ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তামিমের মোক্ষম জবাব...

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

তামিমের মোক্ষম জবাব...

মোঃ মামুন রশীদ ॥ আবেগটা তার জন্য ধরে রাখা সত্যিই বেশ কঠিন। বুকের ভেতর চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে রেখেছিলেন। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ম্যাচ আগেই ৯৫ রানের দুর্ধর্ষ একটি ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা তার কাছে অনেক, ধারাবাহিকভাবে এমন ইনিংসের আকাক্সক্ষা। কিন্তু সেটা এবার বিশ্বকাপে করে দেখাতে পারেননি। তাই অনেক সমালোচনার ঝড় গেছে তার ওপর দিয়ে। তবে বিশ্বকাপের পর প্রথম যে ম্যাচ খেলতে নামলেন সেখানেই তিনি হয়ে গেলেন ‘হিরো’। তিনি তামিম ইকবাল, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে স্বীকৃত। সফরকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতেই দুর্দান্ত এক শতক হাঁকিয়ে আর যেন ভেতরে পুষে রাখা চাপা ক্ষোভটা দমিয়ে রাখতে পারলেন না। বিচিত্র ভঙ্গিতে সেঞ্চুরির আনন্দটা উদযাপন করলেন, দু’হাত উঁচিয়ে দর্শকদের দিকে দেখালেন। তিনি যাই করুন না কেন, এখন তিনি বীর, এবার তিনি জয় করেছেন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের মন। তাই অভিযোগ, আপত্তি দূরে থাক তামিম যা করেছেন তাতেই আনন্দিত, সন্তুষ্ট, উৎফুল্ল দর্শকরা। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এ বাঁহাতি। শেষ পর্যন্ত ১৩৫ বলে ১৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম। তামিমই কিন্তু পারেন নিজেকে লড়াকু প্রমাণ দিতে। আগেও দিয়েছেন। ২০১২ এশিয়া কাপের কথা সবাই হয় তো ভুলে গেছেন। সেবার ফিটনেস নেই এমন অভিযোগে দল থেকেই বাদ দেয়া হয়েছিল তামিমকে একাদশ থেকে। এরপর তীব্র সমালোচনা এবং তৎকালীন প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তামিমকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল দলে। সেবার টানা চার হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিচিত্র এক উল্লাস করেছিলেন তামিম। তার দুর্দান্ত সেই নৈপুণ্যের কারণেই বাংলাদেশ দলও প্রথম কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল। চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে লড়তে পারাটা তামিমের স্বভাবের মধ্যেই আছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয়ের ভিতটাও রচনা করে দিয়েছিলেন তিনি ঝড়োগতির এক অর্ধশতক হাঁকিয়ে। এবারও দারুণ চাপে ছিলেন বাঁহাতি এ ওপেনার। ২১ ইনিংস সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। ধারাবাহিকভাবে তার ব্যাট থেকে রানও আসছিল না। তবে বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন প্রয়োজনীয় মুহূর্তে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ তার কারণেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বহুল আকাক্সিক্ষত জয়ের ম্যাচ। শুরু থেকেই তামিম ছিলেন দারুণ শান্ত। খেলছিলেন খুব ধীরেসুস্থে। ৭৫ বলে অর্ধশতক আদায় করেন। তবে সেঞ্চুরি পেতে ৩৮ বল খেলেছেন। সবমিলিয়ে ১১৩ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক অর্জন করেন তিনি। এর মধ্যে সাঈদ আজমলের এক ওভারে দুটি চার হাঁকিয়ে শতকে পৌঁছেন। ২০১৩ সালের পর আবার শতক পেলেন তিনি। এখন তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বাধিক ব্যক্তিগত রানের (৪২৫৭) মালিক। পেছনে ফেলেছেন সাকিব আল হাসানকে। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে ১৭৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন তিনি। যে কোন উইকেটে এটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা জুটি। এর আগে ২০০৬ সালে ফতুল্লায় কেনিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ উইকেটে হাবিবুল বাশার-রাজিন সালেহর ১৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিই ছিল ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা জুটি। দারুণ জবাব ব্যাটেই দিয়ে দিলেন তামিম।
×