ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনীহা

ওয়াসার আশুলিয়া রিজার্ভার প্রকল্প দুই বছর ফাইলবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

ওয়াসার আশুলিয়া রিজার্ভার প্রকল্প দুই বছর ফাইলবন্দী

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীর উত্তর অঞ্চলের ১৫ লাখ মানুষের পানি সরবরাহ দিতে আশুলিয়া তুরাগ নদীর পাশে নিচু এলাকায় চারটি জলাধার তৈরির প্রস্তাব দিয়ে ওয়াসা বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে। প্রকল্পটি ‘আশুলিয়া রিজার্ভার’ নামে প্রস্তাব করা হয়। ১৪শ’ হেক্টর জমির ওপর পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। দুই বছর আগের দেয়া প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পড়ে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার এক শ’ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছিল তিন বছর। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওয়াসা প্রকল্পটির সমীক্ষাও করেছিল। এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সূত্র জানিয়েছে, আশুলিয়া রিজার্ভার ও পানি সরবরাহ প্রকল্পটি সমীক্ষার আগে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানোর জন্য এ প্রকল্পের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শুরুতে গুরুত্ব দিলেও বর্তমানে প্রকল্পটি ফাইলবন্দীই রয়েছে। কবে নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে তার কোন সময়সীমা জানা যায়নি। ভূ-উপরিস্থ পানির জলাধার তৈরি করার মতো এ এলাকা ছাড়া ঢাকা মহানগরীর আশপাশে কোন জায়গা নেই। দিন দিন মহানগরীর আয়তন বাড়ছে। একই সঙ্গে মানুষও বেড়েই চলেছে। আগামী দিনে ঢাকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে ওয়াসাকে প্রতিনিয়ত কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে রাজধানীর জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ১০ লাখে। ২০৩০ সালে রাজধানীতে পানি সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৯৯০ কোটি লিটারে। এই বিপুল পরিমাণ সরবরাহের ব্যবস্থা কিভাবে হবে, তা আমাদের আগে থেকেই ভাবতে হবে। বর্তমানে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে তার ৮৭ ভাগ পানি তোলা হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। এটা পরিবেশের জন্য চরম হুমকি হয়ে উঠেছে। হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভশীলতা কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে কিভাবে নগরীর চাহিদা মেটানো যায় সেই দিকে নজর দিতে হবে। ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে। ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়াসা বৃষ্টির পানি ধরে রেখে শীত মৌসুমে ব্যবহার করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রিজার্ভার তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে পিপিপির আওতায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য বড় বড় রিজার্ভার তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। প্রাথমিকভাবে আশুলিয়ায় এ ধরনের চারটি রিজার্ভার তৈরির সমীক্ষা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প আকারে জমা দেয় ওয়াসা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা অনেকাংশে কমে যাবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও অনেকাংশে কমবে। এদিকে পদ্মা নদী থেকে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা করার সমীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আশুলিয়া প্রকল্পটি যদি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে মিরপুর ও খিলক্ষেতের কম করে হলেও ১৫ লাখ মানুষ পানি সরবরাহ সুবিধা পাবে। তাছাড়া এ প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব হবে। পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রভাব পড়বে না। বরং ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হবে। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে, কী করে ঢাকা মহানগরীকে বাসযোগ্য করা যায়। একটি পরিকল্পিত নগরায়ন না করতে পারলে আগামী দিনে ঢাকা আর বসবাসের উপযুক্ত থাকবে না। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এখন থেকেই পরিকল্পিত নগর গড়ার কাজ করে যেতে হবে।
×