু বাউন্ডারি হতে থাকল। দর্শকরাও সে কি আনন্দ করতে থাকলেন। একটা সময় গিয়ে বাংলাদেশ দল অনেক কিছুই উপহার দিল। তামিমের শতক হলো। মুশফিকও শতক করলেন। দুইজন মিলে সর্বোচ্চ জুটি গড়লেন। আবার সর্বোচ্চ স্কোরও হলো। সবদিকেই ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাস দেখালেন। সেই আত্মবিশ্বাসে মাঠেও বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলল। আর দর্শকরাও প্রাণভরে ক্রিকেটারদের খেলা উপভোগ করলেন। যেমন খেলা দেখতে চেয়েছেন তেমনই দেখলেন। তামিম-মুশফিক মিলে এমনই দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন, বাংলাদেশ ইনিংস শেষ হতেই কাঁপতে শুরু করল পাকিস্তান।
×