ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী হয়রানির বিরুদ্ধে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সমাবেশ

নরপশুদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

নরপশুদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায়  আনা হোক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কয়েকজন নারীর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে শুক্রবার বিকেলে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সম্মুখে আয়োজিত এ সমাবেশ থেকে নারীর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আগামী ২১ এপ্রিল এক মানববন্ধনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে এ প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান ও জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। শুরুতে বক্তব্য রাখেনÑ পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীরা যৌন হয়রানীর শিকার হয় এটা ভাবতে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই, সঙ্গে সঙ্গে ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত এসব নরপশুদের শাস্তির দাবি জানাই। আখতারুজ্জামান বলেন, ধিক্কার জানাই এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনাবলিকে। বাঙালী সংস্কৃতিকে নস্যাৎ করার এ এক ষড়যন্ত্র। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা না হলে, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। হাসান আরিফ বলেন, বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এতে সবাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিলিত হয়। এ দিনে প্রকাশ্য দিবালোকে মা-বোনদের ওপর হামলা করে, এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কী হতে পারে? কোন দেশপ্রেমিক এটা করতে পারে না। যারা স্বাধীনতার পরাজিত শত্রু, একমাত্র তারাই এমন কাজ করতে পারে। আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এসব নরপশুদের প্রতিহত না করলে, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতার সব কিছুই উপহাসে পরিণত হবে। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, অন্যায় ও অন্যায়কারীর সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতি কর্মীদের কোন আপোস নেই। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়, ভাবতে অবাক লাগে, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন, গণহত্যার বিরুদ্ধে বাক্য উচ্চারণ, সেখানে নববর্ষে নির্বিচারে নারীরা লাঞ্ছিত হয়। নারীরা যে মানুষ এটা যেন দেশ থেকে মুছে গেছে। আমরা রাজনৈতিক সঙ্কট পার করেছি কিন্তু রুচির সঙ্কট এখনও পার হয়নি। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি, এটা সম্পূর্ণরূপে তাদের ব্যর্থতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতা এ ঘটনাকে আরও উসকে দিয়েছে। আমরা নারীদের এ যৌন নিপীড়নের বিচার চাই। এ নরপশুদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হউক। রামেন্দু মজুমদার বলেন, আজ নিজেকে পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি। এ সব ঘৃণিত ঘটনার জন্য আমাদের গৌরবের জায়গা আজ কলুষিত হচ্ছে। এদের পশু বললে পশুরাও লজ্জা পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘৃণ্য ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নেই বললেই চলে। আমি ধন্যবাদ জানাই লিটন নন্দীকে, যে এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের সবার এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি নারীরা নির্যাতিত হওয়ার জন্য নয়। পহেলা বৈশাখে নারীরা লাঞ্ছিত হবে, তার জন্য আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই। যে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, তাঁর সেই চত্বরে আমাদের মা-বোনদের যৌন হয়রানী হতে হচ্ছে, অভিজিতের মতো ব্যক্তিদের মেরে ফেলা হচ্ছে, বাঙালী হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে? আমাদের দাবি, দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে এ নরপশুদের ছবি ছাপা হয়েছে। অচিরেই এদের ধরে শাস্তি দিতে হবে। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী ২১ এপ্রিল এক মানববন্ধন কর্মসূচী ঘোষণা করেন। টিএসসির বিপরীতে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের যে ফটকের সামনে নববর্ষে নারীরা লাঞ্ছিত হয়েছিলেন সেখানে এদিন বিকেল ৪টায় এক মানববন্ধনের ঘোষণা দেন তিনি।
×