ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

পদ্মায় বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে হার্ডিঞ্জ ও লালন সেতু

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

পদ্মায় বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে হার্ডিঞ্জ ও লালন সেতু

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ কেপিআইভুক্ত এলাকায় বালু উত্তোলন বা নদী ড্রেজিং করা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও পাকশী পদ্মা নদীর ওপর স্থাপিত লালন শাহ সেতুর স্প্যানের গোড়াতে ড্রেজার লাগিয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে লালন শাহ সেতুর স্প্যান যে কোন মুহূর্তে বসে গিয়ে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। একইভাবে কেপিআইয়ের নিয়মানুযায়ী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের উভয় পাড়ে ৫ কিলোমিটার করে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নদী থেকে বালু উত্তোলন বা ড্রেজিং করা নিষেধ রয়েছে। হার্ডিঞ্জ সেতু থেকে মাত্র ২শ’ মিটারের মধ্যে নির্মিত লালন শাহ সেতুর স্প্যানের গোড়া থেকে বালু উত্তোলন করায় এ সেতুটিও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে। রেল ও লালন শাহ সেতু প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। রেল ও সেতু বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি এবং প্রকৌশলীদের দেয়া অভিযোগ সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ সেতুটি কেপিআইভুক্ত। এজন্য কেপিআইয়ের নিয়মানুযায়ী হার্ডিঞ্জ সেতুর উত্তর দক্ষিণ উভয় পাড়ে ৫ কিলোমিটার থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন বা নদী ড্রেজিং করা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নদীর তীর ভাঙ্গনরোধে সেতু সংলগ্নতীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর শুল্ক মৌসুমে নদী থেকে বালু ও মাটি কেটে নিয়ে ইট ভাঁটিসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ঈশ্বরদীর লক্ষিকু-া, পাকশী, সাঁড়া, মাজদিয়া, আড়মবাড়িয়া, নলগাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারাসহ নদীতীরবর্তী উপজেলা এলাকায় প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪ ধারার ‘খ’ উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারী- বেসরকারী স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু ও মাটি তোলা যাবে না। রেল ও লালন শাহ সেতু প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আফজাল হোসেন জানান, হার্ডিঞ্জ সেতুর নিকট থেকে বালু উত্তোলন ঝুঁকিপূর্ণ। বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য সওজ কর্র্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাব। পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, কেপিআইভুক্ত হার্ডিঞ্জ ও লালন শাহ সেতুর উভয় পাড়ের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা সেতুর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাবনা জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন জানান, বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানা ছিল না। বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঈশ্বরদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, হার্ডিঞ্জ ও লালন শাহ সেতুর নিচ থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে লিজ দেয়া হয়নি। কেউ বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×