ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় গড়তে জোর প্রশাসনিক প্রস্তুতি

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যেই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যেই

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ১২ মেয়র ও ২৭৫ কাউন্সিলর প্রার্থীর ভোটের প্রচারে উৎসবমুখর আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ৪১ ওয়ার্ডজুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সকাল থেকে রাত অবধি গণসংযোগের কারণে ভোটাররা নির্বাচনের আমেজ পেতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ১২ মেয়র প্রার্র্থীও প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক গণসংযোগে লিপ্ত থেকে নির্বাচনী হাওয়াকে জোরালো করে তুলেছেন। মেয়র পদে মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলমÑ কোথাও উপস্থিত থেকে আর কোথাও তার সমর্থকরা নানাভাবে প্রচারে লিপ্ত থেকে ভোটারদের কাছে টানার অবিরাম প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের নির্বাচন নিয়ে ভোটার মহলে নানা হিসাবনিকাশ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে রাজনীতি সচেতন ভোটাররা স্ব স্ব দলীয় সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর গুণগানে মুখর। দুই মেয়র প্রার্র্থীও নতুন নতুন আশার আলো দেখাতে শুরু করেছেন। চট্টগ্রামকে স্বপ্নের মেগাসিটিতে পরিণত করা, জলাবদ্ধতা মুক্ত চট্টগ্রাম গড়ার সেøাগানে আ জ ম নাছিরের পক্ষে মাইকিংয়ের পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় গণসংযোগ চলছে। অপরদিকে, বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলমও তার গণসংযোগ ইতোপূর্বেকার চেয়ে এখন বহু বাড়িয়েছেন। তার প্রধান বক্তব্য কর্পোরেশনে ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব অসমাপ্ত কাজ রয়ে গেছে তা সমাপ্ত করতেÑ এ সেøাগানে ভোটারকে কাছে টানার প্রয়াস চালাচ্ছেন। যদিও তার ৫ বছরের মেয়র থাকাকালীন ব্যর্থতার পরিসংখ্যান বহু। এদিক থেকে একেবারে নতুন প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন মনজুরের চেয়ে প্লাস পয়েন্টে রয়েছেন। এছাড়া তিনি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা এবার ঐক্যবদ্ধভাবে নাছিরের জন্য প্রতিনিয়ত নানামুখী প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্র্থীদের চেয়ে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির কার্যক্রম নিয়েই সমালোচনা বেশি। সরকারী দলের বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন ও মামলা-হামলার নানা অভিযোগ নিয়ে সরকারবিরোধী মহল সোচ্চার। পক্ষান্তরে, সরকারী দলের পক্ষ থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ নানামুখী অপকর্ম ও রাজনীতির নামে সন্ত্রাস সৃষ্টির বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সিটি নির্বাচনে বিএনপির পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার জবাব দেবে। বিএনপি সমর্থকরা বলছে, তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে নীরব ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে অনাস্থার বহির্প্রকাশ ঘটাবে। তবে রাজনীতি সচেতন বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের এই তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আগামীতে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রতিফলন ঘটাবে। এ প্রতিফলন ইতিবাচক বা নেতিবাচক হতে পারে। ইতিবাচক হলে সরকারের লাভ আর নেতিবাচক হলে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের লাভ; যা নিয়ে ২০ দলীয় জোট তাদের স্তিমিত হয়ে যাওয়া লাগাতার আন্দোলন আবার নতুন করে জাগিয়ে তোলার প্রয়াস নিতে পারে। এদিকে, চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে এখন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পোস্টার-লিফলেটে সয়লাব। তবে বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সাদ্দাম নামের যে যুবক মারা গেছে তার নেপথ্য কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। যদিও ঘটনা নিয়ে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু এলাকার অনেকে বলেছেন, ঘটনাটি জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের হিসেবে ঘটেছে। এছাড়া ৪১ ওয়ার্ডজুড়ে এ পর্যন্ত দৃশ্যমান সন্ত্রাসী কোন কর্মকা-ের ঘটনা এখনও ঘটেনি, যা নগরবাসী ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছে। এদিকে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যেই তাদের মাঠ পর্যায়ের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কাজও শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। ১৮ লক্ষাধিক ভোটার রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। ভোটকেন্দ্র করা হচ্ছে ৭১৯টি। এর মধ্যে ৫৯৭টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পুলিশ চিহ্নিত করেছে। আর এ কারণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে ভোটের দিন ছাড়াও এর আগে ও পরে। এ সংখ্যা ৬ সহস্রাধিক। আর র‌্যাব ও আনসারসহ সিটি নির্বাচনে মোতায়েন থাকবে ১১ সহস্রাধিক। তবে কি পরিমাণ বিজিবি মোতায়েন হচ্ছে তা এখনও জানা যায়নি। সেনা মোতায়েন প্রশ্নে আগামীকাল নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে তারপরই পরিষ্কার হবে বিষয়টি। তবে বিজিবির টহল থাকবে জোরালো। এ অবস্থায় ভোটার মহলে আশার সঞ্চার হয়েছে এই বলে যে, এ নির্বাচনে ভোটের কারচুপি ঘটানো সম্ভব নাও হতে পারে। তারপরও সরকার বিরোধীরা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলসহ জাল ভোটের নানা প্রশ্ন তুলছে। যদিও এ ধরনের কোন লক্ষণ এখনও নেই। তবে সরকার সমর্থিতরা দাবি করে চলেছে এ নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বিরোধী ২০ দলীয় জোটের সাম্প্রতিক নৈরাজ্যকর ঘটনা ও মানুষ হত্যার জবাব দিতে প্রস্তুত। আবার বিরোধীরাও বলছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে সরকারী দল সমর্থিতদের ধস নামানো পরাজয় ঘটবে। এ ধরনের আলাপ-আলোচনায় মুখর এ নগরীর ভোটার মহল। আর মাত্র ১০ দিন পর সব প্রশ্নের জবাব মিলবে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
×