ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব

কুড়িগ্রামে যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয় ॥ শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

কুড়িগ্রামে যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয় ॥ শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ দু’জন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পাল্টাপাল্টি মামলা, শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি, শিক্ষা বিভাগের উদাসীনতা, প্রভাবশালীদের দখল বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে নগ্ন রাজনীতির কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রৌমারী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী যাদুরচর উচ্চ বিদ্যালয়টি। দুইজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর স্থলে মাত্র ২৮-৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। উপবৃত্তির টাকা ভাগাভাগির অভিযোগ এবং বিভিন্ন আয়ের উৎস্যগুলোতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী শতাধিক। ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী । ৩৮ শতক জমিতে নির্মিত একটি সুপার মার্কেটসহ ১৫ একর জমি। সরেজমিনে যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীতে রয়েছে গোটা বিশেক শিক্ষার্থী। ৮ম, ৯ম ও ১০ শ্রেণীসহ অধিকাংশ কক্ষে ঝুলছিল তালা। শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষকরা তখন গল্পে মশগুল। প্রতিদিনের মতো মাঠে চরছিল গরু-ছাগল। প্রতিষ্ঠানের এ বেহাল দশার কারণে প্রধান শিক্ষকের পদপ্রত্যাশী আতিউর রহমানসহ শিক্ষক মইনুল হক, আব্দুর রহিম, আফজাল হোসেন, শাহিদা আক্তার তাদের সন্তানদের পার্শ্ববর্তী যাদুরচর বালিকা ও কোমরভাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো ‘এখানে লেখাপড়ার মান মোটেই ভাল নয়।’ প্রতিষ্ঠানটির এ পরিণতি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক হযরত আলী অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্ত পদটি নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। পরিচালনা পর্ষদ পরিপত্রে উল্লিখিত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই মাজেদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। কিন্তু বাঁধ সাধেন সহকারী শিক্ষক আতিউর রহমান। পরিচালনা পর্ষদের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একে একে ১১টি মামলা করেন তিনি। কিন্তু সকল মামলা খারিজ করেন আদালত। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্ট তার (আতিউর রহমান) বিরুদ্ধে স্কুলের সকল কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পাশাপাশি আদালত অবমাননার জন্য গত বছরের ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল কবীর, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ও আতিউর রহমানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হবে না মর্মে শোকজ করেন। মামলা নম্বর ৩৪০/২০১৩। আদালতের এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সঙ্গে যোগসাজশে শিক্ষক আতিউর রহমান উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেন। সম্প্রতি কমিটির মেয়াদ শেষ হলে গোপনে ৩ বার কমিটি গঠনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। ১৬ নবেম্বর ২০১৩ সালে কর্ত্তিমারী বাজারে বিদ্যালয়ের নিজস্ব ৩৮ শতক জায়গায় নির্মিত ১৫ কক্ষবিশিষ্ট সুপার মার্কেটটি একটি ভূমিদস্যুচক্র রাতের আঁধারে দখল করে নেয়। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকরা মানববন্ধনসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান ৭ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক আব্দুল মালেক জানান, ১৫ একর জমি আর ৫ কোটি টাকা মূল্যের সুপার মার্কেটটিই স্কুলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সম্পত্তিগুলো হাতিয়ে নেয়ার জন্য প্রভাবশালী দুটি গ্রুপ ষড়যন্ত্র করছে। মাঝ থেকে ধ্বংস হচ্ছে বিদ্যালয়টি। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর নিকট আবেদন জানাই তিনি যেন প্রতিষ্ঠানটিকে এ পরিণতি থেকে উদ্ধার করেন। একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে যাচ্ছে এ বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, ‘এটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এখানে আমার করার কিছুই নেই।’ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল কবীর জানান, স্থানীয় পর্যায়ে দুটি গ্রুপ হয়েছে, আসল সমস্যা হচ্ছে কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব। এ ব্যাপারে শিক্ষক আতিউর রহমানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
×