ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাচ গান কবিতার সম্মিলিত সঙ্গীতালেখ্য ‘এবং রবীন্দ্রনাথ’

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

নাচ গান কবিতার সম্মিলিত সঙ্গীতালেখ্য ‘এবং রবীন্দ্রনাথ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চমৎকার এক আয়োজন। কবিতার দোলায়িত ছন্দের সঙ্গে মিশে গেল হৃদয়স্নাত গানের সুর। সেই সঙ্গে নবমাত্রা যোগ করল অনবদ্য নৃত্যের উপস্থাপনা। নাচ, গান ও কবিতার এমন সম্মিলিত পরিবেশনার দেখা মিলল জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে। শুক্রবার বৈশাখী সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো সঙ্গীতালেখ্য ‘এবং রবীন্দ্রনাথ’। রবীন্দ্রনাথ এবং তার পূর্ববর্তী ও পরবর্র্তীদের কিছু সাদৃশ্যসম্পন্ন গান, কবিতা ও চিন্তার সম্মিলনে এই নিরীক্ষাধর্মী সঙ্গীতালেখ্যটি রচিত হয়েছে। উঠে এসেছে পল্লীকবি জসীম উদ্্দীনের কবিতা থেকে শুরু করে লালন ফকিরের গান। উচ্চারিত হয়েছে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের সৃষ্টিসম্ভার থেকে। সব মিলিয়ে সঙ্গীতের সুর মূর্ছনায়, বাণীর মর্মস্পর্শে ও নৃত্যের কারুকার্যে মনোমুগ্ধকর এক ধ্বনিনিসর্গের সৃষ্টি হয়। গতানুগতিক পরিবেশনার বাইরে ভিন্ন আঙ্গিকের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি আয়োজনটি ছিল শ্রোতা-দর্শকে পরিপূর্ণ। প্রধান অতিথি হিসেবে নিরীক্ষাধর্মী সঙ্গীতালেখ্যটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফাইজুল লতিফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের সভাপতি এম আজিজুর রহমান। আজিজুর রহমান বলেন, এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে নতুন করে তাকে উপলব্ধির একটি প্রচেষ্টা এই অনুষ্ঠান। এর মাধ্যমে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন রবীন্দ্রনাথ। গান, কাব্যপাঠ ও নৃত্যের ব্যতিক্রমধর্মী এই আয়োজনের শুরুতেই অনুষ্ঠান সম্পর্কে চমৎকার করে বলে যান অভিনয়শিল্পী শম্পা রেজা। এর পর গাওয়া হয় গীতাঞ্জলি থেকে নির্বাচিত গান। পরিবেশন করেন কলকাতার জনপ্রিয় সঙ্গীত জুটি সৌম্যজিত ও সৌরেন্দ্র। এছাড়াও শিল্পীদ্বয় পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘জাত গেল জাত গেল বলে’। গানের ফাঁকে ফাঁকে শম্পা রেজা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও প্রবন্ধের সম্মিলিত পাঠে অংশ নেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও লালনগীতি পরিবেশন করেন সঙ্গীতশিল্পী স্বপ্নীল সজীব। কবিতা পাঠে অংশ নেন বাচিকশিল্পী সামিউল ইসলাম পোলাক। মঞ্চস্থ হয় ধ্রুপদী নৃত্য কথাকলী। পরিবেশন করেন ভারতের বিখ্যাত কথাকলী নৃত্যশিল্পী কলাম-ালম গৌতম। এছাড়াও নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী চাঁদনী ও মনিপুরি নৃত্যশিল্পী মৌ দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুজিবনগর দিবস উদ্যাপনের বিশেষ আয়োজন ॥ শুক্রবার ছিল মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুর জেলার আম্রকাননে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার। আর মুজিবনগর দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজন করে আলোচনা, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনাপর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম । শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম এবং মুজিবনগর সরকারের গার্ড অব অনার প্রদানকারী দলের অধিনায়ক মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। আলোচনা শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বে পাঠ করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ। পাঠ করেন শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ শিল্পী অপূর্ব। প্রদর্শিত হয় ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারো দানে পাওয়া নয়’ গানের সঙ্গে ‘গণহত্যা’ শীর্ষক স্লাইড শো। উপস্থাপিত হয় তাপুর কোরিওগ্রাফিতে নৃত্যালেখ্য ‘যশোর রোড’। দেখানো হয় তথ্যচিত্র। এতে উঠে আসে মুজিবনগর সরকার গঠন প্রক্রিয়াসহ চলচ্চিত্র মুক্তির গানের অংশবিশেষ। লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় বাংলা কলেজ যুব থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটকের অংশবিশেষ। আলোকচিত্র প্রদর্শনী টু ইয়াং টু ওয়েড ॥ পরিণত বয়সের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় অনেক কিশোরীকে। আর এই বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রসাংবাদিক স্টেফানি সিনক্লেয়ার। এই আলোকচিত্রীর এ বিষয়ক আলোকচিত্র নিয়ে ধানম-ির আঁলিয়স ফ্রঁসেজে শুরু হলো আলোকচিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম টু ইয়াং টু ওয়েড। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ঢাকার কানাডীয় হাইকমিশন ও আঁলিয়স ফ্রঁসেজ। শুক্রবার বিকেলে আঁলিয়স ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন কানাডার হাইকমিশনার এইচ ই বেনট-পিয়েরে লারামি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মাহজেবীন খালেদ। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন স্টেফানি সিনক্লেয়ার। বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মূল প্রতিপাদ্য। বাল্যবিয়ে, অল্পবয়সে ও জোরপূর্বক বিয়ে; এমন এক সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর চর্চা যা বিশ্বব্যাপী কিশোরী ও তরুণীদের জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে, অল্পবয়সে ও জোরপূর্বক বিয়ের হার ক্রমশ কমছে; কিন্তু বাল্যবিয়ের এই হার এখনও পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীর বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিদ্যমান হার পৃথিবীর সর্বোচ্চ। বাল্যবিয়ে, অল্পবয়সে ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধের বিষয়টিকে কানাডা তার পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং বাংলাদেশে এই সমস্যা মোকাবেলায় পাঁচ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ব্যয় করছে। প্রদর্শনী চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং ৫টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। শিল্পকলায় সঙ্গীতসন্ধ্যা নবরবির কিরণে ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যশালা মিলনায়তনে নবরবির কিরণে শীর্ষক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন গীতাঞ্জলি । অনুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন কণ্ঠশিল্পী সালমা আকবর। বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের দর্শনীর বিনিময়ে নিয়মিত অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এই সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদীচীর গণসঙ্গীত কর্মশালা আজ শুরু ॥ গণসঙ্গীতকে আরও ভালভাবে অনুধাবন করা, গণসঙ্গীত চর্চার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা এবং গণসঙ্গীত চর্চার নানা দিক সম্পর্কে খুঁটিনাটি নানা বিষয় জানার লক্ষ্যে আজ শনিবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সঙ্গীত বিভাগ আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ‘গণসঙ্গীত কর্মশালা-২০১৫’। শনি ও রবিবার অনুষ্ঠিত হবে এ কর্মশালা। আজ সকাল ৯টায় কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করবেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট গণসঙ্গীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম। এছাড়াও এতে উপস্থিত থাকবেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শংকর সাওজাল, শিবাণী ভট্টাচার্য এবং সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। শিল্পকলা একাডেমির মহড়াকক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রশিক্ষণ দেবেন ভারতের বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত গবেষক ও গণসঙ্গীতশিল্পী মুভেন্দু মাইতি এবং তার সহযোগী তাপসী রায় চৌধুরী।
×