ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষবরণে নারী নির্যাতন

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

বর্ষবরণে নারী নির্যাতন

দেশের সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষবরণ। এটি জাত-পাত শ্রেণী নির্বিশেষে সর্ববৃহৎ অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এদিন রাজধানীর রমনা উদ্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাজুড়ে বিপুল জনসমাগম ঘটে। যানবাহন প্রবেশের সুযোগ তো থাকেই না, অনেক সময় গায়ে গা ঘেঁষে মানুষকে পথ চলতে হয়। তারপরও সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের ভেতর দিয়েই মানুষ এ উৎসব উদযাপন করে। এদিনের অনুষ্ঠানে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনার কথা শোনা যায় না। সুনির্দিষ্ট স্পটে এবারই তার ব্যতিক্রম ঘটতে দেখা গেল, যা সমাজের যে কোন সুস্থ মানুষের জন্যই অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও লজ্জার। একই সঙ্গে বিষয়টি নিন্দনীয় এবং প্রতিবাদযোগ্য। বলাবাহুল্য, প্রকাশ্যে একজন নারীকেও যদি অসম্মান করা হয় তবে তা সমগ্র নারীজাতির ওপরই আক্রমণের নামান্তর। আরও স্পষ্ট করে বললে এটি মানবতাবিরোধী অসভ্য বর্বর কর্মকা-। এটি সভ্যতাকেই চ্যালেঞ্জ করে। সমাজে এক ধরনের অস্বস্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পহেলা বৈশাখে সন্ধ্যায় টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশদ্বারে সংগঠিতভাবে দলবদ্ধ নারী লাঞ্ছনার ঘটনা অশুভ ইঙ্গিতবাহী। এতে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন বেশ ক’জন নারী। এমনকি মেয়েশিশুও বাদ যায়নি। আক্রান্তদের চিৎকার যাতে শোনা না যায় সেজন্য ‘ভুভুজেলা’ নামক উচ্চধ্বনির ভেঁপু বাজানোর কৌশল গ্রহণ করে নিপীড়করা। এই দলবদ্ধ যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করার সময় এক ছাত্রনেতার একটি হাত ভেঙে ফেলা হয়। প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ্য, দেড় দশক আগে একই এলাকায় ইংরেজী নববর্ষবরণের অনুষ্ঠানে এমনি নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেদিনও নারীকে বস্ত্রহীন করা হয়েছিল। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সমাজে। এই ঘটনার পর থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাবি এলাকায় নারীর যোগদান অত্যন্ত সীমিত হয়ে আসে। এবারের বর্ষবরণ উৎসবে নারীর ওপর এহেন লাঞ্ছনার ঘটনাটিকে নিছক বখাটেপনা বা উচ্ছৃঙ্খলতা হিসেবে দেখা চলে না। সুপরিকল্পিতভাবে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে দেশে নারীর অবাধ চলাচল, উৎসবে সানন্দে সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপরই যেন আঘাত হানা হয়েছে। নারী স্বাধীনতা তথা নারীর অগ্রযাত্রাকে যারা ভাল চোখে দেখে না, যারা নারীকে কেবল ভোগের সামগ্রী হিসেবেই বিবেচনা করে এটি সন্দেহাতীতভাবে সেই মানসিকতাসম্পন্ন লোকদেরই কাজ। একই সঙ্গে বাঙালী সংস্কৃতি এবং অসাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মনোভাবও এ থেকে প্রকাশিত। প্রকাশ্যে নারীর ওপর একের পর এক এহেন যৌন নির্যাতনের বিষয়টি প্রতিরোধ করা এবং এমন দুর্বৃত্তদের পাকড়াও করার ব্যর্থতা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর বর্তাবে। ঘটনাস্থল থেকে ধৃত ওই অপরাধীচক্রের কয়েকজনকে পুলিশ ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি মানুষকে ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত করেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ’। মহিলা পরিষদ এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থাপনকৃত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব। নারীর ওপর হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন আইনের দৃষ্টিতে তারা সবাই অপরাধী ও যৌন নিপীড়ক। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই তাদের প্রাপ্য। যাতে ভবিষ্যতে এ জাতীয় দুষ্কর্ম করার দুঃসাহস কেউ দেখাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বড় ধরনের কোন উৎসবের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ও দায়িত্বশীল ছাত্রদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা কমিটি গঠন করে প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে তোলার কথা ভাবতে হবে।
×