ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাটমণ্ডলে পদ্মপুরাণনির্ভর চম্পকনগরের উপকথা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

নাটমণ্ডলে পদ্মপুরাণনির্ভর চম্পকনগরের উপকথা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য আখ্যানকাব্য পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গল। এই আখ্যানের অন্যতম চরিত্র চাঁদ সওদাগর ও মনসা এবং বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর। এই চরিত্রগুলোর বাইরেও মঙ্গলকাব্যে রয়েছে দুঃখ-বেদনা-যাতনায় জর্জরিত কিছু চরিত্র। সর্বদাই অবহেলিত ও দলিত কণ্ঠস্বর হিসেবে বিবেচিত এমন কিছু চরিত্রকে আলোকিত করে নির্মিত নাটক চম্পকনগরের উপকথা। পদ্মপুরাণনির্ভর এই প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী তামান্না হক সিগমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈত্র সংক্রান্তি ও বৈশাখ উদ্্যাপন অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে গত সোমবার নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটম-লে চার দিনের প্রদর্শনীর সমাপনী হয়। নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক কাজী তামান্না হক বলেন, পদ্মপুরাণ আখ্যানের অসাধারণদের ভিড়ে দরিদ্র মানুষ এবং বিশেষত নারী হওয়ার সমাজের একটি বিরাট অংশ নিভৃতেই রয়ে যায়। এই দলিতদের কণ্ঠস্বর, তাঁদের প্রাণের আর্তিটুকু, অস্তিত্বের প্রকৃত কখনো কখনোই শোনা যায় না। সেজন্যই চাঁদ মনসার দ্বন্দ্ব এই নাটকের উপলক্ষমাত্র। মূল লক্ষ্য হলো প্রতাপের সঙ্গে প্রতাপের দ্বন্দ্ব-বিরোধের ফলে জর্জরিত সাধারণ মানুষের জীবনকথা। তাই এই নাটকের প্রধান বিষয় ক্ষমতা ও আকাক্সক্ষার মৃত্যু-উৎসবস্থল চম্পকনগর। প্রযোজনাটির কাহিনীতে দেখা যায়, মনসা শিবের কন্যা হলেও মাতৃগর্ভে তার জন্ম হয়নি, হয়েছে পদ্মবনে। স্বর্গের অংশ না পেয়ে অভিমানী মনসা এমন বৈষম্যের কারণ জানতে চায় পিতা শিবের কাছে। শিব জানায় যদি মর্ত্যলোকবাসী চাঁদ সওদাগর মনসার পুজো করে তবেই সে স্বর্গের দেবীরূপে অধিষ্ঠিত হবে। ফলে চম্পকনগরের রাজা বণিক চাঁদ সওদাগরের কাছ থেকে পূজাপ্রাপ্তি মনসার জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে। কিন্তু শিবভক্ত চাঁদ সওদাগর কেন অনার্য এই দেবীর পূজা করবেন। অথচ চান্দের গৃহেই তার স্ত্রী সনেকা গোপনে মনসার পুজো করে। একদিন চাঁদ সেই পূজার ঘট ভেঙে দেয়। প্রতিক্রিয়ায় মনসাও ধ্বংস করে চাঁদের বাগানবাড়ি। মহাজ্ঞান শক্তি ও শঙ্কু ওঝার জিয়নশক্তি দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত গাছপালা পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করে চাঁদ। এতে মনসার ক্ষোভ আরও বেড়ে যায় এবং মালিনী বেশ ধরে হরণ করে নেয় চাঁদের মহাজ্ঞান। এরপর মনসা চাঁদের ছয় ছেলেকে বধ করে মনসা। প্রাণহরণ মনসার বাঞ্চা নয়, তার আকাক্সক্ষা পূজা গ্রহণ। এদিকে পুত্রশোকে কঠোর হয়ে ওঠে চাঁদ। সেই শোক লাঘবের জন্য সনেকাকে সহমর্মী মনসা পুত্রবর দিয়ে পড়ে যায় বিপাকে। পুনরায় স্বর্গে গিয়ে দেবী পিতার কাছ থেকে অনিরুদ্ধ-ঊষাকে চেয়ে নেয়। স্বর্গভ্রষ্ট অনিরুদ্ধে আত্মা সনেকার গর্ভে আর ঊষার আতাম উজানি নগরের সুমিত্রার গর্ভে প্রবেশ করায় মনসা। এদিকে সনেকা যখন গর্ভবতী তখন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ পাটন গমন করে চাঁদ। চৌদ্দ বছরের বাণিজ্য শেষে দেশে ফেরার পথে মনসা পুনরায় চাঁদ বণিকের পূজা চেয়ে অপমাণিত হয়। ক্রুদ্ধ হয়ে ধনসম্পদে পরিপূর্ণ সকল ডিঙ্গা কালিদহ সাগরে ডুবিয়ে দেয় মনসা। কোনরকমে জীবন বাঁচলেও স্মৃতিশক্তি হরণ করা হয় চাঁদের। সে নিজ নিবাস চম্পকনগরে পাগলের মতো ঘুরতে থাকে। মনসা কর্তৃক পুনরায় স্মৃতিশক্তি পেয়ে অহংকার জাগ্রত হয় চাঁদের। যৌবনে পদার্পণ করায় পুত্র লক্ষ্মীন্দরের বিয়ের আয়োজন করে পিতা চান্দ সওদাগর। মনসার দেয়া বাসর রাতে পুত্র দংশনের হুমকি অবজ্ঞা করে চাঁদ। কামার তারাপতিকে দিয়ে লোহার বাসর ঘরে তৈরি করে সেখানে রাখা হয় নববধূ বেহুলা ও লক্ষ্মীন্দরকে। তারাপতিকে ভয় দেখিয়ে বাসর ঘরে ছিদ্র রাখতে বাধ্য করে মনসা। লক্ষ্মীন্দরকে দংশনের পাঠিয়ে দেয় কালনাগ। দংশনে মৃত লক্ষ্মীন্দরের সদ্য বিধবা বধূ বেহু, পূর্বে স্বামীহারা ছয় বধূ, সন্তানহারা জননী সনেকার প্রশ্নÑঅহংকারী অস্তিত্বের দ্বন্দ্বে বিবর্ণ হয়ে চম্পকনগরের সাধারণ মানুষের কী লাভ হচ্ছে? নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানোয়ারুল হক, উম্মে সুমাইয়া, অতশী আমিন, ফারজানা হাবিব, সুরাইয়া খাতুন, শংকুর কুমার বিশ্বাস, নিপা সরকার মাহবুব আলম সরকার, রনি দাস প্রমুখ। ‘আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য’ ॥ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে ‘আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে স্বাধীনতা সংসদ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাংসদ বেগম রহিমা আখতার। সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মোঃ আবুল কাশেম, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক মোঃ আব্দুল হাই, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুন, ম্যাবকো গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এ মান্নান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব সাহেদ আহাম্মদ। আলোচনা সভার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগঠনের শিল্পীদের দলীয় নৃত্যের মধ্য দিয়ে এ পর্বের সূচনা হয়। এরপর একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক, নিকীতা বর্মণ, মনিকা, মিথিলা বর্মন, সুপ্তি সরকার, চায়না, সুমি আখতার, পাপড়ী প্রমুখ। মঞ্চস্থ স্বপ্নদলের চিত্রাঙ্গদা ॥ নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’র ৩৬তম সফল মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে। গবেষণাগার নাট্যরীতিতে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। প্রযোজনার গ্রন্থিকরা হলেন সুকন্যা, মিতা, মোস্তাফিজ, রেজাউল, শিশির, সামাদ, জেবু, রিমু, নাবলু, তানভীর, শাহীন, হিটলার, মাধূরী, মাসুদ, তানিয়া, জুঁই, আলী, সাইদ, বিপুল, জুয়েনা, তীর্থ প্রমুখ।
×